হায়দরাবাদ: মনে ভয় ধরিয়েছে 'ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম' ৷ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের বাসিন্দা বছর 20 তরুণ পাঁচ দিন আগের রান্না করে রাখা বাসি পাস্তা গরম করে খান ৷ কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ চিকিৎসকরা জানান, ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম তরুণের মৃত্যুর কারণ ৷ এই অবস্থায় সকলের মনে প্রশ্ন একটাই ফ্রিজে খাবার রেখে কীভাবে খাওয়া উচিত? কতদিনের মধ্যে রান্না করা খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত? বা ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করব কীভাবে ? সমস্যার সমাধান দিলেন কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাম্মানিক ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ ডঃ অরিত্র খাঁ ৷
সাধারণত রোজনামচা জীবনে ব্যস্ত সকলেই ৷ সময় বাঁচাতে অল্প-বিস্তর রান্না করে ফ্রিজে রেখে তা বেশ কয়েকদিন ব্যবহার সকলেই করে থাকেন ৷ পুষ্টিবিদ অরিত্র বলেন, "প্রতিদিন বাজারে গিয়ে টাটকা ফল-সবজি কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ তাই একটু বেশি করে কিনে স্টোর করে রাখা হয় ৷ ফ্রিজে সেই সব জিনিস রাখার জন্য ফ্রিজার ব্যাগ পাওয়া যায় ৷ সেগুলোতে সবজি-ফল রাখা যায় ৷ প্লাস্টিক বা স্টিলের নয়, একটু ভালো মানের এয়ার টাইট কন্টেনার রয়েছে যেগুলোতে খাবার রাখালে তা অক্সিজেন বা বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারবে না ৷ এমন কন্টেনারে খাবার রেখে দেওয়া যেতে পারে ৷"
এবার প্রশ্ন হচ্ছে ফ্রিজে খাবার রাখার নিয়মটা কী? তিনি বলেন, "ফ্রিজে খাবার রাখার আগে মাথায় রাখতে হবে ভিতরের তাপমাত্রার বিষয়টা ৷ 4 ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হবে ফ্রিজের ভিতরের তাপমাত্রা ৷ ডিপ ফ্রিজের তাপমাত্রা হতে হবে মাইনাস 15 থেকে মাইনাস 18 ডিগ্রি সেলসিয়াস ৷ অনেক সময় দেখা যায়, একটু বেশি রান্না ফ্রিজে তুলে রাখা হয়েছে ৷ দরকারে কেউ সেটা পুরোটা গরম করে ব্যবহার করল অল্প ৷ তারপর আবার ঠান্ডা করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিল ৷ এই যে, খাবার বারবার গরম করা, এতে তার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাই যতটুকু খাবেন ততটুকুই গরম করা উচিত ৷"
তিনি বলেন,"আমাদের মনে রাখতে হবে খাবার অনেকদিন থাকলে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে ৷ মাছ, মাংস, ডিম বেশি পচনশীল ৷ কাঁচা অবস্থায় দুধ, ডিম, মাছ বা মাংস বেশিদিন না রেখে তা ব্যবহার করে নেওয়াই ভালো ৷ আর যদি রান্না করা খাবার হয়, তা হলে তা রাখতে হবে এয়ার টাইট কন্টেনারে ৷ সেটা 5-6 দিন ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ তবে খুব বেশি দিন খাবার ফ্রিজে রেখে না খাওয়াই ভালো ৷ কারণ যত সময় যাবে তাতে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে থাকবে ৷"
পুষ্টিবিদ বলেন, "অনেকেই প্রায় সময় বাইরে থেকে ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন কিনে খান ৷ দেখা যায়, এই খাবারগুলো প্রপার হাইজেন মেইনটেইন করে বানানো হয় না ৷ আবার দুধজাতীয় খাবার বাসি হলে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয় ৷ আবার অনেকে বাসি ভাত-রুটি গরম করে খান ৷ এতে যে ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় ৷ এটা চূড়ান্তভাবে শরীরের ভিতরে ক্ষতি করে ৷ গবেষণা বলছে, এটা অন্ত্রের ক্ষতি করে ৷ প্রচণ্ড বমি হওয়া শুরু হয় ৷ আবার ডায়রিয়াও হতে পারে ৷ এই সমস্যা খুব কম সময়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় ৷"
পুষ্টিবিদ অরিত্র খাঁ জানান, কিছু কিছু জিনিস ফ্রিজে রাখা যায় না ৷ যেমন- বিভিন্ন ধরনের শাক, ধনেপাতা ফ্রিজে রাখা উচিত নয় ৷ আর যদি রাখতে হয় তাহলে তা সঠিকভাবে রাখা উচিত ৷ এই ধরনের জিনিস গোড়া সমেত রাখা উচিত ৷ অর্থাৎ শাক বা ধনেপাতার গোড়া কেটে না ফেলে, সেই সমেত রাখা উচিত ৷ অথবা শাক কিনে তা হালকা ভাপিয়ে তারপর ঠান্ডা করে এয়ার টাইট কন্টেনারে নিয়ে ফ্রিজে রাখা যেতে পারে ৷ পাশাপাশি, কোনও খাবার বা ফল ঢাকা না দিয়ে ফ্রিজে রাখা উচিত নয় ৷ এতে খুব তাড়াতাড়ি খাবারে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে ৷
তিনি ফ্রিজে খাবার বা সবজি রাখার বিষয়ে দিয়েছেন কিছু টিপস ৷ জানিয়েছেন, ফ্রিজে বেগুন রাখলে তাতে হালকা করে তেল মাখিয়ে নিয়ে রাখলে ভালো ৷ ফ্রিজের যেখানে সবজি থাকে সেখানেই লেবু-আদা রাখা উচিত ৷ বাইরে নয় ৷ মাখন বা চিজ প্যাকেট শুদ্ধ বা প্যাকেট খুলে রাখা উচিত নয় ৷ এই জিনিস ভালো থাকবে যদি কোনও এয়ার টাইট কন্টেনারে সেটা রাখা যায় ৷ মাছ বা মাংস ডিপ ফ্রিজে রাখতে গেলে তা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তাতে মাখিয়ে নেওয়া উচিত একটু গোলমরিচ গুঁড়ো ও লেবুর রস ৷ কাঁটা পেঁয়াজ বা আদা রসুন ফ্রিজে রাখতে চাইলে তাতে মাখিয়ে নেওয়া উচিত হালকা করে কাঁচা নুন ৷ ডিম ফ্রিজের ট্রে-তে না রেখে একটা পাত্রে রেখে ভালো করে ঢাকা দিয়ে রাখলেই হবে ৷ এছাড়া ফ্রিজে লেবুর টুকরো রাখা ভালো ৷ অথবা দশদিন বা বারোদিন ছাড়া ছাড়া গরম জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে ফ্রিজ মুছে নিলে ভাল ৷ টুকটাক এই বিষয় মেনে চললে ফ্রিজে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না ৷
তাছড়া তিনি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মাইক্রোওয়েভ বা এয়ার ফ্রায়ারের ব্যবহার ভালো নয় ৷ গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই সবের আলো বা রশ্মি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িতে তুলতে পারে ৷ তাই খাবার বেশিদিন না রেখে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নেওয়াই ভালো ৷
আরও পড়ুন: দিন দিন কমছে চুলের ঘনত্ব? ডায়েটে রাখুন এই খাবারগুলো