রায়গঞ্জ, 10 জুন : চলছে আনলক ৷ সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি খুলেছে বেসরকারি দপ্তরও ৷ তবে কমেনি কোরোনা সংক্রমণের হার ৷ বরং প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ৷ কোরোনার প্রতিষেধক যতদিন না আসছে, ততদিন পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলাই একমাত্র পথ ৷ মত চিকিৎসকদের ।এই পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে বাস-অটো-টোটোর বদলে সাইকেলে ভরসা রাখছেন অফিসযাত্রীরা ।
কোরোনার প্রকোপে বদলে গেছে অনেক কিছুই । বদলেছে স্বাভাবিক জনজীবন । বদলেছে মানুষের নিত্যদিনের অভ্যাস । মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার হয়েছে নিত্যদিনের সঙ্গী । এরই সঙ্গে বাড়ছে সাইকেলের ব্যবহার । অন্তত রায়গঞ্জের অফিসপাড়ার ছবি সেই কথাই বলছে । অফিসপাড়ার অলিতে-গলিতে এখন বাইকের পাশাপাশি সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে সাইকেল । বাইক, অটো-টোটোর বদলে এখন অনেকেই ভরসা রাখছেন সাইকেলে । অফিসের পাশাপাশি বাজার-দোকান যাওয়ার জন্য়ও সাইকেলের ব্যবহার করছেন তাঁরা ।
রায়গঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশের মতে, আনলক 1 শুরু হওয়ার পর থেকে লকডাউন রয়ে গেছে শুধু খাতায় কলমে । বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর খুলে যাওয়ায় রাস্তায় বেড়েছে ভিড় । আর সামাজিক দূরত্ব ? সে এখন কোথায় ! বাস-অটো-টোটোর ভিড়ে আপাতত নিরুদ্দেশ সোশাল ডিসট্যান্সিং । এমত অবস্থায় সরকারি দপ্তরগুলি পুরোপুরি খুলে দেওয়ার কারণে হাজিরা দিতে বাধ্য হচ্ছেন সকলেই । যদিও এরই মধ্যে নবান্ন থেকে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে । বলা হয়েছে, সর্দি-কাশি-জ্বরের মত উপসর্গ থাকলে অফিসে আসতে হবে না ৷ কনটেইনমেন্ট জ়োনে থাকলে অফিস আসার দরকার নেই ৷ সেক্ষেত্রে বাড়িতে বসেই কাজ করতে পারবেন সরকারি দপ্তরের কর্মীরা ৷ সরকারি অফিসগুলিতে সেক্ষেত্রে 70 শতাংশ উপস্থিতিও বাধ্যতামূলক নয় বলে জানানো হয়েছে ৷
এমত অবস্থায় অটোতে-টোটোতে যাতায়াত করলে যে কোনও সময় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায় । তাই এখন বাস-টোটো-অটোর বদলে সাইকেলে ভরসা রাখছেন রায়গঞ্জের অফিসযাত্রীদের একটা বড় অংশ । তাঁদের দাবি, সাইকেল চালিয়ে অফিসে গেলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমবে, পাশাপাশি কমবে কোরোনার সংক্রমণের হারও ।
এক অফিস যাত্রী উৎপল সরকার বললেন, "আমি অফিস যাওয়ার জন্য এখন সাইকেল ব্যবহার করছি । এতে দু'টি সুবিধা হচ্ছে । প্রথমত, পরিবেশে দূষণের মাত্রা কিছুটা কমছে । পাশাপাশি, সামাজিক দূরত্ব মেনে নিজের কাজ করতে পারছি । সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাচ্ছে ।" মনোজকান্তি রায় নামে আর একজনের কথায়, "বর্তমানে আমাদের অফিসপাড়ায় অনেকেই সাইকেল চালিয়ে দপ্তরে আসছেন । এতে সামাজিক দূরত্ব অনেকটাই বজায় থাকছে । নিজেকেও সুরক্ষিত রাখতে পারছি।"
এই পরিস্থিতিতে বেড়েছে নতুন সাইকেলের বিক্রি । সাইকেল কেনার হিড়িক দেখে অবাক হচ্ছেন বিক্রেতারাও । রায়গঞ্জের এক সাইকেল বিক্রেতা রাজা দত্ত বলেন, "হঠাৎ করে মানুষের মধ্যে সাইকেল কেনার হিড়িক বেড়েছে । মূলত অফিসে যাতায়াত করার জন্যই এই সাইকেল কিনছেন তাঁরা ।"
এদিকে, কোরোনা পরিস্থিতির মাঝে সরকারি দপ্তরগুলিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দুটি পৃথক শিফট চালু করেছে নবান্ন । এখন থেকে কোরোনা সতর্কতায় রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা দু'টি শিফটে কাজ করবেন । একটি শিফট চলবে 9.30 থেকে 2.30 পর্যন্ত, আর একটি শিফট 12.30 থেকে 5.30 পর্যন্ত । পাশাপাশি এক ঘণ্টা দেরিতে এলেও কর্মচারীদের নামের পাশে লালকালি পড়বে না বলেও জানানো হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায় ।