অতি—ভয়ানক কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা দেশে এক কোটির সীমা পার করে গিয়েছে । অথচ প্রতিদিন অন্তত 25 হাজার নতুন আক্রান্তের খবর আসছে। মৃতু্যঘণ্টা বাজিয়ে পরিসংখ্যান যদিও বলছে, এখনও পর্যন্ত দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত সাত লক্ষ এবং মৃতু্যর সংখ্যা ২০,০০০, তবু স্বস্তির খবর এটাই যে আক্রান্তের মধে্য ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছেন। যদিও 14টি রাজে্যর মধে্য প্রতিটিতে আক্রান্তের সংখ্যা 10 হাজার —এ পৌঁছে গিয়েছে। দেশের মধে্য মহারাষ্ট্র একাই এই বিশাল বিপর্যয়ের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, দু’লক্ষেরও বেশি আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে। তামিলনাড়ুতে আক্রান্তর সংখ্যা এক লক্ষের সীমা পেরোচ্ছে, এমনকী দেশের রাজধানী শহর, দিল্লিও খুব বেশি পিছনে নেই। আর দুই তেলুগু রাজ্যে ক্রমশ সংক্রমণ—বৃদ্ধির ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পরিস্থিতি ঠিক কতটা ভয়াবহ। যে ভাইরাসের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা এতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তাকে প্রতিহত করতে ওষুধ তৈরি এবং প্রতিষেধকের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা—নিরীক্ষা জোরকদমে চলছে।
একদিকে যেখানে কোরোনা রোগীদের সুস্থ করতে চিকিৎসকরা ফ্যাবিফ্লু (ফ্লু রোধের জাপানি ওষুধ), রেমডিসিভির (ইবোলা নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা ওষুধ) এবং হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন (ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ) প্রভৃতি ব্যবহার করছেন, সেখানেই কোভিড মোকাবিলায় প্রতিষেধকের ট্রায়াল বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পেঁৗছে গিয়েছে।NIMS জানিয়েছে, আগামী সোমবার থেকে ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনের মানবশরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। ICMR—এর তরফে ইসু্য করা সেই চিঠি, যেখানে ICMR —এর সহযোগিতায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির (NIV) তৈরি এই প্রতিষেধককে 15 অগাস্ট প্রকাশে্য আনার কথা বলা হয়েছিল–চারদিকে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে। যদিও নিরাপদ এবং সক্রিয় প্রতিষেধক আনা নিয়ে কোনওপক্ষেরই দ্বিমত নেই তবু তার জন্য গুণমান এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় কোনওরকম আপোস হলে ভবিষ্যতে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
ভারত বায়োটেক এবং জেডাস ক্যাডিলাই একমাত্র অনুমোদন পেয়েছে মানুষের উপর প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালাতে এবং প্রতিষেধকগুলির সক্রিয়তা পরীক্ষা করতে। সংবাদমাধ্যমসূত্রে খবর, মানবশরীরে ট্রায়ালের জন্য ১২টিরও বেশি প্রতিষেধক নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে এবং সেগুলি পরীক্ষা—নিরীক্ষার আলাদা আলাদা স্তরে রয়েছে। তাদের মধে্য কিছু কিছু প্রথামকিভাবে ভাল ফল করলেও বাণিজি্যক ব্যবহারের অনুমোদন পায়নি। WHO-এর মুখ্য বিজ্ঞানী ডা. সৌম্য স্বামীনাথনের মতে, চিন একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, যা শুধুমাত্র তাদের সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারবে। তৃতীয় স্তরের ট্রায়ালের পরই একমাত্র তা জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমতি মিলবে। তারা ইতিমধে্যই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় অন্তত 12 থেকে 18 মাস সময় লাগবে।
CCMB—র অধিকর্তা এই দাবির সপক্ষে সওয়াল করেছেন যে, মানবশরীরে তিনটি স্তরে প্রতিষেধকের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হতে থেকে ৯ মাস সময় লাগা উচিত। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যতক্ষণ না প্রতিষেধকের সক্রিয়তা প্রমাণ হচ্ছে, তার নিরাপদ ডোজ নির্ধারণ করা হচ্ছে, যে যে জায়গায় সংক্রমণ বেশি সেখানে দফায় দফায় তার প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং স্বল্প সময়ের মধে্য প্রতিক্রিয়া আহরণ করা হচ্ছে আর সর্বোপরি একবার যদি এই সব কিছু সফল হয় তাহলে তার উৎপাদন এবং বণ্টনের জন্য অগ্রিম পরিকল্পনা তৈরি রতে হবে। ICMR, যারা নিজেদের অবস্থান বদল করেছে এবং ঘোষণা করেছে বিভিন্ন স্তরে বিলম্ব এড়িয়ে দ্রুত যাতে ট্রায়াল স্তরের কাজকর্ম শেষ হয়, এটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য । এ জন্য তাদের নিজেদের প্রধান দায়িত্ব—কর্তব্যও আরও সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে। মানুষের বঁাচানোর একমাত্র পথ যখন প্রতিষেধকই হতে চলেছে, তখন এটা তাদের কর্তব্য যে, বিষয়টি নিয়ে যেন তারা বিজ্ঞানীমহলকেও যথাযথ নির্দেশ দেয় ।