রায়গঞ্জ, 2 মার্চ: চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলার 72টি বিদ্যালয় (Schools in North Dinajpur on verge to close) । নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারই অঙ্গ হিসেবে এই সমস্ত সরকারি বিদ্যালয়গুলি তুলে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে । তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দাবি, ছাত্রসংখ্যা কম থাকার কারণে ভুগতে থাকা বিদ্যালয়গুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে । কীভাবে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়গুলি সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছে তারা রিপোর্ট দিয়েছেন। রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাইস্কুলের ছাত্রসংখ্যা ক্রমশই তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজ্যে 8 হাজার 301টি প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাইস্কুলকে চিহ্নিত করা হয়। এই সমস্ত বিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা তিরিশেরও কম। যার মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলায় রয়েছে 72টি স্কুল। এর মধ্যে প্রাথমিক 35, জুনিয়র হাইস্কুল 37টি । রাজ্য শিক্ষা দফতর এই বিদ্যালয়গুলির ছাত্রসংখ্যা কেন কম, সেই বিষয়গুলি জানতে চেয়েছে।
ছাত্রসংখ্যা কম হওয়ার কী কী কারণ রয়েছে তাও রিপোর্টে উল্লেখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে এই নির্দেশ আসার পরই তিনি তার রিপোর্ট রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে পেশ করেছেন। রাজ্য শিক্ষা দফতর এই রিপোর্ট পাঠানোর পরই শিক্ষক মহলে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রের অভাবে বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়া আশংকা করা হচ্ছে ৷ এর জেরে সেই সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হবে। হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রকে পাশের বিদ্যালয়ে ভরতি করে দেওয়া হবে।
বিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পাশ করে পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি করার ক্ষেত্রে অবিভাবকরা সমস্যার মধ্যে পড়েন। উচ্চমাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হলে অবিভাবকদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে না। তাই উচ্চমাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। দূরবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। পরিকাঠামোগত দিক থেক সব ঠিকঠাক থাকলেও ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না।
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি গৌরাঙ্গ চৌহান জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ছাত্রদের স্কুলমুখী করতে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারপরও কী কারণে ছাত্র সংখ্যা কমছে, সেই বিষয়গুলি নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে । নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক নির্মল বোস জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দিতে মরিয়া রাজ্য সরকার । সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন সংগঠিত করবে । বিদ্যালয়ের শিক্ষকের দাবি, উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতির আশায় ছাত্ররা স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রতিবাদ জানিয়ে তিন শতাংশ মহার্ঘভাতা প্রত্যাখান রায়গঞ্জের শিক্ষকের