রায়গঞ্জ, 8 অক্টোবর : সালটা ছিল 1857 ৷ সিপাহী বিদ্রোহের আবহে উত্তাল বাংলা-সহ গোটা দেশ ৷ সেই বছরই পুজো শুরু হয়েছিল পূর্ববঙ্গের হরিপুরের জমিদার বাড়িতে ৷ পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার ঘনশ্যাম কুণ্ডু ৷ দশভূজার একটি হাতে একটি বিশেষ তরোয়াল তুলে দিয়েছিলেন তিনি ৷ সেই তরোয়ালের মালিক ছিলেন এক ‘সিপাহী’ ৷ ইংরেজের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি ৷ পরবর্তীতে সেই অস্ত্রই শোভা পায় জমিদার বাড়ি দেবীর আরাধ্যার হাতে ৷ দেশভাগের পর এই পুজোই উঠে আসে এপার বাংলার রায়গঞ্জে ৷ নিশীথ সরণীর রায়চৌধুরী বাড়িতে শুরু হয় দেবীবন্দনা ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : 288 বছর ধরে একচালা প্রতিমার পুজো মগরাহাটের বসু পরিবারে
হরিপুরের জমিদারবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্য শিবশঙ্কর রায়চৌধুরী ৷ তিনি জানান, পরবর্তীকালে ঘনশ্যাম কুন্ডুকে রায়চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ৷ সেই থেকে এই জমিদার বংশ রায়চৌধুরী পরিবার নামে পরিচিতি লাভ করে ৷ দেশভাগের পরই পরিবারের সদস্যরা এপারে এসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন ৷ রায়গঞ্জের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয় নগেন্দ্রবিহারী রায়চৌধুরীর উদ্যোগে ৷ কিন্তু, পুজোর প্রথা সঙ্গে আনলেও ‘সিপাহী’র ব্যবহৃত সেই তরোয়ালটি সঙ্গে আনতে পারেননি তিনি ৷ তাই দেবীর হাতে তুলে দেওয়া হয় রুপোর তৈরি একটি খড়্গ ৷ আজও সেই ঐতিহ্য মেনে চলেছেন রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা ৷
এই পুজোর বেশ কিছু স্বাতন্ত্র নিয়মাবলী রয়েছে ৷ অন্যান্য জায়গায় কলা বউ থাকে গণেশের পাশে ৷ এখানে কলা বউয়ের স্থান কার্তিকের পাশে ৷ তাছাড়া, পুজোর অন্ন ভোগে নুন, হলুদ ব্যবহার করা হয় না ৷ দশমীতে দেবীর বিসর্জন দেওয়া হলেও কাঠামো ভাসান দেওয়া হয় না ৷ পরে তুলে আনা হয় সেটি ৷ পরের বছর সেই কাঠামোতেই নতুন করে প্রতিমা তৈরি করা হয় ৷ তবে আগেকার দিনে নবমীতে মোষ বলি দেওয়া হত ৷ এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন : Durga Puja : দুর্গাপুজোয় করোনাবিধি নিয়ে 11 দফা নির্দেশিকা নবান্নর
পুজো উপলক্ষে ইতিমধ্যেই আয়োজন প্রায় সারা হয়ে গিয়েছে রায়চৌধুরী পরিবারের ৷ শিবশঙ্কর জানালেন, সারাবছর এই ক’টা দিনের জন্য অপেক্ষা করেন তাঁরা ৷ পরিবারের অনেকেই বাড়ির বাইরে অন্য শহরে থাকেন ৷ পুজোর দিনগুলোয় বাড়ি ফেরেন তাঁরা ৷ সকলে মিলে মেতে ওঠেন উৎসবে ৷ তাতে যোগ দেন পাড়া প্রতিবেশীরাও ৷