বারাসত, 7 অগস্ট: বারাসতে ডেঙ্গি আবারও প্রাণ কাড়ল যুবকের । মৃতের নাম রহমত আলি । ঘটনাটি ঘটেছে বারাসত পৌরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনহাটিতে। জানা গিয়েছে, জ্বরে আক্রান্ত ওই যুবকের রক্তের রিপোর্টে ডেঙ্গি এনএসওয়ান পজিটিভ লেখা থাকলেও ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে মাল্টি অরগান ফেলিওর । তবে তা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার জেরেই যে হয়েছে, সেটাও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে মৃত সেখানে।
স্বভাবতই 22 নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে পরপর মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে । এর জন্য পৌরসভা এবং স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরকেই দুষছেন এলাকার বাসিন্দারা । যদিও তা অস্বীকার করে নাগরিকদের সচেতনতার অভাবকেই আবার দায়ী করছেন পৌর কর্তৃপক্ষ । তবে, এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত বারাসত পৌরসভার দিকে আঙুল তুলে সরব হয়েছে বাম নেতৃত্ব ।
এই মৃত্যুর জন্য এলাকার নিকাশিনালার অপরিচ্ছন্ন এবং জমা জলে মশার বাড়বাড়ন্তকেই দায়ী করেছেন মৃতের কাকা হাসানুর ইসলাম । তিনি বলেন, "না হচ্ছে নিকাশিনালা পরিষ্কার । আর না নেওয়া হচ্ছে মশা নিধনের উদ্যোগ । পৌর কর্তৃপক্ষ কোনও কিছুতেই ঠিকমতো ভূমিকা পালন করছে না । মশাবাহিত রোগে আজ আমার ভাইপোকে হারালাম । এরকম যেন আর কোনও মায়ের কোল খালি না-হয় । সেই দিকে নজর দিক পৌর প্রশাসন । শুধু এটুকুই বলব ৷"
আরও পড়ুন: 13 বছরের কিশোরীর প্রাণ কাড়ল ডেঙ্গি, স্থানীয় কাউন্সিলের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন
অন্যদিকে, বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা অশনি মুখোপাধ্যায় এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "নাগরিকদের সচেতন হতে হবে ৷" যা শুনে আবার পালটা তৃণমূল পরিচালিত বারাসত পৌরসভার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন স্থানীয় সিপিএম নেতা সুদীপ্ত দাস । ফলে ডেঙ্গি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছেই।
প্রসঙ্গত, বারাসত পৌরসভার এই 22 নম্বর ওয়ার্ডেই কিছুদিন আগে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে 13 বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল। তখনও সাধারণ মানুষের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁদের একাংশের ঘাড়েই দায় ঠেলতে দেখা গিয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণা সাহাকে। এবারও ডেঙ্গিতে যুবকের মৃত্যুর পর পৌরসভা নিজেদের দায়িত্ব পালনের বদলে সেই নাগরিকদের ঘাড়েই দায় ঠেলতে ব্যস্ত বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা । তা আরও স্পষ্ট হয়েছে ডেঙ্গি ইস্যুতে শাসক-বিরোধীর চাপানউতোর থেকেই ।
আরও পড়ুন: উত্তর 24 পরগনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা 600 ছুইছুই ! চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতর
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন বছর কুড়ির ওই যুবক। প্রথমে বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল । কিন্তু জ্বর না-কমায় শনিবার রহমতের রক্ত পরীক্ষা করা হয় স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেই রক্ত পরীক্ষার ডেঙ্গি ধরা পড়ে । এরপর সেদিনই রাতের দিকে তড়িঘড়ি যুবককে ভরতি করা হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । কিন্তু সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকমতো মেলেনি বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের ।
সেই কারণে পরদিন অর্থ্যাৎ রবিবার দুপুরে ডেঙ্গি আক্রান্ত ওই যুবককে বারাসত হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর রোড সংলগ্ন কাজিপাড়ার একটি নার্সিংহোমে । সেখানে আইসিইউতে ভরতি করে চিকিৎসা চলে রহমতের । যদিও সব চেষ্টা বৃথা হয়। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় ডেঙ্গি আক্রান্ত যুবকের । আর সোমবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্ক ছড়ায় চন্দনহাটি এলাকায় ।