রায়গঞ্জ, 14 জুন : লকডাউনের জেরে সংসারে দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট ৷ চারজনের পরিবারে দুই বেলার খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পেশায় শাক-সবজি বিক্রেতা নারায়ণ সাহাকে ৷ এই পরিস্থিতিতে সংসারের আর্থিক সংকট দূর করতে শাক বিক্রি করছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুশান্ত সাহা৷
দীর্ঘদিন ধরে রায়গঞ্জের মোহনবাটি বাজারে শাক-সবজি বিক্রি করছেন মিলনপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ সাহা ৷ ওতেই যা ইনকাম ৷ সেই দিয়েই চলত সংসার ৷ দুই-ছেলের পড়াশোনা ৷ কিন্তু কোরোনা মোকাবিলায় দেশে লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই অন্ধকারের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে নারায়ণবাবুর জীবনে ৷ লকডাউনের জেরে ব্যবসায় ভাটা পড়তে থাকে ৷ সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে আর্থিক সংকট ৷ প্রথম প্রথম সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে চললেও ৷ পরবর্তীতে সে টাকাও প্রায় শেষে দিকে পৌঁছায় ৷ এই পরিস্থিতিতে বাবার কষ্ট কিছুটা কমাতে নিজেই রায়গঞ্জের বিধাননগর বাজারে শাক বিক্রি করছে সুশান্ত ৷
রায়গঞ্জের মোহনবাটি উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সুশান্ত ৷ এই বছরই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভরতি হত সে৷ কিন্তু তার স্বপ্নে জল ঢালল লকডাউন ৷ উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল৷ হয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি পরীক্ষা৷ কিন্তু কোরোনা আতঙ্কে দেশজুড়ে জারি হয় লকডাউন ৷ সেই সঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পঠন-পাঠন, পরীক্ষা ৷ তারপর থেকে বাড়িতেই দিন কাটছিল সুশান্তের ৷ এই পরিস্থিতিতে বাবার কষ্ট ও সংসারের ভাগ্য ফেরাতে দিনের ফাঁকা সময়টা বাজারে শাক বিক্রি করছে সুশান্ত ৷ বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে সকাল সকাল বিধাননগর বাজারে রোজ পৌঁছে যায় সে ৷ কখনও সারা দিনে 100 থেকে 150 টাকা রোজগাড় হয়, তো কখন তাও হয় না৷ কিন্তু যেটাই হয় দিনের শেষে বাড়ি গিয়ে বাবার হাতে তুলে দেয় সেই উপার্জন ৷
সুশান্ত জানায়, "বাড়ি একটা ছোটো ভাই আছে ৷ মা আছে ৷ লকডাউনের জেরে বাবার একার পক্ষে পুরো সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না ৷ আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে আমাকেই কিছু একটা করতে হত ৷ সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ যে কটা টাকা উপার্জন হয় তা দিনের শেষে বাবার হাতে তুলে দেই ৷ এই পরিস্থিতিতে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভালো লাগে ৷"