রায়গঞ্জ, 4 অক্টোবর : কোরোনার কোপে 400 বছরের পুরানো ভূপালপুর রাজবাড়ির পুজোর জৌলুসও এবার ছাইচাপা আগুনের মতো । কোরোনার কোপে জাঁকজমকহীন ঘটপূজোয় সারতে চলেছেন রাজা ভূপালচন্দ্র রায় চৌধুরির বংশধরেরা । উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের দূর্গাপুরে ভূপালপুর জমিদার বাড়ি এলাকার মানুষদের কাছে রাজবাড়ির পুজো নিয়ে একটা বাড়তি উন্মাদনা থাকে। কিন্তু কোরোনার আবহে হাজার হাজার গ্রামের বাসিন্দাদের ভীড় এড়াতে এবার ঘটপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজবাড়ির বংশধরেরা।
কথিত আছে, মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমল থেকেই এই বংশের দুর্গাপুজোর প্রচলন । রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়চৌধুরি, ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরি রাজ পরিবারের বংশধরের হাত ধরে এখানে দেবী পুজিতা হন । ইতিহাসের পথ বেয়ে আজও দুর্গাপুর রাজবাড়িতে পূজো করে আসছেন তাঁদের বংশধরেরা । দেবী দুর্গা কয়েকশো বছরের প্রাচীনত্বের গন্ধ মেখে নিয়ম নিষ্ঠার সাথে পুজো পেয়ে থাকেন এই রাজবাড়ির প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দূর্গা দালানে ।
তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে রাজবাড়ির পুজোয় । আগে মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং এ অঞ্চলের বাসিন্দারা । জোড়া মোষ ও পাঁঠা বলির মাধ্যমে আগে দেবীর বোধন হত মহালয়াতেই । এখন মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধনের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলি প্রথা । তবে পুজোর নিয়ম নিষ্ঠা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই । এখানে অসুরের গায়ের রঙ হয় ঘন সবুজ আর দেবী দুর্গার মাথার উপরে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অধিষ্ঠান থাকে ।
রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর অভিজিৎ রায়চৌধুরি বলেন, "আমাদের আদি বাড়ি ছিল ইটাহারের চূড়ামন এলাকায় । সেখানেই দেবী দুর্গার আরাধনা হত । মহানন্দা নদীর করাল গ্রাসে রাজবাড়ি ও রাজ্যপাট চলে যায় নদীগর্ভে । তারপর সেখান থেকে চলে এসে দুর্গাপুরে নির্মিত হয় রাজপ্রাসাদ ও দেবী দূর্গার মন্দির । মহালয়ার দিন থেকে রাজবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালা, থিয়েটার, সার্কাসের আসর বসত । পূজোর কটাদিন এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের ভোজনের ব্যবস্থাও থাকত । আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতেন সকলেই । কালের পরিবর্তনে সেসব এখন ইতিহাস ।"
তবে রাজবাড়ির দুর্গা পুজো নিয়ে এখনও এলাকার মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা থাকে । কিন্তু এবছর কোরোনার আবহে সেটুকুও বন্ধ করতে হয়েছে । কোরোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের সমাগম আটকাতে এবার প্রতিমা পুজো বন্ধ করে শুধুমাত্র ঘটপুজো করছেন রাজ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের বংশধরেরা।