রায়গঞ্জ, 20 জুলাই : করোনা আবহে পর্যটক শূন্য রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাস ৷ কিন্তু তাতে কি ? নিভৃতে ভালই রয়েছে সেখানকার পরিযায়ী পাখিরা ৷ বরং পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা আরও বেড়েছে ৷ এমনটাই পর্যবেক্ষণ করেছেন রায়গঞ্জ বনবিভাগের কর্মীরা ৷ জনশূন্য কুলিক পক্ষীনিবাসে এখন শুধুই হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের কলরব ৷
রায়গঞ্জ শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে কুলিক নদীর ধারে বনাঞ্চলে গড়ে উঠেছে কুলিক পক্ষীনিবাস । 1.30 বর্গ কিলোমিটার কুলিক বনাঞ্চল জুড়ে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে পাখিরায়লয়টি গড়ে উঠেছে ৷ সরকারিভাবে তা নথিভুক্ত হয় 1985 সালে । ধীরে ধীরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে ৷ আর এখন এটা এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম পক্ষীনিবাস ৷ কুলিক অরণ্যের শাল, শিমুল, শিরীষ, আকাশমনি, খয়ের, অর্জুন এখন হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আস্তানা ৷ এখানে, মূলত শামুকখোল পাখির সংখ্যা বেশি ৷ তবে নাইট হেরন, ইগ্রেট, করমোরেন্ট, পানকৌড়ি সহ 164 প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে ।
প্রতিবছরই জুন মাসের শেষ ও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পরিযায়ী পাখিরা এই রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষীনিবাসে এসে ভীড় জমায় । সঙ্গী নির্বাচন করে তারা গাছের ডালে ডালে ঘর বাঁধে ৷ প্রজননের মাধ্যমে ডিম ফুটিয়ে শাবকের জন্ম দেয় । এরপর শুরু হয় শাবকদের উড়তে শেখানোর প্রশিক্ষণ । অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস মূলত এই সময় তাদের ভরা সংসার । আর এদের কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে কুলিক পক্ষীনিবাস । আবার শীত পড়তেই ডিসেম্বর মাস নাগাদ এইসব পরিযায়ী পাখিরা ফিরে যায় ।
প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা আবহে বন্ধ রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কুলিক পক্ষীনিবাস । ফলে পর্যটকদের আনাগোনা নেই ৷ নেই কোনও উপদ্রব । তার উপর পরিবেশ দূষণ কম হওয়ায় নিভৃতে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছে পরিযায়ী পাখিরা । ফলে আগের তুলনায় বাড়ছে পাখির সংখ্যাও । রায়গঞ্জ বন বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় বন আধিকারিক সীতাংশুকুমার গুপ্ত জানিয়েছেন, পর্যটক শূন্য হওয়ায় উপদ্রব কম থাকায় পাখিরা খুব ভাল রয়েছে । পাশাপাশি দূষণের পরিমাণও কমে যাওয়ায় কুলিক পক্ষীনিবাসে পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । আশা, চলতি বছরে কুলিক পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা 1 লাখ ছাড়িয়ে যাবে ।