গঙ্গারামপুর, 6 অগস্ট: তৃণমূলের মঞ্চে বিজেপির বিধায়ক। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে ডাকা তৃণমূলের বিক্ষোভ সমাবেশে হঠাৎ হাজির গঙ্গারামপুরের বিজেপি বিধায়ক সত্যেন রায়। সরাসরি তৃণমূলের মঞ্চে উঠে গিয়ে তাদের অভিযোগ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন মাইক হাতে ৷ রবিবার সেই মঞ্চেই দীর্ঘ বক্তৃতাও রাখেন বিজেপি বিধায়ক ৷ তৃণমূলের তোলা প্রশ্নের উত্তরও দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় বিধায়ককে। আর এই ঘটনাতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের মঞ্চে বিজেপির বিধায়ক উঠে যাওয়ার ঘটনায় তৃণমূলের তরফে অবশ্য এটাকে তাদের নৈতিক জয় হিসেবে দেখাতে চাইছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার জানান, তৃণমূলের যে দাবি, কার্যত সেই দাবিকে এদিন মান্যতা দিয়েছেন বিধায়ক সত্যেন রায়। অন্যদিকে, সত্যেন রায়ের দাবি অবশ্য, তিনি রাজনৈতিক সৌজন্যতার জন্যই ওই মঞ্চে গিয়েছিলেন ৷ এবং তৃণমূলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে রবিবার রাজ্য জুড়ে ব্লক স্তরে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ব্লকে দুপুর 12টা থেকে বিকেল 4টে পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করছে তৃণমূল। গঙ্গারামপুর ব্লকের বাতাসকুরি এলাকায় রাজ্য সড়কের উপরে গঙ্গারামপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক সত্যেন রায়ের বাড়ির রাস্তায় দুপুর থেকে অবস্থান বিক্ষোভে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। আবাস যোজনা এবং 100 দিনের কাজের প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগে মোদি সরকারকে নিশানা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি উঠে এসেছে মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান প্রসঙ্গও। একুশে জুলাই-এর মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে, 6 অগস্ট প্রত্যেক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে অবস্থান-বিক্ষোভের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে সেই কর্মসূচি বাতিল করা হয় আদালতের নির্দেশে। কিন্তু তার অন্য চিত্র ধরা পরল গঙ্গারামপুর বিধানসভায় বাতাসকুড়ি এলাকায় বিজেপি বিধায়কের বাড়ির থেকে 500 মিটার দূরত্বে।
গঙ্গারামপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক গঙ্গারামপুর থেকে বাড়ি ফেরার পথে তৃণমূল কর্মীরা, বিজেপি বিধায়ক সত্যেন রায়কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় ৷ পরবর্তীতে মাইক হাতে তুলে দিলে তিনি পাঁচ বছর তৃণমূলে থাকাকালীন কী কাজ করেছেন এবং সেই সময়কার অন্যান্য বিধায়করা কতটা কাজ করে তার কথা তুলে ধরেন। আর তাতেই ক্ষেপে ওঠে তৃণমূল কর্মীরা । তৃণমূল কর্মীরা বাতাসকুড়ি এলাকায় বিজেপি বিধায়ককে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন ৷ পাশাপাশি নিজেদের দাবিও তুলে ধরেন । যদিও তাতে কান না-দিয়ে বিজেপি বিধায়ক অবশ্য নিজের বক্তব্য শেষে বেরিয়ে যান ৷ এই বিষয়ে গঙ্গারামপুর ব্লকের নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, বাতাসকুড়ি এলাকায় বিজেপি বিধায়কের বাড়ির রাস্তায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা জমায়েত করে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বার্তা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে ব্লক স্তরে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি করার, তারই অঙ্গ হিসাবে এদিন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব উপস্থিত হয়েছিল ।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদ, রাজ্যজুড়ে ধরনায় তৃণমূল; পথে নামলেন অর্জুন-ববিরা
এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক সত্যেন রায় জানান, বিজেপি বিধায়কের বাড়ির মূল রাস্তায় মন্দিরের সামনে তৃণমূলের পক্ষ থেকে লোকজন জমায়েত করে বিক্ষোভ করে । তৃণমূলের পালটা তিনি বলেন, "রাজ্য কেন টাকা আনতে পারছে না তার হিসাব আমার কাছে কেন চাইবে ? বাংলার মানুষের কাজ হোক সেটাও আমি চাই। বিধায়কের কাছে জানতে চাইতেই পারে যে বিধায়ক কী কাজ করেছে। আমি তাদের জানিয়েছি, গত পাঁচ বছর যখন তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলাম সেই সময় আমি বিধায়ক হিসেবে প্রচুর কাজ করেছি ৷ যা অন্যান্য বিধায়করা করতে পারেননি।"