নর্থ ক্যারোলিনার রালে-ডারহামের লিডারশিপ অ্যান্ড রিলেশনশিপ কোপ জেনিফার হাওয়েলের বিবৃতি অনুযায়ী, একটা সুস্থ সম্পর্ক হল সেটাই, যেখানে দুটো মানুষ পারস্পরিক ভালবাসা ও সম্মান নিয়ে বাস করেন । এখানে তাঁরা তাঁদের মনের কথা বলার পাশাপাশি, অন্যের কথা শুনতে, বুঝতে এবং গ্রহণ করতেও পারেন । কিন্তু আবার তাঁরা যদি সবসময় সমন্বয়েরই চেষ্টা করে চলেন, তাহলে সম্পর্কে দায়িত্ববোধ থাকলেও, ভালবাসা নেই ।
সুস্থ সম্পর্ক কীভাবে মেলে?
2019 সালের আগস্ট মাসে ‘পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশাল সাইকোলজি বুলেটিন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, দীর্ঘদিন সম্পর্কে থেকেও যদি সুখ ও সন্তুষ্টি না মেলে, তার থেকে একা থাকাই ভালো । একইসুরে হিউস্টনের ইন্টিমেসি অ্যান্ড সেক্স থেরাপিস্ট মেরি জো রাপিনি বলছেন, বিষাক্ত সম্পর্ক আমাদের জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে । জীবনের নানা সমস্যা বেড়ে চলার পাশাপাশি স্ট্রেস, অস্থিরতা, ঘুম না হওয়া আমাদের হৃদযন্ত্রে প্রভাব ফেলে ।
রাপিনির কথায়, বহু মানুষ বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা একটা অসুস্থ সম্পর্কে রয়েছেন । সুখী ও সুস্থ সম্পর্কের জন্য উল্টোদিকের মানুষটাকে বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরি । তাই ইটিভি ভারত সুখীভব আপনাদের সামনে রাখছে 9টি এমন ইঙ্গিত, যাতে আপনি বুঝবেন যে আপনার সম্পর্ক ঠিক আছে কী নেই । আসুন দেখে নিই ।
- খোলাখুলি কথা বলতে পারা
জেনিফার হাওয়েল বলছেন, যে কোনও সম্পর্কে একে অপরের ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলতে পারাটা অত্যন্ত জরুরি । যদি সম্পর্ক ভাঙার ভয়ে একে অপরের আপত্তিকর অভ্যেসগুলো নিয়ে কথা বলা না যায়, তবে তার প্রভাব গভীরভাবে সম্পর্কের ওপর পড়ে । একটা সুস্থ সম্পর্কে দুজন পার্টনারই একে অপরকে নিয়ে পছন্দ-অপছন্দগুলো খোলাখুলি বলতে পারেন ।
2. পারস্পারিক বিশ্বাস
মেরি জো রাপিনি বলছেন, যে কোনও সম্পর্কের ভিত্তি হল বিশ্বাস । যদি পার্টনাররা একে অপরকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন, তাহলে স্বাধীনতা ও পরিসরের বোধটাও অনেকটা বেড়ে যায় । কিন্তু যদি সামান্য সন্দেহও ঢুকে পড়ে এবং একে অন্যের ফোন বা সোশাল নেটওয়ার্ক অ্যাকাউন্টে উঁকিঝুঁকি মারা শুরু হয়, তাহলে সম্পর্কে তিক্ততা ঢুকে পড়তে পারে ।
3. একে অন্যের ভালবাসার ভাষা এবং প্রয়োজনগুলো বোঝা
হাওয়েল বলেছেন, ‘দ্য ফাইভ লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামের বিখ্যাত বইটিতে বলা হয়েছে, যদি কেউ মন থেকে আপনাকে গ্রহণ করেন, তাহলে তাঁরা আপনার ছোটো ছোটো বিষয় ও অভ্যেসগুলোও বুঝতে শুরু করেন । এতে সম্পর্ক আরও রোম্যান্টিক হয়ে ওঠে ।
আরও পড়ুন : কামশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, আপনার কি চিন্তিত হওয়া উচিত?
4. একে অন্যকে না বলতে পারা
যুগলদের মধ্যে মতানৈক্য ও ঝগড়া সাধারণ ব্যাপার । রাপিনির ব্যাখ্যা, প্রতিটি সম্পর্কে অন্তত পাঁচটা এমন ইস্যু থাকা দরকার, যেখানে দুজনের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা হবে । এই পরিস্থিতিতে যদি একজন পার্টনার আরেকজনের মনোভাব বোঝে, এবং সেটা বদলানোর চেষ্টা না করে, তাহলে তাকে সুস্থ সম্পর্ক বলতেই হবে ।
5. একে অন্যের লক্ষপূরণে উৎসাহ দেওয়া
হাওয়েলের মতে, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন ও লক্ষ্য আলাদা আলাদা । তাই দুজন পার্টনারই যদি একে অন্যের স্বপ্নকে বোঝে এবং সেই লক্ষ্যপূরণে উৎসাহ দেয়, তাহলে বুঝতে হবে যে সম্পর্কে ভালবাসা ও সম্মান আছে ।
6. একে অন্যের ভিন্ন আগ্রহকেও সম্মান করা
স্বপ্ন বা লক্ষ্যের মতো, প্রতিটি মানুষের আগ্রহের জায়গাও আলাদা আলাদা, এবং কারোরই নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয় এবং অন্যের শখ বা ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান দেওয়া উচিত । এতে শুধু পারস্পরিক বিশ্বাসই বাড়বে না, পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও নিজের প্রতি ভালবাসাও বাড়বে ।
7. সঙ্গী বা সঙ্গিনীর শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাটা বোঝা
প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা আলাদা শক্তি বা দুর্বলতার জায়গা আছে । হাওয়েলের মতে, যদি আপনি আপনার উল্টোদিকের মানুষটার শক্তি ও দুর্বল জায়গাগুলো মেনে নিয়ে এগিয়ে চলেন, তাহলে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে ।
8. অন্যের পরিসরকে সম্মান দেওয়া
কোনও ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, যদি আপনার পার্টনার আপনার আর্থিক অবস্থা এবং চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে আপনার মতামতকে সম্মান দেয় এবং প্রতিটি ছোট ছোট সিদ্ধান্তের আগে সেগুলোকে মাথায় রাখে, তাহলে এটা সম্পর্কের সদর্থক দিক ।
9. পাশে থাকার অনুভূতি
2015 সালের জুলাই মাসে ‘দ্য জেনারেল অফ অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার্স’-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অসন্তুষ্টি ও অসুখী মনোভাব নানা শারীরিক সমস্যারও জন্ম দিতে পারে । এই গবেষণায় 50 বছরের বেশি বয়সী প্রায় 5000 মানুষ অংশ নেন । এতে দেখা গিয়েছে যে যাঁরা সম্পর্কে স্ট্রেস, অস্থিরতা ও অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে । এমনকী তাঁদের অনেকে বহুবার আত্মহত্যার কথাও মনে করেছেন । পাশাপাশি যাঁরা সুস্থ সম্পর্কে রয়েছেন, তাঁরা জীবনের ওই সময়কালটা আরও ভালোভাবে বাঁচতে পেরেছেন ।
তাই যদি আপনি অনুভব করেন যে আপনি একটা অসুস্থ ও বিষাক্ত সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার থেকে একা থাকাই ভালো । আর দুজনেই যদি সম্পর্কের মেরামতি ও উন্নতি করতে চান, তাহলে কোনও রিলেশনশিপ কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ।