2020 সালের মন্ত্র ছিল ফিটনেস, যাতে সুস্থ থাকা যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা যায় এবং এই বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায় । আসুন দেখে নিই কয়েকটা সাধারণ ব্যায়াম, যা এই সময় মানুষ অভ্যেস করেছেন ।
কয়েকটি যোগাসন
1. পশ্চিমোত্থানাসন
- মেঝেতে বসে আপনার পা সামনে ছড়িয়ে দিন, এবং শিরদাঁড়া সোজা রাখুন ।
- শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো মাথার ওপরে তুলুন । তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনে ঝুঁকুন ।
- পায়ের আঙুলগুলো ধরার চেষ্টা করুন, কিন্তু খুব বেশি চাপ দেবেন না । যতদূর পারেন হাতটা এগিয়ে দিন ।
- এবার শ্বাস নিতে নিতে উঠে আসুন । দুই থেকে তিনবার রিপিট করুন ।
- এবার সামনে ঝুঁকে 20-60 সেকেন্ড থাকুন । তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন ।
2. সর্বাঙ্গাসন
- চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দুটো দুপাশে রাখুন ।
- পা, কোমর ও পিঠ সোজা ওপরদিকে তুলুন । কাঁধের ওপর শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন ।
- হাত দিয়ে পিঠে সাপোর্ট দিন এবং কনুই দুটো কাছাকাছি আনুন ।
- যদি কষ্ট হয়, তাহলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন । নয়তো 30-60 সেকেণ্ড ওই ভঙ্গিতে থাকুন ।
- খুব আস্তে আস্তে হাঁটু দুটো আগে নামান, তারপর পিঠ, উরু ও পা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নামিয়ে আনুন ।
3. হলাসন
- এই আসন সাধারণত সর্বাঙ্গাসনের পরে করা হয় ।
- সর্বাঙ্গাসনের ভঙ্গিতে যাওয়ার পর, আপনার পা দুটোকে আস্তে আস্তে মাথার ওপর নিয়ে আসুন এমনভাবে, যাতে আপনার উরু ছাদের দিকে ফিরে থাকে ।
- আপনি ভর দেওয়ার জন্য হাতদুটোকে পিঠেও রাখতে পারেন, অথবা পায়ের বিপরীত দিকে তাদের ছড়িয়েও দিতে পারেন ।
- যতক্ষণ পারেন এই ভঙ্গিতে থাকুন, তারপর আস্তে আস্তে প্রথমে পা সোজা করে, তারপর হাতের তালু মেঝেতে রেখে, প্রথমে পিঠ, তারপর উরু ও তারপর পা নামিয়ে আনুন ।
4. সেতুবন্ধ আসন
- মেঝেতে শুয়ে হাঁটুদুটো ভাঁজ করে পা মেঝেতে রাখুন ।
- গোড়ালি দুটো নিতম্বের যতটা সম্ভব কাছাকাছি থাকবে ।
- হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন । তালু নিচের দিকে ফিরে থাকবে ।
- শ্বাস নিন এবং পিঠ ও নিতম্বকে ওপরের দিকে ঠেলে তুলুন ।
- 1-2 মিনিট রেখে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের ভঙ্গিতে ফিরে আসুন ।
- এভাবে 5-10 বার করুন ।
5. ভুজঙ্গাসন
- উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটো কাছাকাছি আনুন ও হাত দুটো দুপাশে রাখুন ।
- হাত দুটো কাঁধের কাছে আনুন ।
- হাত মাটিতে রেখে শ্বাস নিতে নিতে আস্তে আস্তে শরীরের উপরিভাগকে ঠেলে তুলুন ।
- 15-30 সেকেন্ড থাকার চেষ্টা করুন, তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের ভঙ্গিতে ফিরে যান ।
আরও কয়েকটি যোগাসনের মধ্যে রয়েছে ধনুরাসন, বীরভদ্রাসন, পদহস্তাসন, তালাসন, মার্জারাসন, ত্রিকোণাসন ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন : "যোগ নিছক ব্যায়াম নয়, ভারতের পরম্পরা"
9 টি ব্রিদিং এক্সারসাইজ়
এবার কয়েকটা ব্রিদিং এক্সারসাইজ়ের কথা বলা হল, যা কোরোনা আবহে ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে । এগুলো প্রতিদিনই অভ্যেস করা যায় যাতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাত্রা বাড়ে এবং ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যাতে আমাদের শরীরে অক্সিজেনের জোগান বাড়ে ।
ক. নাড়ি শোধন প্রাণায়াম
খ. উজ্জয়ী প্রাণায়াম
গ. কপালভাতি প্রাণায়াম
ঘ. দীর্ঘ প্রাণায়াম
ঙ. অনুলোম প্রাণায়াম
চ. বিলোম প্রাণায়াম
ছ. ভ্রামরী প্রাণায়াম
জ. ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম
ঝ. শীতলি প্রাণায়াম
ডেস্কে বসে করার মতো কয়েকটি স্ট্রেচ
পেশাদার পরিবেশে কাজ করতে না পারার জন্য মানুষ বিছানা, সোফা, শক্ত চেয়ারের মতো অস্বস্তিকর জায়গায় বসে তাঁদের ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন । যার ফলে অনেকেরই পিঠে যন্ত্রণা শুরু হচ্ছে । এই কয়েকটি স্ট্রেচ তাঁদের কাজে লাগবে :
ক. পেক্টোরাল স্ট্রেচ : পিঠের দিকে দুটো হাত যুক্ত করুন, তাদের নিচের দিকে টানুন এবং কাঁধ সঙ্কুচিত করুন । এতে আপনার পেশী শক্তিশালী হবে এবং আপনাকে সোজা হয়ে বসে থাকতে সাহায্য করবে ।
খ. ট্রাপেজিয়াস নেক স্ট্রেচ : বাঁ হাত সিটের নিচে রাখুন । ডান হাতটা বাঁ কানে দিন এবং মাথা আস্তে আস্তে ডান কাঁধের দিকে ঝোঁকান । ডান কানকে যতটা পারেন কাঁধের কাছাকাছি আনুন । এভাবে অন্যদিকেও করুন ।
গ. গ্লুট স্ট্রেচ : ডান গোড়ালিকে বাঁদিকের উরুতে, হাঁটুর ওপর দিকে রাখুন, তারপর দুটো হাত দিয়ে ধরুন । শিরদাঁড়া সোজা রেখে সামনের দিকে ঝুঁকুন । এভাবে অন্যদিকেও করুন ।
আরও পড়ুন : শীতে শরীর উষ্ণ রাখতে পথ্য যোগাসন এবং গরম খাবার
এগুলো ছাড়াও অনেকে যে যে এক্সারসাইজ় করেছেন, সেগুলি হল:
- মাউন্টেন ক্লাইম্বার
- বার্পিজ
- হাই নিজ
- লাঞ্জ জাম্প
- বাট ব্রিজ
- চেয়ার স্কোয়াট
- লাঞ্জেস
- জাম্পিং জ্যাকস
- ডংকি কিকস
- প্ল্যাঙ্ক
এগুলো সবই মানুষকে বাড়িতে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করেছে । শুধু তরুণরাই নয়, কচিকাঁচা এবং প্রবীণরাও সক্রিয়ভাবে বাড়িতে ওয়ার্কআউটে অংশ নিয়েছেন । কারণ তাঁরা বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না । কিন্তু এগুলো চালিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ । বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকরা দিনে অন্তত 30-40 মিনিট ব্যায়ামের পরামর্শ দেন । তাই বাকি জীবনটার রুটিনে প্রতিদিন শরীরচর্চাকে জুড়ে নিন ।