বারাসত, 8 নভেম্বর: বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে (In laws alleged for beaten to death youth) । নিহত যুবকের নাম প্রসেনজিৎ দাস । ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই মঙ্গলবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় উত্তর 24 পরগনার জেলাসদর বারাসতে (Barasat) ।
অভিযোগ, ওই যুবককে প্রথমে ডেকে নিয়ে গিয়ে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় ব্যাপক মারধর করে কয়েকজন মিলে । তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে, পরে বাড়িতে এসে পরিবারের সামনেই প্রসেনজিৎকে চড়, থাপ্পড় মারা হয় বলেও অভিযোগ । মারধরের জেরে তাঁর সারা শরীরে কালশিটে দাগ পড়ে যায় । বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন যুবক । অসুস্থতার জেরে গত চারদিন ধরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন তিনি । শেষে সেখানেই জীবন যুদ্ধের কাছে হার মানেন প্রসেনজিৎ । কী কারণে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয় পরিবারের কাছে । নেপথ্যে স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নাকি দাম্পত্য কলহ? উত্তর খুঁজছে পুলিশ ।
জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ত্রিশের প্রসেনজিতের বাড়ি বারাসতের অশ্বিনীপল্লীর মালির বাগান এলাকায় । তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত । কয়েকমাস আগে মোনালি পাল নাথ নামে খেজুরতলার এক যুবতীর সঙ্গে প্রসেনজিতের বিয়ে হয়েছিল। প্রথমদিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তারপর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্য দাম্পত্য কলহ লেগে থাকত ।
অভিযোগ, ওই যুবক প্রায়শই মদ্যপান করতেন । তার জেরে পারিবারিক অশান্তি চরমে ওঠায় লক্ষ্মীপুজোর ঠিক মুখে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান যুবতী। পরের দিন ফোন করে মোনালির এক আত্মীয় শ্বশুরবাড়ির এলাকায় প্রসেনজিৎকে আসতে বলে কথা বলার অজুহাতে । ফোন পেয়ে সেদিনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে খেজুরতলায় যায় ওই যুবক । অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে কয়েকজন মিলে প্রথমে ব্যাপক মারধর করে । পরে বাড়িতে এসেও যুবককে আরও মারা হয় বলে অভিযোগ ।
প্রথমদিকে মারধরের কথা কাউকে সে না-জানালেও পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঘটনাটি জানতে পারেন পরিবারের লোকেরা । অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়িতে চিকিৎসক ডেকে যুবকের চিকিৎসা চললেও তাতে অবশ্য তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি । বরং দিনদিন তাঁর অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এরপর দেরি না-করে গত 26 অক্টোবর অসুস্থ প্রসেনজিৎকে ভরতি করা হয় বারাসত রথতলার কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে । সেখানেও কয়েকদিন চিকিৎসা চললেও শারীরিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি ওই যুবকের । শেষে 3 নভেম্বর রাতে বারাসত থেকে স্থানান্তরিত করে অসুস্থ প্রসেনজিৎকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে । সেখানে টানা তিনদিন চিকিৎসা চলে তাঁর । তবে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি তাঁকে ।
এদিকে ঘটনাটি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় । ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই কার্যত মুষড়ে পড়েছেন প্রসেনজিতের বৃদ্ধ বাবা-মা । শোকে বিহ্বল পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও । সকলেই চাইছেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় । সেই সঙ্গে ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবিও জানিয়েছে নিহতের পরিবার ।
আরও পড়ুন: পাওনা টাকা চাওয়ায় বেধড়ক মারধরের অভিযোগ, মৃত্যু ব্যক্তির
নিহত যুবকের মা নন্দিনী দাস বলেন, "ছেলের ভগ্নীপতি কুণাল ডাকায় ও গিয়েছিল ৷ প্রসেনজিৎ মদ খেত বলে আশান্তি হত বৌমার সঙ্গে ৷ কিন্তু ছেলে বৌমাকে মারত না কোনওদিন ৷ ছেলেকে উলটে মারল ৷ কে মেরেছে বুঝতে পারছি না ৷" কাকা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "প্রসেনজিতকে মারা হয়েছে ৷ কে মেরেছে বুঝতে পারছি না ৷ তাঁর সঙ্গে যে সবসময় ঘুরত তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৷ তাঁর কাছ থেকে কী বয়ান পেয়েছে পুলিশ জানি না ৷ একটা ভ্যান চালককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে থানায় ৷"
অন্যদিকে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নেমেছে বারাসত থানার পুলিশ । গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে ।