মাতৃদুগ্ধ হল শিশুর জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার । অন্তত ততক্ষণ, যতক্ষণ না তাঁরা অন্য খাদ্য খাবার মতো পরিস্থিতিতে যাচ্ছে । তবে, মায়েরা দুধের পরিমাণ সঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন ৷ পাশাপাশি শিশুর জন্যও এর সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে । তাই হায়দরাবাদের AMD আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও আয়ুর্বেদে MD ড. রাজলক্ষ্মী মাধবম কয়েকটি খাবারের কথা জানিয়েছেন ৷ যা যথেষ্ট পরিমাণে দুগ্ধ তৈরিতে সাহায্য করে । ‘‘আয়ুর্বেদে পরামর্শ অনুযায়ী দুধ, ঘি ও মাখনকে গর্ভাবস্থার সময় থেকে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে । এর ফলে রস ধাতুর পরিচর্যা হয়, যা দুধ তৈরি করার মূল কাজটি করে । সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মায়েদের জন্য খাবারের তালিকা সুষম হওয়া জরুরি । এখানে কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করা হল, যা দৈনিক খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে ।
১. জল
অনেকটা পরিমাণ জল একসঙ্গে পান করার বদলে সারা দিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন । আপনি অল্প গরম বা ঠাণ্ডা জলও পান করতে পারেন ।
২. ডাবের জল
ডাবের জল বা অনেক সময় ডাবের দুধও স্তনদুগ্ধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এটার মধ্যে নিউট্রিয়েন্টস ও হাইড্রেটস থাকে ।
৩. দুধ
দুধের মধ্যেই সমস্তরকম গুণ থাকে । আর এর মধ্যে থাকে ক্যালসিয়ামও । স্তন্যদায়ী মায়েরা তাই দুধ খেতে পারেন ।
৪. গম
গম থেকে তৈরি হওয়া খাদ্যসামগ্রী, যেমন ডালিয়া, স্তনদুগ্ধ বৃদ্ধি করতে পারে । পাশাপাশি আপনি ওট খাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে পারেন ।
৫. মশলা
কালো মরিচ, জিরে, দারুচিনি ও ক্যারমের বীজ মশলা হিসেবে রোজকার রান্নায় যুক্ত করা যেতে পারে । লাল লঙ্কার গুঁড়ো বা লঙ্কা এড়িয়ে যেতে পারেন আপনি ।
![photo](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/8673314_wb_masala.jpg)
৬. আদা
আদা শুধুমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বৃদ্ধি করে না । কিন্তু এর মধ্যে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানও থাকে । এটাও রোজকার রান্নায় যুক্ত করা যেতে পারে ।
৭. রসুন
রসুন সাধারণত সমস্ত রান্নাঘরেই ব্যবহার করা হয় । এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । হজমেও সাহায্য করে । আর এটা একটা প্রাকৃতি ভেষজ, যা স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
৮. ফেনুগ্রিক বীজ
এগুলিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে । শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এটা রোজকার রান্নায় মশলা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা জলের সঙ্গে কয়েকটি ফেনুগ্রিক বীজ খেয়ে নিতে পারেন ।
৯. ফেনেল বীজ
এটা স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং এটা হজমেও সাহায্য করে । এটা যেমন আছে, তেমন ভাবেই আপনি খেতে পারেন । অথবা ১০০ মিলি লিটার দুধে অর্ধেক চামচ ফেনেল বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে আপনি খেতে পারেন ।
১০. ফল
যে সমস্ত ফল ভারতে ফলে আর যা বাইরে থেকে আমদানি করে আনা হয় না, তা খাওয়া যেতে পারে । সমস্ত রকম মরসুমি ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । বিশেষ করে ডালিম । ডালিম রক্তকে পরিশোধিত করে এবং মায়েদের জন্য স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ।
১১. তিল
তিলের বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে । যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো করার কাজ করে । সুতরাং, এটা খাওয়া মা এবং শিশুর উভয়েরই হাড়ের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।
১২. বাদাম
কাজু, আমন্ড বাদাম, আখরোট ইত্যাদি সবরকমের বাদাম খাওয়া যায় । আপনি আমন্ড বাদাম রাতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন । পরের দিন সেগুলি গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে গুলে খেয়ে নিতে পারেন ।
![food](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/8673314_wb_k.jpg)
ড. রাজলক্ষ্মী এর সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন যে কী কী বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে :
-খুব মশলাদার খাবার
-তুচ্ছ খাবার
-গরম খাবার
-পাউরুটি
-বার্গার বা পিজ্জা
-মদ
-ধূমপান
-তামাকজাত দ্রব্য সেবন
-কফি বা ক্যাফিন জাতীয় দ্রব্য
“সমস্ত উত্তেজক খাবারকে বন্ধ করতে হবে । কারণ, এই ধরনের খাবার স্তনদুগ্ধের উৎপাদনের উপর খারাপ প্রভাব তৈরি করে । এছাড়া কোনও রকম মানসিক চাপ থাকা উচিত নয় এবং মায়েদের সুস্থ ও সুখী পরিবেশে জীবনযাপন করা উচিত ।”
সুতরাং, একজন সুস্থ মায়েরই স্বাস্থ্যকর শিশু হবে । তাই গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পর উভয় ক্ষেত্রে খাবারের পাশাপাশি আপনাকে আপনার জীবনযাত্রারও যত্ন নিতে হবে ।