রায়গঞ্জ, 15 মে : রাজ্যে আংশিক লকডাউন, নেই কোনও কাজকর্ম ৷ এই অবস্থায় চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ায় সংসার টানা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ অভাব ও আর্থিক অনটন সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী ও তিন কন্যাকে আগুনে পুড়িয়ে নিজেও আত্মঘাতী হলেন এক ব্যক্তি ৷ মৃত্যু হল একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের ৷ শুক্রবার মধ্যরাতে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ থানার বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভরতপুর গ্রামে ।
শুক্রবার রাতে খাওয়ার পর সকলে ঘুমিয়ে পড়লে বন্ধ ঘরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন রাম ভৌমিক । আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে মৃত্যু হয় গৃহকর্তা রাম ভৌমিক (40), তাঁর স্ত্রী শঙ্করী ভৌমিক (32) এবং তাঁদের দুই মেয়ে পর্ণা (7) ও সরস্বতীর (4) । তাঁদের আরেক মেয়ে 12 বছরের রানি সম্পূর্ণ দগ্ধ হয়েও শনিবার সকাল অবধি জীবিত ছিল ৷ তাকে রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় রানি বলে, তার বাবাই সবার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়েছিল ৷ হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারও মৃত্যু হয় ৷
শুক্রবার মধ্যরাতে ঘটনা ঘটার পর শনিবার সকালে বিষয়টি প্রতিবেশীদের নজরে আসে ৷ তাঁরাই তৎক্ষণাৎ খবর দেন থানায় ৷ ঘটনাস্থলে আসে হেমতাবাদ থানার পুলিশ । কর্তা-গিন্নি এবং দুই মেয়ের মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে পাঠায় ৷ পাশাপাশি আর এক মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে ৷ কিছুক্ষণ পর হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার ৷ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
হেমতাবাদের ভরতপুরের কিসমত মালভুসা গ্রামে তিন কন্যাসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার ছিল রাম ভৌমিকের । ভুটভুটি গাড়ি চালিয়ে কোনওরকমে দিন গুজরান হচ্ছিল ৷ কিন্তু দিন পনেরো আগেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ সামাল দিতে রাজ্য সরকার আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় । তারপর থেকেই রামের রোজগার বন্ধ হয়ে যায় ৷ লকডাউনের জেরে কাজ না মেলায় প্রায় দিনই খালি হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছিল ৷ দেশে-রাজ্যে করোনা সংক্রমণের মতোই সংসারের অভাব-অনটনও প্রকট হচ্ছিল ৷ আর জুঝতে না পেরে নিলেন চরম সিদ্ধান্ত ৷
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মমতার ভাই অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের
প্রতিবেশীরা যখন টের পেয়ে ছুটে আসেন ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ কার দেহ কোনটা চেনার উপায় ছিল না ৷ কিন্তু এরই মধ্যে রাম ও শঙ্করীর বড় মেয়ে 12 বছরের রানিকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন তাঁরা ৷ তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁরও মৃত্যু হয় । স্থানীয়রা জানান, খুব ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত রাম যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁরা ৷ গত কয়েকদিন ধরে আংশিক লকডাউনের কারণে তাঁর যে রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার কথা স্বীকার করলেন প্রতিবেশীরা ৷ তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার প্রতিপালন করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে ৷
আরও পড়ুন: চিত্তরঞ্জনে রেলকর্মীর গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার