রায়গঞ্জ, 9 অগস্ট : স্বামী মাতাল ৷ বাপের বাড়ির লোকজনও খোঁজ খবর নেন না ৷ নিজে যে কোথাও কাজ করে দু’টো পয়সা রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারবেন, তেমন কোনও উপায়ও জানা নেই ৷ এই অবস্থায় ছোট্ট দুই ছেলেকে নিয়ে গত প্রায় একবছর ধরে হাসপাতালেই আশ্রয় নিয়েছেন এক মহিলা ৷ তাঁর অবস্থা দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাড়িয়ে দেয়নি ৷ কিন্তু এভাবে কতদিন বাঁচা সম্ভব ? উত্তর জানা নেই কারও ৷
আরও পড়ুন : থিয়েটার পাগল অরিন্দম জীবনের রঙ্গমঞ্চে আজ ভবঘুরে, জোটে না খাবার
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ 24 ঘণ্টাই এখানে ব্যস্ততার ছবি ৷ তারই মধ্যে যেন থমকে গিয়েছে শিপ্রা সরেনের জীবন ৷ শিপ্রা বিবাহিতা ৷ দু’টি ছোট্ট ছেলেও রয়েছে ৷ কিন্তু, স্বামীর নাম কী, শ্বশুরবাড়িই বা কোথায়, সেইসব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেন না শিপ্রা ৷ বলেন শুধুই বাপের বাড়ির কথা ৷ শিপ্রা উত্তর দিনাজপুরেরই কালিয়াগঞ্জের মেয়ে ৷ তাঁর দাবি, বাপের বাড়ির লোকজন তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছেন ৷ আর কোনও ঠাঁইও জানা নেই ৷ তাই আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতালের এই করিডরে ৷ কিন্তু কেন তাঁর এই অবস্থা ? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি শিপ্রা ৷ তবে ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে তিনি চিন্তিত, তা জানিয়েছেন তিনি ৷
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় বছর খানেক হল, শিপ্রা তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে এখানেই থাকেন ৷ পরনের মলিন কাপড়টুকু ছাড়া আর কোনও সম্পত্তি নেই তাঁর ৷ বাচ্চা দু’টোর সেটুকুও জোটে না ৷ তারা সারাদিন আদুল গায়েই ঘুরে বেড়ায় এখানে-ওখানে ৷ শিপ্রার অবস্থা দেখে তাঁকে আর তাঁর সন্তানদের তাড়িয়ে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ কিন্তু এভাবে হাসপাতালে কেউ থাকতে পারে না ৷ তাই কতদিন শিপ্রা এখানে তাঁর ছেলেদের নিয়ে থাকতে পারবেন, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন হাসপাতালের সহকারী সুপারিনটেন্ডেন্ট অভীক মাইতি ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই ৷ কেউ অসুস্থ হলে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তাঁর চিকিৎসা করতে পারি ৷ অন্যথায় পুলিশ কিংবা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে হবে ৷’’
আরও পড়ুন : পুলিশের উদ্যোগে ঘরে ফিরলেন ভবঘুরে
শিপ্রাকে হাসপাতালের সকলেই চেনেন ৷ সংশ্লিষ্ট অস্থায়ী কর্মী সংগঠনের নেতা প্রশান্ত মল্লিক জানিয়েছেন, তাঁরা বাচ্চা দু’টির পড়াশোনার বন্দোবস্ত করেছেন ৷ করোনা আবহ মিটে গেলেই তারা স্কুলে যেতে পারবে ৷ কিন্তু শিপ্রা ও তাঁর সন্তানদের পাকাপাকিভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মীরা ৷