স্তন্যপান করালে মায়ের কী উপকার হয় ?
- শিশু ও মায়ের মধ্যে আবেগের বন্ধন আরও দৃঢ় হয় । মা যদি অবসাদের মধ্যেও থাকেন, তাহলেও তিনি শিশুকে স্তনদান করতে পারেন, এতে একটা স্বাস্থ্যকর বন্ধন গড়ে ওঠে ৷
- স্তন্যপান করানোর সময় অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরণ হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে, এবং মা তাঁর ফিগার ফিরে পেতে পারেন ।
- যে মা স্তন্যপান করান, তিনি জরায়ু এবং স্তন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত ।
- ব্রেস্ট ফিডিংয়ের সময় মায়ের শরীরে কনট্রাসেপ্টিভ এফেক্টও লক্ষ্য করা যায় ।
- স্তন টোনড হয় এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে শিথিলতা এড়ানো যায় । এতে হরমোন ভারসাম্য বজায় থেকে মহিলাদের ফিগার ধরে রাখতে সাহায্য করে ।
- বাচ্চার জন্মের পর যত দ্রুত স্তনপান শুরু করা যায়, তত দ্রুত অক্সিটোসিন ক্ষরণ হতে থাকে এবং জরায়ু সঙ্কোচনের সময় রক্তপাত কমায় ।
শিশুকে স্তন্যপান করানোর সঠিক ভঙ্গি
মা-কে স্বস্তিতে বসতে হবে । পিঠের ব্যাথা এড়াতে ঠেস দিয়েও বসতে পারেন । তাকে পা ভাঁজ করে বসতে হবে, এবং তারপর বাচ্চার ঘাড়ের কাছে সাপোর্ট দিয়ে একহাতে ধরতে হবে, এবং অন্য হাতে নিপল এবং এরিওলা বাচ্চার মুখে দিতে হবে এমনভাবে, যেন তার ঠোঁট পুরোটা কভার হয় । খাওয়ানোর পর বাচ্চাকে কাঁধে ফেলে পিঠে হালকা চাপড় দিতে হবে, যাতে ঢেকুর ওঠে ।
কলোস্ট্রাম কী ?
কলোস্ট্রাম হচ্ছে সেই ক্ষরণ যা শিশুর জন্মের পর দুদিন মায়ের বুক থেকে নিঃসৃত হয় । এতে প্রচুর ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং অ্যান্টিবডি থাকে, কিন্তু কিছু অন্ধ বিশ্বাসের জেরে একে সাধারণভাবে ‘ডাইনির দুধ’ বলা হয় এবং ফেলে দেওয়া হয়ে থাকে । কিন্তু এটাই হচ্ছে দুধের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা প্রতিটি সদ্যোজাতকে দেওয়া উচিত ।
কর্মরতা মহিলারা কীভাবে ব্রেস্টফিডিং করাবেন?
তাঁরা বুকের দুধ বার করে সেটা জীবাণুমুক্ত পাত্রে 48 ঘণ্টা পর্যন্ত রেফ্রিজারেট করে রাখতে পারেন । যখন বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় হবে, সেই দুধ ফ্রিজ থেকে বার করে ঘরের তাপমাত্রায় আসতে দিন । তারপর সেটা শিশুকে খাওয়ান ।
দুধ দেওয়ার জন্য যে পাত্র ব্যবহার করবেন, তা গরম জলে ভালোভাবে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে । কিন্তু বুকের দুধ ফোটাবেন না, কারণ তাতে তার সমস্ত পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাবে ।
স্তন্যদানের সময় কী কী সমস্যা হতে পারে ?
- নিপল সঙ্কুচিত হয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া । এধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে ম্যাসাজের মাধ্যমে নিপল বাইরের দিকে বার করে আনতে হবে। স্টিমুলেশনের মাধ্যমে নিপলকে শক্ত ও সোজা করা যায় । খালি সিরিঞ্জের (সূঁচ ছাড়া) সাহায্যেও সঙ্কুচিত নিপলকে বাইরের দিকে টানা যেতে পারে।
-মহিলারা অনেক সময়েই ব্রেস্ট কনজেশনের কথা বলেন, যেখানে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, এছাড়াও ব্রেস্ট অ্যাবসেসও রয়েছে । শিশুকে ঠিকমতো স্তন্যপান করিয়ে এইসব সমস্যা এড়িয়ে চলুন । স্তন ম্যাসাজ করে অতিরিক্ত দুধ ফেলে দিন । যদি ব্যাথা বেশি হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।
-যদি শিশুকে সঠিকভাবে ধরে তার মুখ নিপল এবং এরিওলার একটি অংশের ওপর ধরা হয়, তাহলে নিপল সাকিং এড়ানো যায় । নিপল সাকিং ব্রেস্ট এনগর্জমেন্টের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে ।
দুগ্ধক্ষরণ কম হলে
-দুগ্ধক্ষরণ কম হলে, মেথি, ফল, রাগি বা বাজরার পরিজ, স্যুপ, দুধ ফলের রস ইত্যাদি খাবার মা-কে আরও দুধ পেতে সাহায্য করে । চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শতভরী ও অন্যান্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে ।