ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ( Chronic Obstructive Pulmonary Disease ) বা COPD হল একটি ফুসফুসের রোগ যা থেকে শ্বাসকষ্ট তৈরি হয়। এটা প্রায়শই দেখা গেলেও, অনেক মানুষই এর ব্যাপারে সচেতন নন। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি ও COPD-র শুশ্রূষার উন্নতি করতে, প্রত্যেক বছরই বিশ্ব COPD দিবস পালন করে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিজিজ (গোল্ড)। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অংশ নেন স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পেশাদার ও COPD রোগীরাও। 18 নভেম্বর দিনটি পালন করা হবে এবং থিম হল, “COPD নিয়েও ভাল থাকা – সবার জন্য, সর্বত্র ( “Living Well With COPD- Everybody, Everywhere”) ।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসেব অনুযায়ী 65 মিলিয়ন মানুষের মাঝারি ধরণের বা গুরুতর COPD রয়েছে। 2015 সালে বিশ্বজুড়ে 3.17 মিলিয়ন মানুষ এই রোগে মারা যান (অর্থাৎ, বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যার 5 শতাংশ)। COPD-তে মৃত্যুর 90 শতাংশেরও বেশি ঘটে কম ও মাঝামাঝি আয়ের দেশগুলোতে। হু (WHO) আরও বলেছে, যে গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী 2016 সালে বিশ্বজুড়ে COPD-র 251 মিলিয়ন কেস দেখা গেছে।
COPD কী?
হু-র ব্যাখ্যা, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ হচ্ছে একটি ফুসফুসের রোগ, যার বৈশিষ্ট্য হল ক্রমাগত বায়ু চলাচল কমতে থাকা। COPD-র উপসর্গ ক্রমাগত আরও খারাপ হতে থাকে এবং শৌচকর্মের সময় শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে, শেষপর্যন্ত বিশ্রামের সময়ও শ্বাসের অসুবিধা হয়। একে প্রায়শই গুরুত্ব দেওয়া হয় না, এবং এটা প্রাণসংশয়ও ঘটাতে পারে। এই অবস্থাকে বর্ণনা করতে ‘ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস’ বা ’এম্ফিসেমা’র মতো পরিচিত পরিভাষা ব্যবহার করা হয়।
উপসর্গ
COPD-র সবথেকে চেনা উপসর্গগুলো হল :
-শ্বাসকষ্ট
-একটানা কাশি
-শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ
-অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি হওয়া
-বার বার শ্বাসনালীতে সংক্রমণ
-ক্লান্তি
COPD-র প্রভাব
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, সিওপিডি যাদের নেই, তাদের তুলনায় আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যায়:
●হাঁটা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠায় কষ্ট
●কাজকর্ম করতে অসুবিধা
●পোর্টেবল অক্সিজেন ট্যাঙ্কের মতো উপকরণ প্রয়োজন হওয়া
●বাইরে খেতে যাওয়া, পুজো-আচ্ছা, বন্ধু বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় অক্ষমতা
●ক্রমশ বাড়তে থাকা স্মৃতিভ্রংশ
●আরও বেশি হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে যাওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া
●আর্থ্রাইটিস, হার্ট ফেলিওর, ডায়াবিটিস, করোনারি হার্ট ডিজিজ , স্ট্রোক বা হাঁপানির মতো সমস্যা
●অবসাদ বা অন্যান্য মানসিক সমস্যা
●খারাপ স্বাস্থ্য
COPD-র চিকিৎসা
ডাক্তারের দেওয়া ওষুধপত্র ছাড়াও সিডিসি আরও কয়েকটি অতিরিক্ত চিকিৎসা বিকল্পের কথা বলেছে, যা আপনার চিকিৎসক বিবেচনা করতে পারেন। সেগুলি হল:
-ধূমপান ত্যাগ
-তামাক ও অন্যান্য বায়ুদূষণকারী জিনিস এড়িয়ে চলা
-পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছে জানতে চাওয়া
-ওষুধ খাওয়া
-ফুসফুসের সংক্রমণ এড়িয়ে চলা
-অতিরিক্ত অক্সিজেনের ব্যবহার
COPD রোগীদের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম
ফুসফুসকে আরও কর্মক্ষম করতে COPD রোগীদের জন্য আমেরিকান লাং ফাউন্ডেশন দুটি ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছে।
1.পার্সড লিপ ব্রিদিং
এই ব্যায়াম আপনার শ্বাসগ্রহণের সংখ্যা কমায় এবং আপনার শ্বাসনালীকে বেশিক্ষণ ধরে খোলা রাখে। আপনার ফুসফুসে আরও বেশি হাওয়া পৌঁছতে পারে, যাতে আপনি শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় থাকতে পারেন। এটা করতে, নাকের মাধ্যমে শ্বাস টানুন এবং মুখ দিয়ে আরও দ্বিগুণ সময় ধরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। সেই সময় আপনার ঠোঁটট শিস দেওয়ার মতো করুন
2.বেলি ব্রিদিং বা ডায়াফ্রামিক ব্রিদিং
পার্সড লিপ ব্রিদিংয়ের মতোই, প্রথমে নাক দিয়ে শ্বাস নিন। কীভাবে আপনার পেটটা ফুলে উঠছে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনি হালকাভাবে পেটের ওপর হাত রাখতে পারেন।, অথবা টিস্যু বক্স জাতীয় কোনওকিছু রাখতে পারেন, যাতে ওঠানামাটা বোঝা যায়। শ্বাস নিতে যতক্ষণ লেগেছে, তার দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময় ধরে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। খেয়াল রাখুন যাতে যাতে ডায়াফ্রামকে ব্যবহার করে আপনার ফুসফুসকে ভর্তি বা খালি করার সময় কাঁধ ও ঘাড় রিল্যাক্সড থাকে।
এগুলো প্রতিদিন পাঁচ-দশ মিনিট করে অভ্যাস করুন। এছাড়াও যেহেতু আমরা কোভিড মহামারীর মধ্যে বাস করছি, তাই কোভিড রোগীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। যদি COPD থাকে, তাহলে প্রেসক্রিপশন মেনে ওষুধ খান, উত্তেজনা এড়িয়ে চলুন, প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখুন, অক্সিজেন সরবরাহকারীর সঙ্গে কথা বলে রাখুন, ইনহেলার হাতের কাছে রাখুন এবং যতটা সম্ভব বাড়িতেই থাকুন। উপরস্গগুলো খারাপ দিকে এগোলে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।