হায়দরাবাদ, 15 ডিসেম্বর : যে কোনও সুখী, বৈবাহিক জীবনে শারীরিক সম্পর্ক হল মূল চাবিকাঠি । কিন্তু কখনও কখনও দু’জন সঙ্গীর মধে্য একজনের ঠিক সেই মাপের যৌন তাড়ণা জাগে না, যা অন্যজনের জাগে আর এর থেকেই দু’জনের মধে্য অশান্তির সূচনা হয়। অনেক বৈবাহিক সম্পর্কের ভাঙনেরই অন্যতম কারণ হল কামশক্তি হ্রাস পাওয়া। কামশক্তি কেন হ্রাস পায়, তার অনেক কারণ আছে আর এগুলি যেমন শারীরিক হয়, তেমনই মানসিকও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার এর থেকে গুরুতর অসুস্থতারও সূত্রপাত হতে পারে । সুতরাং একে কখনওই অবহেলা করা উচিত নয়। ইটিভি ভারত সুখীভব-র টিম ডা.বীণা কৃষ্ণণের সঙ্গে কথা বলেছে কামশক্তি কী এবং কী কী কারণে এটি প্রভাবিত হয়,তা নিয়ে। রইল তাঁর ব্যাখ্যা।
কামশক্তির অভাব কী? এর কারণই বা কী?
অনেক সময় মহিলা বা পুরুষে শারীরিক মিলনের আকাঙ্খা হয় কমে যায় আর নয় পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে যায় আর এর নেপথে্য অনেক কারণই থাকতে পারে । ডা. বীণা কৃষ্ণণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, শারীরিক মিলনের ইচ্ছা না থাকা কোনও মানুষ এবং
তার ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। সঙ্গীর সঙ্গে যৌনমিলনের অভ্যাস, সম্পর্ককে আরও গভীর করে এবং এতে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা আরও বেড়ে যায়। এর ফলে দু’জনের মধে্য বিশ্বাস এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও একটি সুখী, আনন্দদায়ক এবং তৃপ্তিদায়ক যৌন জীবন একজন মানুষের শারীরিক স্বাস্থে্যর বিকাশের জন্যও উপযোগী। কারণ যৌনক্রিয়ার ফলে শরীরে অনেক রকম হরমোন ক্ষরিত হয়, যা আমাদের নানাবিধ রোগ থেকে রক্ষা করে।
ডা. কৃষ্ণণ আরও জানাচ্ছেন যে, অনেক সময় তিনি এমনও কিছু রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের যৌন তাড়ণার অভাবজনিত সমস্যার কারণ সম্পর্কে অন্ধকারে । যদি মহিলাদের কথা আলোচনা করা যায়, তাহলে প্রায়ই তাঁরা তাঁদের যৌন সমস্যা কিংবা যৌন তাড়ণা সম্পর্কে নিজেদের সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে পারেন না । যার ফলে তাঁরা ধীরে ধীরে সেই সঙ্গীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়তে থাকেন। তাছাড়াও অনেক সময় একসঙ্গে থাকার ফলে, তাঁদের মধে্য একঘেয়েমির প্রবেশ হয় আর এর জন্য তাঁরা, একে অনে্যর সঙ্গে শারীরিক মিলনে আবদ্ধ হওয়ার উৎসাহও হারিয়ে ফেলেন। কখনও কখনও আবার কোনও স্বাস্থ্যসমস্যার মোকাবিলায় নেওয়া ওষুধের প্রভাবও এর কারণ হয়ে দাঁড়ায় । ডা. কৃষ্ণণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কারও নিউরোলজ়িকাল সমস্যা থাকলে, ক্যানসার হলে কিংবা প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে এমন কোনও রোগে আক্রান্তের অবস্থার অনবতি হলে তার উপসর্গ হিসাবে যৌন তাড়ণা কমে আসতে পারে । তাই, এক্ষেত্রে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই কোনও চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। তবে যদি এই অবস্থাকে কেউ অবহেলা করেন, তাহলে আর সেরে ওঠার আশা না-ও থাকতে পারে। এছাড়াও আরও কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, যার প্রভাবে কারও শারীরিক মিলনের আকাঙ্খা কমে আসতে পারে।
আরও পডুন : মানসিকভাবে আপনি যে একটি অবমাননাকর, অসম্মানজনক সম্পর্কে রয়েছেন, তার 5 টি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত
1. শারীরিক সম্পর্ক সম্পর্কে অসত্য তথ্য - এই সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে দেখা যায়। যখন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়—স্বজন এবং পর্নোগ্রাফিক সাইট থেকে প্রাপ্ত অসত্য তথে্য ভিত্তিতে কোনও সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন যথাযথ তথ্যের অভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ।
2. মানসিক চাপ - কোলাহলপূর্ণ জীবন, কাজের চাপ আর চারপাশের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার উদ্বেগ তথা মানসিক চাপের ফলেও পুরুষ বা মহিলাদের মধে্য যৌন ইচ্ছা কমে আসতে পারে । ডা. কৃষ্ণণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বর্তমান জীবনের অত্যধিক মানসিক চাপই হল কামশক্তি হ্রাস পাওয়ার অন্যতম বড় কারণ ।
3. পারস্পরিক বনিবনার অভাব - কখনও কখনও কোনও দম্পতির মধে্য পারস্পরিক কোনও বোঝাপড়া কিংবা বৈবাহিক জীবনে বনিবনা থাকে না, তখন তা তাঁদের যৌন জীবনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. সময়ের আগেই বীর্যপাত - এর অর্থ যৌন মিলনকালে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পুরুষদের বীর্যপাত হওয়া । এই ধরনে পরিস্থিতিতে পুরুষরা হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন এবং এর ফলে তাঁদের যৌন তাড়ণা কমে আসে থাকে । যৌন মিলনকালে কেউ অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকলে কিংবা অত্যধিক উদ্বেগে ভুগলে সময়ের আগেই বীর্যপাত হতে পারে । তবে তাছাড়াও শারীরিক অন্যান্য সমস্যা থেকেও এটি হতে পারে।
নিরাময়ের জন্য কী করতে পারেন?
ধূমপান, মদ্যপান কিংবা মাদকের নেশা থেকে বিরত থাকুন । যদি কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে, মানসিক চাপ বা অবসাদ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে দেরি করবেন না। নিজের সঙ্গীর সঙ্গে সুস্বাস্থ্যপূর্ণ, যোগাযোগ নির্ভর সম্পর্ক রাখুন, যেখানে
আপনি তাঁর সঙ্গে যে কোনও বিষয়ে এমনকী যৌন জীবন নিয়েও কথা বলতে পারবেন । সম্পর্কে নতুনত্ব বজায় রাখুন । যৌনজীবনের প্রসঙ্গে বলা যায়, সঙ্গীর সঙ্গে নতুন কিছু ‘ট্রাই’ করুন । শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডায়েটের দিকে বিশেষ নজর দিন । পুষ্টিকর খাবার খান, যেখানে তাজা মরসুমী ফল ও শাকসবজি রয়েছে । খাওয়া ছাড়াও পানীয়র দিকে চোখ রাখুন । দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন । পর্যাপ্ত ঘুমোন । এতে কামশক্তি বাড়ে । যতটা সম্ভব মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন আর মাথা ঠান্ডা রাখুন । এজন্য ধ্যানও করতে পারেন।