রায়গঞ্জ, 1 অগস্ট : দেশ স্বাধীন হয়েছে 75 বছর ৷ কিন্তু আজও নদীর উপর সেতু হয়নি ৷ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন প্রায় 25টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা । রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে, কিন্তু কেউ একবারের জন্যেও ইটাহারের সুঁই নদীর কচুয়া ঘাটের সেতুর কথা ভাবেনি ।
মুমূর্ষু রোগী থেকে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী কিংবা কৃষকের ফসল নিয়ে বাজারে যাওয়া, সবকিছুর একমাত্র ভরসা নৌকা নয়তো বা ভেলায় নদী পারাপার । ভরা বর্ষায় দুর্ঘটনা ঘটাও স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে । কিন্তু চোখে পড়েনি প্রশাসন কিংবা কোনও রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিদের । তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষই চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে নদীর উপর নির্মাণ করতে চলেছেন বাঁশ আর কাঠের সেতু । যদিও ইটাহারের বর্তমান নবনির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মুশারফ হোসেন জানিয়েছেন, ইটাহার ব্লকে 7টি সেতুর প্রয়োজন আছে । রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকারের বাজেট থেকে ইটাহারে প্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রথমে কচুয়া ঘাটের সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে । আপাতত গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি । গ্রামের মানুষের চাঁদা তুলে বাঁশ ও কাঠের সেতু তৈরির প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক । কিন্তু রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিদের কথায় ভরসা না পেয়ে নিজেরাই সেতু নির্মাণের জন্য কুপন ছাপিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করছেন গ্রামবাসীরা ।
আরও পড়ুন : Rain in Purulia : পুরুলিয়ায় কুমারী নদীর জলস্তর বাড়ায় বিচ্ছিন্ন জাতীয় সড়ক
একদিকে কাপাশিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত, আর অন্যদিকে মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ মাঝে বইছে সুঁই নদী । নদীর এপারে কচুয়া, পূর্বপাড়া, টেপুর, বাগডুমা, নমুনিয়া, বরট, বালিয়াপাড়া হাট, কোয়ারপুর, কাশিমপুর-সহ বেশকিছু গ্রাম আর নদীর অপর পাড়ে রয়েছে বীরনগর, বোঁচকাপাড়া, টিটিহা, বিষ্টুপুর, রাধানগর, জামালপুর, কামারডাঙা-সহ একাধিক গ্রাম । দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজার হাজার মানুষের ইটাহার ব্লক অফিস থেকে শুরু করে ইটাহার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ দুই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এবং ছাত্রছাত্রীদের স্কুল কলেজ মাদ্রাসা যাওয়ার পথে মাঝে রয়েছে সুঁই নদী । 4টি স্কুল, একটি হাইমাদ্রাসা, একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে বাজার হাট সবই যেতে হয় নদী পারাপার করে ।
গ্রীষ্মকালে অতটা সমস্যা না হলেও বর্ষার শুরু থেকে এই নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় মুমূর্ষু রোগী থেকে ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষকে । স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতু না থাকার কারণে নদী পার করে গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তেমনই ভেলা বা নৌকায় পারাপার করতে গিয়ে বহু দুর্ঘটনাও ঘটেছে । কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার । তাঁদের অভিযোগ, ভোটের আগে এই কচুয়া ঘাটে সুঁই নদীর উপর সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে । কিন্তু তা আর হয়নি । তাঁদের আশা, গ্রামের মানুষের আর্থিক সহায়তা আর স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর উপর কচুয়া ঘাটের সেতু নির্মাণ করবেন তাঁরা নিজেরাই । চলছে তার প্রস্তুতিও।