রায়গঞ্জ, 4 সেপ্টেম্বর : উন্নত প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেমে ভরসা নয় ৷ জীর্ণ অতীতকে আঁকড়ে ধরেই আজও গ্রামোফোন, কাঠের কলে গান শুনে তৃপ্তি মেটানোর পাশাপাশি নিঃসঙ্গ জীবনের সময় কাটান রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার বাসিন্দা অশীতিপর বিজয়কুমার দাস । যেসময় শুধুমাত্র ভয়েজ কমান্ডেই ইচ্ছেমতো গান শোনার চাহিদা মেটায় উন্নত প্রযুক্তি, ঠিক সেই সময়েই অতীতকে আঁকড়ে বেঁচে রয়েছেন রায়গঞ্জের এই বৃদ্ধ ৷ এখনও নিয়মিত গান শোনেন কাঠের কল, ফনোগ্রাফ অথবা গ্রামোফোনেই । উন্নতি প্রযুক্তি তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি । তিনি ধরে রেখেছেন সুরেলা কণ্ঠ শোনানোর প্রাচীন এই মাধ্যমকেই ।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বিজয়বাবু আগামী নভেম্বরে ছিয়াশিতে পড়বেন ৷ বছর কয়েক আগে স্ত্রী পরলোক গমন করেছেন ৷ কর্মসূত্রে সন্তানরা থাকেন বাইরে ৷ ফলে অশীতিপর বিজয়বাবুর দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে একাকিত্বে । তাঁর দোতলা বাড়ির প্রতিটি কোণায় রয়েছে শৌখিনতার ছোঁয়া । সবখানেই যেন প্রাচীনতা ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া । কাঠের ঘোড়া, মাটির এবং ধাতব মূর্তি রয়েছে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় । আসবাবপত্রেও রয়েছে অতীত দিনের ছোঁয়া । এই সব কিছুর মাঝে চোখে পড়ার মতো বিষয় হল তাঁর দীর্ঘদিনের পুরানো গ্রামোফোন ।
সত্তরের দশকের দোরগোড়ায় রায়গঞ্জ শহরেরই একটি দোকান থেকেই গ্রামোফোনটি কিনেছিলেন বিজয়বাবু ৷ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সাগর সেন, মীরার ভজন, হীরক রাজার দেশে, নাজিয়া হাসান, দেবব্রত বিশ্বাস- আরও কত রেকর্ড রয়েছে তাঁর সংগ্রহশালায় । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু বাতিল হয়ে গেলেও বিজয়ের গ্রামোফোনটি এখনও রয়েছে পুরানো মেজাজেই । মাঝে একবার পিন ভেঙে যাওয়ায় প্রায় দু'বছর অপেক্ষা করতে হয় সারানোর জন্য ৷ দিল্লি থেকে সেই পিন আনা হয় ৷ গ্রামোফোন সারানোর অভিজ্ঞতা স্থানীয় মিস্ত্রিদের নেই ৷ অনভ্যস্ত হাতে পড়ে একটি পিন ভেঙেও যায় ৷ ফের সেটি আনানোর ব্যবস্থা করা হয় কলকাতার চাঁদনি মার্কেট থেকে ৷ তারপর যন্ত্র সারিয়ে ফের সচল হয় ৷ বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র বিজয় দাস জানালেন, উন্নত প্রযুক্তি এসে গেলেও তিনি অতটা তাতে সড়গড় নন । গান শুনতে ভালবাসেন ৷ এবং তা শোনেন গ্রামোফোনেই ।
আরও পড়ুন : Jute Cultivation : পাটের দাম পাচ্ছেন না চাষিরা, সরকারি নিস্পৃহতায় পকেট ভরছে ফড়েদের