গতবছর কোভিড মহামারীর ধাক্কা হঠাৎই বহু পরিবারকে ঘরের মধ্যে বিছিন্ন করে দিয়েছিল । এর জেরে অবসাদ আর উদ্বেগের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছে, যে পেশাদারদের সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে । একটা নতুন গবেষণায় এমনই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ।
গত বছর মহামারীর শুরুর দিকে বাবা-মায়েদের অনেকেই জানিয়েছিলেন যে তাঁদের সন্তানদের মধ্যে অবসাদ ও উদ্বেগের মতো অন্তর্মুখী সমস্যা এবং রুক্ষ মেজাজের মতো বহির্মুখী সমস্যা, মহামারীর আগের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে । মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কা আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাগুলো এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে । আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, শিশুদের মধ্যে অন্তর্মুখী সমস্যা চার গুণ এবং বহির্মুখী সমস্যা আড়াই গুণ বেশি দেখা যাচ্ছে ।
মহামারী আছড়ে পড়ার পর থেকে অভিভাবকদের থেকে ‘চিকিৎসাগতভাবে উদ্বেগজনক’ অবসাদের যে খবর আসছে, তা আগের তুলনায় 2.4 গুণ বেশি ।এমনকি, তাঁরা তাঁদের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌথভাবে সন্তানের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রেও খামতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন : রাজ্যে একদিনে করোনা আক্রান্ত প্রায় 6 হাজার, মৃত 24
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং স্বাস্থ্য ও মানবোন্নয়নের গবেষক মার্ক ফিনবার্গ বলেন, “এত বড় পরিবর্তন আমাদের ক্ষেত্রে খুব কমই চোখে পড়ে ।”
ফ্যামিলি প্রসেস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ফিনবার্গ উল্লেখ করেছেন, “আমরা শুধু সার্বিক পরিবর্তনটাই দেখছি না । পাশাপাশি আমরা দেখছি যে সেইসব বাবা-মা ও সন্তানদের সংখ্যা বেড়েছে, যাঁদের অবসাদ এবং আচরণগত সমস্যা ক্লিনিক্যাল রেঞ্জে চলে গিয়েছে, অর্থাৎ তাঁরা একটি নির্ণয়যোগ্য অসুখের সঙ্গে লড়াই করছেন এবং চিকিৎসা হলে তাঁরা উপকৃত হবেন ।”
এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা 129টি পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করেন, যার মধ্যে 122জন মা এবং 84জন বাবা ছিলেন, এবং পরিবারপিছু গড় শিশুর সংখ্যা 2.3 ।
গবেষণায় আমরা দেখেছি যে কীভাবে পারিবারিক ও সামাজিক স্ট্রেসের প্রভাব বাবা-মা ও সন্তানদের ওপর পড়ছে, এবং পরিবারের ভালর জন্য যৌথ মনোভাব নিয়ে চলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।
ফিনবার্গ বলেন, “স্ট্রেস-তা সে দৈনন্দিন ব্যস্ততা থেকে হোক বা নির্দিষ্ট সঙ্কটের কারণে, তা পরিবারের মধ্যে সংঘাত ও শত্রুতার আবহের দিকে ঠেলে দেয় ।”
তিনি আরও বলেন, “যদি বাবা-মা এই পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারেন, তাহলে অতীতের গবেষণাই বলছে যে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে কঠোর ও ক্রুদ্ধ ব্যবহারের বদলে ধৈর্যশীল ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়েই তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন ।”