রায়গঞ্জ, 18 এপ্রিল: 42 বছর ফটোগ্রাফি পেশার সঙ্গে যুক্ত রায়গঞ্জ উদয়পুরের বাসিন্দা বিকাশ সরকার । এর মধ্যে 25 বছর ফ্রিলান্স চিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন । তবে ভাগ্যের আশ্চর্য পরিহাস ৷ আজ সংসার চালাতে সেই মানুষটিকে স্টুডিয়োর সামনে বসে ফল বিক্রি করতে হচ্ছে ।
একসময় স্টুডিয়ো ব্যবসায় প্রচুর আয় হত । তখন স্টুডিয়ো ছিল হাতে গোনা কয়েকটি । আধুনিক ক্যামেরা আসেনি । ফিল্মে ছবি তুলে তা ডার্ক রুমে নিয়ে গিয়ে ওয়াশ করে খদ্দেরদের হাতে তুলে দিতেন । এই কাজ করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগত । ক্রেতারা হাসিমুখে তা সহ্য করতেন । বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পুজো এলেই ভিড় জমত এই স্টুডিয়োর সামনে । স্টুডিয়োতে তৎকালীন উন্নত ফ্লাশার, আধুনিক ডার্ক রুম তৈরি করেছিলেন । দীর্ঘদিন এই ফটোগ্রাফি পেশায় যুক্ত ছিলেন রায়গঞ্জ উদয়পুরের বাসিন্দা বিকাশ সরকার । রায়গঞ্জ মোহন সিংহ মার্কেটে তাঁর প্রতিভা স্টুডিয়োর বেশ নামডাক ছিল ৷
তৎকালীন সময়ে খুব বেশি মানুষ এই ফটোগ্রাফি পেশায় যুক্ত না থাকায়, দীর্ঘ 25 বছর চিত্র সাংবাদিকতাও করেছেন বিকাশ সরকার ৷ ইন্দিরা গান্ধি, অটল বিহারী বাজপেয়ি, লালকৃষ্ণ আডবানি থেকে শুরু করে জ্যোতি বসুর মতো নেতানেত্রীদের খুব কাছ থেকে ছবি তুলেছেন । তাঁর তোলা ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ৷
তবে দিন পালটেছে । সারা বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হওয়ায় মার খেয়েছে বিকাশ সরকারের ব্যবসা ৷ সকলের হাতে অ্যানড্রয়েড ফোন পৌঁছে যাওয়ার পর ক্ষতির মুখে পড়েছে ফটোগ্রাফি পেশা । এখন আর বিয়ে, অন্নপ্রাশনে তাঁর ডাক পড়ে না । পুজোর দিনগুলোতে টিন এজারদের ভিড় চোখে পড়ে না । কারণ হাতে রয়েছে স্মার্টফোন । সেই ফোনেই রয়েছে উন্নত ক্যামেরা । সেই ক্যামেরায় এক সে বড়কর এক ছবি তুলে নিচ্ছেন সবাই ৷
মোবাইলের ছবি হার্ড ডিস্কে সংরক্ষিত করে রাখার সুযোগও থাকছে । যখন, যেখানেই থাকুন মোবাইলে তোলা সম্ভব হচ্ছে । তাই এই উন্নত প্রযুক্তি সঙ্গে বেশ কিছুদিন লড়াই করার পর হার মানতে হয়েছে বিকাশ সরকারকে। এখন আর কেউই তাঁর স্টুডিয়োমুখী হন না । সারাদিন বসে থেকে দিনের শেষে প্রায় খালি হাতেই ফিরতে হয় । এর ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা ডার্ক রুম নষ্ট হয়ে গিয়েছে । ক্যামেরার সঙ্গে ব্যবহৃত দামি ফ্লাশার পড়ে থেকে থেকেই বিকল হয়েছে । কম দামে এই সমস্ত জিনিস বিক্রি করতে চাইলেও কেউ সেগুলি কিনতে এগিয়ে আসেন না ।
ব্যবসা সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে করোনা কালে ৷ কোনও উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্টুডিয়োর সামনেই ফলের দোকান করতে বাধ্য হন বিকাশ সরকার । আজ তিনি একজন ফল বিক্রতা । যে হাতে একদিন ধরা থাকত দামি ক্যামেরা, সেই হাতেই আজ উঠেছে দাঁড়িপাল্লা । মনের দিক থেকে মেনে নিতে না পারলেও, পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা মুঠো ভাত তুলে দিতে পারছেন, এটাই সান্ত্বনা বিকাশ সরকারের ।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলে সলমন খান শো, 999 থেকে শুরু টিকিটের মূল্য