ETV Bharat / state

আছে বেদি, নরবলির স্বপ্নাদেশে আজও সেখানে বন্ধ পুজো ! - durgapuja

1962 সালের কথা ৷ বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা আয়োজন করেছিলেন দুর্গাপুজোর ৷ আশপাশের 10-12 গ্রামের মধ্যে ওই একটিই স্কুল ৷ প্রায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে সেখানে । কথিত আছে, প্রথম বছর পুজো চলাকালীনই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তাকে দেবী ভবানী স্বপ্নাদেশ দেন, "এখানে পুজো করলে দিতে হবে নরবলি ৷ নাহলে পুজো হবে না ৷" এরপর থেকে আর ওই এলাকায় পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ ৷

ভবানীর বেদী
author img

By

Published : Sep 26, 2019, 2:58 PM IST

Updated : Sep 28, 2019, 8:01 PM IST

রায়গঞ্জ, 26 সেপ্টেম্বর : 57 বছর আগেকার কথা ৷ এলাকায় দুর্গাপুজো শুরু করলেন রায়গঞ্জের বামুহা তপশিলি উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা ৷ এখানে দুর্গাপুজো করলে নরবলি দিতে হবে ৷ কথিত আছে, এই স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা ৷ প্রথম বছর পুজো করার পর আর পরেরবার থেকে সেখানে পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি রায়গঞ্জের বামুহা তপশিলি উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা ৷ বেশ কয়েক বছর বন্ধও থাকে পুজো ৷ পরে স্থান পরিবর্তন করা হয় ৷ বর্তমানে হাটখোলায় হয় বামুহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজো ৷ তবে সেই ইতিহাস আজ বয়ে চলেছে ৷ এখনও স্কুল চত্বরে থাকা পুরোনো সেই ভবানীর বেদিতে আগে পুজো দেওয়া হয় ৷ তারপরেই শুরু হয় হাটখোলা মন্দিরে দুর্গাপুজো ৷ শুধু তাই নয়, কারোর বাড়িতে পুজো হলেও আগে ওই বেদিতে পুজো করে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা ৷ তারপরেই শুরু করেন বাড়ির পুজো ৷

photo
বামুহার দুর্গা প্রতিমা

1962 সালের কথা ৷ বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা আয়োজন করেছিলেন দুর্গাপুজোর ৷ আশপাশের 10-12 গ্রামের মধ্যে ওই একটিই স্কুল ৷ প্রায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে সেখানে । কথিত আছে, প্রথম বছর পুজো চলাকালীনই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তাকে দেবী ভবানী স্বপ্নাদেশ দেন, "এখানে পুজো করলে দিতে হবে নরবলি ৷ নাহলে পুজো হবে না ৷" এরপর থেকে আর ওই এলাকায় পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ ৷ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সত্যেন হালদার বলেন, "প্রথমবার পুজো করেই বামুহা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরের ওই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয় । বেশ কয়েক বছর পুজো বন্ধ থাকার পর বামুহা গ্রামের হাটখোলায় আবার পুজো শুরু করা হয় । কিন্তু সেখানে পুজো শুরুর আগে বিদ্যালয় চত্বরে থাকা ভবানীর বেদিতে আগে পুজো করা হয় । শুধু তাই নয়, দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে বেদির সামনে প্রতিমা নিয়ে আসি ৷ বামুহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর প্রচলিত এই রীতি ও নিয়ম বহু বছর ধরেই চলে আসছে । অন্যথা হয়নি কোনও বছর ৷" গ্রামবাসীদের ধারণা, নিয়মের অন্যথা হলে বিপদ অনিবার্য ৷ এমন কী, জঙ্গলাকীর্ণ ওই বেদির কোনও গাছে হাত দেওয়ারও সাহস পান না কেউ ৷ কথিত আছে, একবার গ্রামের এক বাসিন্দা বেদি এলাকার আগাছা পরিষ্কার করতে গেছিলেন ৷ একবার কোদাল চালাতেই তাঁর ছেলের মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে শুরু করে । সে মারা যায় । সেই থেকে এলাকার কেউই বেদি ও বেদি সংলগ্ন এলাকায় গাছের পাতাতেও হাত দেন না ৷

দেখুন ভিডিয়ো

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিবাকর ঘোষ জানান, বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি এখানকার দুর্গাপুজো নিয়ে এই কাহিনী শুনে এসেছেন । এখন বামুহা গ্রামের দুর্গাপুজো করা হয় বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে হাটখোলা এলাকায় । সেখানে নির্মিত হয়েছে দুর্গা মন্দির । তবে জঙ্গলাকীর্ণ হলেও বিদ্যালয় চত্বরে থাকা দেবী ভবানীর বেদি ঘিরে বিশ্বাস, ভয়, ভক্তি আজও রয়ে গেছে বামুহার বাসিন্দাদের মনে ।

photo
হাটখোলা এলাকার পুজো

রায়গঞ্জ, 26 সেপ্টেম্বর : 57 বছর আগেকার কথা ৷ এলাকায় দুর্গাপুজো শুরু করলেন রায়গঞ্জের বামুহা তপশিলি উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা ৷ এখানে দুর্গাপুজো করলে নরবলি দিতে হবে ৷ কথিত আছে, এই স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা ৷ প্রথম বছর পুজো করার পর আর পরেরবার থেকে সেখানে পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি রায়গঞ্জের বামুহা তপশিলি উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা ৷ বেশ কয়েক বছর বন্ধও থাকে পুজো ৷ পরে স্থান পরিবর্তন করা হয় ৷ বর্তমানে হাটখোলায় হয় বামুহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজো ৷ তবে সেই ইতিহাস আজ বয়ে চলেছে ৷ এখনও স্কুল চত্বরে থাকা পুরোনো সেই ভবানীর বেদিতে আগে পুজো দেওয়া হয় ৷ তারপরেই শুরু হয় হাটখোলা মন্দিরে দুর্গাপুজো ৷ শুধু তাই নয়, কারোর বাড়িতে পুজো হলেও আগে ওই বেদিতে পুজো করে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা ৷ তারপরেই শুরু করেন বাড়ির পুজো ৷

photo
বামুহার দুর্গা প্রতিমা

1962 সালের কথা ৷ বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা আয়োজন করেছিলেন দুর্গাপুজোর ৷ আশপাশের 10-12 গ্রামের মধ্যে ওই একটিই স্কুল ৷ প্রায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে সেখানে । কথিত আছে, প্রথম বছর পুজো চলাকালীনই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তাকে দেবী ভবানী স্বপ্নাদেশ দেন, "এখানে পুজো করলে দিতে হবে নরবলি ৷ নাহলে পুজো হবে না ৷" এরপর থেকে আর ওই এলাকায় পুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ ৷ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সত্যেন হালদার বলেন, "প্রথমবার পুজো করেই বামুহা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরের ওই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয় । বেশ কয়েক বছর পুজো বন্ধ থাকার পর বামুহা গ্রামের হাটখোলায় আবার পুজো শুরু করা হয় । কিন্তু সেখানে পুজো শুরুর আগে বিদ্যালয় চত্বরে থাকা ভবানীর বেদিতে আগে পুজো করা হয় । শুধু তাই নয়, দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে বেদির সামনে প্রতিমা নিয়ে আসি ৷ বামুহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর প্রচলিত এই রীতি ও নিয়ম বহু বছর ধরেই চলে আসছে । অন্যথা হয়নি কোনও বছর ৷" গ্রামবাসীদের ধারণা, নিয়মের অন্যথা হলে বিপদ অনিবার্য ৷ এমন কী, জঙ্গলাকীর্ণ ওই বেদির কোনও গাছে হাত দেওয়ারও সাহস পান না কেউ ৷ কথিত আছে, একবার গ্রামের এক বাসিন্দা বেদি এলাকার আগাছা পরিষ্কার করতে গেছিলেন ৷ একবার কোদাল চালাতেই তাঁর ছেলের মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে শুরু করে । সে মারা যায় । সেই থেকে এলাকার কেউই বেদি ও বেদি সংলগ্ন এলাকায় গাছের পাতাতেও হাত দেন না ৷

দেখুন ভিডিয়ো

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিবাকর ঘোষ জানান, বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি এখানকার দুর্গাপুজো নিয়ে এই কাহিনী শুনে এসেছেন । এখন বামুহা গ্রামের দুর্গাপুজো করা হয় বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে হাটখোলা এলাকায় । সেখানে নির্মিত হয়েছে দুর্গা মন্দির । তবে জঙ্গলাকীর্ণ হলেও বিদ্যালয় চত্বরে থাকা দেবী ভবানীর বেদি ঘিরে বিশ্বাস, ভয়, ভক্তি আজও রয়ে গেছে বামুহার বাসিন্দাদের মনে ।

photo
হাটখোলা এলাকার পুজো
Intro:রায়গঞ্জ, ২৬ সেপ্টেম্বর, প্রসুন মৈত্র: এখানে দূর্গাপুজো করলে নরবলি দিতে হবে এমনই দৈববাণী শোনেন পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা, প্রথম বছর পুজো করার পর আর দূর্গাপুজো করার সাহস দেখাতে পারেননি রায়গঞ্জ ব্লকের বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা। ১৯৬২ সালের এই ঘটনার পর কয়েক বছর পুজো বন্ধ রাখেন গ্রামের বাসিন্দারা। তবে এখন গ্রামের হাটখোলায় হয় বামুহা গ্রামের সার্বজনীন দূর্গাপুজো৷ কিন্তু এখনও স্কুল চত্বরে থাকা সেই পুরানো বেদীতে আগে পুজো দিয়ে হাটখোলার মন্দিরে দূর্গাপুজা শুরু হয়। শুধু তাই নয় গ্রামের কোনও বাড়িতে যেকোনও পুজো হলে আগে এই বেদীতে ফুল বেলপাতা ভোগ দিয়ে পুজো করে পরে বাড়ির পুজো সারেন গ্রামের বাসিন্দারা। এমনটাই করে আসছেন রায়গঞ্জ ব্লকের শেরপুর গ্রামপঞ্চায়েতের বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা। বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে থাকা ভবানি মায়ের এই বেদী এতটাই জাগ্রত বলে এলাকার মানুষের বিশ্বাস যে পরিবারের কোনও ক্ষতি হয়ে যাবে এই আতঙ্কে জঙ্গলাকীর্ণ বেদী সংলগ্ন গাছের একটি পাতাতেও হাত দেননা তারা। গাছের একটি পাতাও ছুয়ে দেখেনা বামুহা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।

আশপাশের দশ বারোটি গ্রামের মধ্যে একটি স্কুল যেখানে প্রায় কয়েকশো ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে। রায়গঞ্জ ব্লকের এই স্কুলের নাম বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মাঠের একধারে রয়েছে দেবী ভবানীর বেদী। আজ থেকে ৫৭ বছর আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এবং বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা এখানেই আয়োজন করেছিল দেবী দূর্গার আরাধনা। কথিত আছে প্রথম বছর পুজো চলাকালীনই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তাকে দেবী মা ভবানী সপ্নাদেশ দিয়েছিলেন এখানে তাঁর পুজো করতে হলে নরবলি দিতে হবে নইলে তাঁর পুজো হবেনা। গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা সত্যেন হালদার জানালেন প্রথমবার পুজো করেই বামুহা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরের এই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর পুজো বন্ধ থাকার পর বামুহা গ্রামের হাটখোলায় দেবী দূর্গার পুজো আবার শুরু করা হয়। কিন্তু হাটখোলার মন্দিরে ষষ্ঠী থেকে দশমী পুজো শুরু করার আগে বিদ্যালয় চত্বরে থাকা এই বেদীকে আগে পুজো করেন তাঁরা। শুধু তাই দেবী দূর্গার বিসর্জন দেওয়ার আগে এই বেদীর সামনে দূর্গা প্রতিমা নিয়ে এসে দেখা করিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এটাই বামুহা গ্রামের সার্বজনীন দূর্গাপুজোর প্রচলিত রীতি ও নিয়ম। এর অন্যথা করলে গ্রামে বিপদ অনিবার্য বলে ধারনা গ্রামের বাসিন্দাদের। বিদ্যালয়ে থাকা জঙ্গলাকীর্ণ এই বেদীতে বা কোনও গাছে হাত দেওয়ার সাহস পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেন না। কথিত আছে একবার গ্রামের এক বাসিন্দা বেদী এলাকার আগাছা পরিষ্কারের জন্য একবার কোদাল চালাতেই তাঁর বাড়িতে থাকা সুস্থ সবল ছেলে মুখে রক্ত উঠে মারা যায়। সেই থেকে এলাকার হিন্দু কি মুসলিম কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ বেদী ও বেদী সংলগ্ন এলাকায় হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দিবাকর ঘোষ বলেন, বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি এখানকার দূর্গাপুজো নিয়ে এই কাহিনী শুনে এসেছেন। এখন বামুহা গ্রামের দূর্গাপুজো করা হয় বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরত্বে হাটখোলা এলাকায়। আজ সেখানে নির্মিত হয়েছে দেবী দূর্গার মন্দির। তবে জঙ্গলাকীর্ণ হলেও বিদ্যালয় চত্বরে থাকা দেবী ভবানীর বেদীকে ঘিরে বিশ্বাস আর ভয় ভক্তি আজও রয়ে গিয়েছে বামুহা গ্রামের মানুষের মনে।

বাইট ১) সত্যেন হালদার ( গ্রামবাসী)
২) মুস্তাফা মহম্মদ ( গ্রামবাসী)
৩) দিবাকর ঘোষ ( প্রধানশিক্ষক, বামুহা তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়)Body:AbcdConclusion:Abcd
Last Updated : Sep 28, 2019, 8:01 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.