হায়দরাবাদ : গর্ভধারণের সময় মহিলাদের মানসিক চাপ অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় ৷ বিশেষত যাঁরা প্রথমবার মা হতে চলেছেন তাঁদের কাছে তো এটি খুবই স্বাভাবিক ৷ এসময় নানা রকম আবেগ এবং উদ্বেগের মুখোমুখি হতেই হয় মহিলাদের ৷ যদিও গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য ভাল রাখা এবং এই সম্পর্কে চিন্তা করা কোনও খারাপ বিষয় নয় কারণ এটি আপনাকে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিতে সাহায্য করে ৷
গর্ভাবস্থায় সাধারণত যে সমস্ত কারণে মানসিক চাপ তৈরি হয় : তাঁরা গর্ভবতী একথা জানার পর থেকেই বহু মহিলা উদ্বেগে ভুগতে শুরু করেন ৷ সাধারণত অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থাই চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷ অন্যান্য কারণ যেমন গর্ভধারণের ভয়, প্রসব সংক্রান্ত ভয়, অস্বস্তিকর শারীরিক পরিবর্তন যেমন বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, মেজাজের পরিবর্তন, পিঠে ব্যথা, গর্ভপাত জনিত ভয় এবং শিশুর জন্মের সময় শিশুর যত্ন নেওয়ার ভয় থেকেও মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে ৷
মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা একান্ত জরুরি : গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক চাপ বা উদ্বেগ ভ্রূণকে প্রভাবিত করতে পারে ৷ যার ফলে শিশুর বিকাশের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে । দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ মায়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং মাথাব্যথা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রেসিং পালসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, এটি প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, গর্ভপাত, অকাল জন্মের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । সুতরাং, গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক সুস্থতা এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপ যে যে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে (Stress Cause Pregnancy Complications):
- প্রিক্ল্যাম্পসিয়া: গবেষণা বলে যে আপনার যদি ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্য়া থেকে থাকে, তাহলে আপনার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে । প্রিক্ল্যাম্পসিয়া একটি বিপজ্জনক গর্ভাবস্থার জটিলতা । এটি সাধারণত একজন মহিলা যাঁর রক্তচাপ স্বাভাবিক তাঁর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার 20 সপ্তাহ পরে শুরু হয় । এটি মা এবং শিশু উভয়ের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে ।
- মিসক্যারেজ : এটি স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত নামেও পরিচিত ৷ মিস ক্যারেজ শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই বেদনাদায়ক । গবেষণা দেখায় যে যেসব মহিলার জীবনে কোনও বড় নেতিবাচক ঘটনা বা মানসিক চাপের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের প্রাথমিক গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে । গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ হবু মায়ের মধ্যে বিষন্নতা সৃষ্টি করতে পারে । এই বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য, লোকেরা অ্যালকোহল, তামাক এবং মাদকের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহার করেন । এগুলি গর্ভপাত-সহ নির্দিষ্ট গর্ভাবস্থার জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে ।
- অকাল প্রসব : গবেষণায় দেখা গেছে যে মায়েদের বেশি মানসিক চাপ থাকে তাঁদের তাড়াতাড়ি প্রসবের সম্ভাবনা বেশি থাকে । স্ট্রেস একটি প্রি ম্যাচিওর শিশু (গর্ভাবস্থার 37 সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া) বা কম ওজনের শিশুর (জন্মের সময় যার 2.5 কেজি বা 2500 গ্রামের কম) হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে । দীর্ঘস্থায়ী চাপ শরীরের ভাস্কুলার সিস্টেম, হরমোনের মাত্রা এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাতেও দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন ঘটাতে পারে ।
- মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে কী করবেন :
- মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় আপনি যে সমস্ত অস্বস্তি অনুভব করছেন তা অস্থায়ী । অস্বস্তিগুলি কীভাবে পরিচালনা এবং মোকাবিলা করতে হয় তা শিখুন । প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন ৷
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, ঘুমান এবং ব্যায়াম করুন ৷
- মানসিক চাপ কমাতে মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে পারেন ৷ এক্ষেত্রে প্রসবপূর্ব যোগব্যায়াম বা ধ্যান উপকারী ।
- গর্ভাবস্থা সম্পর্কে পড়াশোনা করুন যাতে আপনি ঠিক করতে পারেন যে গর্ভাবস্থায় এবং আপনার সন্তানের আগমনের সময় কী কী করা উচিত ।
- আগে থেকে পরিকল্পনা করুন এবং চিকিৎসকের কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করবেন না ।
আরও পড়ুন : আমিষ ও নিরামিষাশী বাচ্চাদের মধ্য়ে বৃদ্ধি বা পুষ্টির কোন পার্থক্য হয় না: গবেষণা