কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি: ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢোকানোর চক্রান্ত রুখতে এবার আরও কঠোর অবস্থান নিল নবান্ন। শনিবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে হবে এবং যে কোনও রকম অনিয়ম কঠোরভাবে রোখা হবে।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন একাধিক দফতরের সচিবরাও। রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, "ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। প্রতিটি আবেদন যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে।" কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় যদি অস্বাভাবিক সংখ্যক ভোটার কার্ডের আবেদন জমা পড়ে, তাহলে সেখানে বিশেষ নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ময়দানে নেমে তদন্ত করতে হবে-এদিন এই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
একাধিক জেলায় ভূতুড়ে ভোটার:
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নদিয়া, দক্ষিণ 24 পরগনা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় ভূতুড়ে ভোটারের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। মুখ্যসচিব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "যদি কোনও প্রশাসনিক আধিকারিক এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।"
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পরেই নবান্নের তৎপরতা:
কয়েকদিন আগেই বাজেট অধিবেশনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন যে, "অনলাইন ভোটার তালিকার মাধ্যমে কারসাজি চলছে। নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে এই কাজ করা হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিও এতে যুক্ত রয়েছে।" মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, এক "ভূতুড়ে রাজনৈতিক দল" বিহারের বাসিন্দাদের নাম অনলাইনে ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের পর দলীয় স্তরে এই নিয়ে তৎপরতা দেখা যায়। এবার প্রশাসনিক স্তরেও এই নিয়ে তৎপরতা শুরু হল। তাঁর এই অভিযোগের পরেই নবান্নে মুখ্যসচিবের এই জরুরি বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল। বালি পাচার, অর্থ ব্যয় ও বাংলার বাড়ি প্রকল্প নিয়েও নির্দেশভোটার তালিকা ছাড়াও এদিনের বৈঠকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বালি পাচার রোধে কড়া ব্যবস্থা:
জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অবৈধ বালি খাদান রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিমধ্যেই 700 হেক্টর জমিতে বালি খাদানের জন্য নিলাম ডাকতে বলা হয়েছে।
অর্থ খরচে শিথিলতা চলবে না:
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ অর্থ এখনও একাধিক জেলা পুরোপুরি খরচ করতে পারেনি। মুখ্যসচিব স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, "মার্চের মধ্যেই এই টাকা খরচ করতে হবে।"
'বাংলার বাড়ি' প্রকল্পের সমস্যার সমাধান:
অনেক উপভোক্তা জমি সংক্রান্ত সমস্যা বা অন্যান্য কারণে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা পাননি। সেই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
পরিকাঠামো নজরদারিতে নতুন অ্যাপ:
প্রশাসনের তরফে নতুন অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই অ্যাপের কার্যকারিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।নবান্নের এই বৈঠকের পর প্রশাসনিক তৎপরতা যে আরও বাড়বে, তা স্পষ্ট। ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির যথাযথ বাস্তবায়নে এবার আরও কঠোর মনোভাব নিচ্ছে রাজ্য সরকার।