রায়গঞ্জ, 29 জুলাই : পারিবারিক শিল্পচর্চাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন ৷ একের পর এক পাথরের মূর্তি তৈরি করে চলেছেন উত্তরবঙ্গের শিল্পী ৷ তাঁর বাড়ি রায়গঞ্জের দেবীনগর দেবপুরীতে, নাম শ্যামসুন্দর পাল।
তাঁর দাদু গোপালচন্দ্র পালের তৈরি ভাস্কর্যের নিদর্শন রায়গঞ্জ শহরকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তুলেছে। দাদুকে চোখে না দেখলেও তাঁর সেই কীর্তিকে এবার সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন শ্যামসুন্দর।
পাথর কেটে একের পর এক তৈরি করে চলছেন দেবদেবীর মূর্তি থেকে মনীষীদের মূর্তি। বর্তমানে শুধু নিজের রাজ্য বা দেশই নয়, বিদেশের বাজারেও তাঁর তৈরি পাথরের মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে।
আরও পড়ুন : ভিক্ষাবৃত্তি করতে দিল্লিতে গিয়ে দুয়ারে-দুয়ারে ঘুরছেন, মমতাকে আক্রমণ সায়ন্তনের
রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের ছাত্র শ্যামসুন্দর পাল ৷ বিসিএ নিয়ে পড়াশুনা শেষ করেছেন শ্যামসুন্দর। চাকরির জন্য বসে না থেকে বছর পঁচিশের এই যুবক নিজেকে নিয়োজিত করেছেন পারিবারিক শিল্পকলা ভাস্কর্যের কাজে।
দাদু গোপালচন্দ্র পাল একজন প্রখ্যাত ভাস্কর । তাঁর তৈরি ভাস্কর্যের নিদর্শন রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে বিরাজমান। বাবা গৌর পালও সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে পুরোপুরি পৈতৃক শিল্পকর্মে নিয়োজিত হয়েছেন।
সেই পরিবারেরই সন্তান শ্যামসুন্দর নিজের পারিবারিক শিল্পচর্চাকে ব্রত করে দেশ বিদেশে পাথরের মূর্তি নির্মাণ করে জোগান দিয়ে চলেছেন। রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগরে দেবপুরী মন্দির থেকে কিছুটা দক্ষিণে এগোলেই শুনতে পাওয়া যায় বড় বড় পাথরের চাঁইয়ের উপরে ছেনি আর হাতুড়ির ঠক ঠক শব্দ। দিনরাত অবিরাম পাথর কেটে শ্যামসুন্দর তৈরি করে চলেছেন একের পর এক অপরূপ পাথরের মূর্তি।
মূর্তি হাতে নিয়ে রঙ করতে করতে শ্যামসুন্দর জানালেন, পড়াশুনা শেষ করে চাকরির খোঁজের জন্য বসে না থেকে শুরু করেছিলাম পৈতৃক শিল্পকর্ম। সেই নেশাতেই বুঁদ হয়ে আজ শুধু সময় কাটে তার এই আর্ট স্টুডিওতেই।
শ্যামসুন্দর বলেন, "সময় পেলেই কম্পিউটার ল্যাপটপে চোখ বুলিয়ে খুঁজে নিই নিত্য নতুন ভাস্কর্যের ডিজাইন। শিখে নিচ্ছি নতুন নতুন ভাস্কর্যের কোর্স ৷" তাঁর কথায়, বেকার বলে কোনও শব্দ হয় না। প্রত্যেক মানুষই কিছু না কিছু কাজ করতে পারে এবং তা থেকেই নিজের আয় ও প্রতিপত্তি বাড়াতে পারে। পড়াশুনা শেষ করে অকর্মণ্য অবস্থায় বসে না থেকে নিজের পারিবারিক শিল্পকলার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শ্যামসুন্দর।
আরও পড়ুন : হিমাচল প্রদেশের মাউন্ট ইউনাম জয় মেমারির যুবকের
দাদু গোপালচন্দ্র পাল ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভাস্কর । রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর শিল্পকলার নিদর্শন। তরুণ শিল্পী শ্যামসুন্দর বলেন, "সেগুলো দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই কাজে নেমেছি। আমার লক্ষ্য এই শিল্পকর্মকে দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দেওয়ার। আমাদের কাজের চাহিদা প্রচুর। সেভাবে জোগান দিয়ে ওঠা যায় না। সাদা পাথর আসে রাজস্থান থেকে আর কালো পাথর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এনে ক্রেতাদের চাহিদা মতো তার রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়, ছেনি আর হাতুড়ির খোদাই আর রঙে। একাজে প্রচুর ধৈর্য ও সময় লাগে ৷" তাঁর চোখে স্বপ্ন, বুকে আত্মবিশ্বাস ৷ পারিবারিক এই শিল্পকলাকে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত করতেই হবে।