ETV Bharat / state

Durga Puja Dhak Story: পুজোয় বায়না নেই, বিড়ি বাঁধছেন অশোকনগরের মহিলা ঢাকিরা

অশোকনগরের ঢাকবাদক সজল নন্দী ৷ স্থানীয় মহিলাদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন অমূল্য চন্দ্র রিদম মিউজিক্যাল কলেজ ৷ যেখানে তিনি ওই মহিলাদের ঢাক বাজানোর তালিম দেন ৷ শুধু তাই নয় 2017 সাল থেকে ওই মহিলারা দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজান ৷ কিন্তু, করোনার জেরে গত 2 বছর ধরে কার্যত কর্মহীন তাঁরা ৷ বাধ্য হয়ে পুরনো জীবনে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে ৷

Women Dhakis of Ashoknagar are tying bidis for not getting Work in Durga Puja
পুজোয় বায়না নেই, বিড়ি বাঁধাছেন অশোকনগরের মহিলা ঢাকিরা
author img

By

Published : Sep 27, 2021, 9:10 PM IST

Updated : Sep 28, 2021, 8:29 AM IST

অশোকনগর (উত্তর 24 পরগনা), 27 সেপ্টেম্বর : কেউ করতেন বিড়ি বাঁধার কাজ, কেউ বা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ ৷ শিল্পী সজল নন্দীর ডাকে স্বনির্ভর হওয়ার আশায় অশোকনগরের নট্টপাড়ার মহিলারা তাঁদের ছন্দহীন জীবন ছেড়ে ঢাক কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ৷ তৈরি হয়েছিল মহিলা ঢাকির দল অমূল্য চন্দ্র রিদম মিউজিক্যাল কলেজ ৷ কয়েক বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে সংসারে হাল ফিরেছিল তাঁদের ৷ কিন্তু, করোনা আবহে তাঁদের সেই সুখের জীবন ফের একবার হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ কারণ পুজোর বাজেট কমিয়ে দিয়েছে ক্লাবগুলি ৷ এমনকি পুজোর জাঁকজমকও কমিয়ে ফেলা হয়েছে খরচ কমাতে ৷ ফলে আগের মতো আর পুজো মণ্ডপে ঢাক বাজানোর ডাক পাচ্ছেন না সেই সকল মহিলা ঢাকিরা ৷ কাজ না পেয়ে সংসার চালাতে পুরনো পেশায় ফিরছেন তাঁরা ৷ যে হাতের জাদুতে ঢাকের বাদ্দিতে মুখরিত হত পুজো মণ্ডপগুলি ৷ সেই হাতেই এবার বাধ্য হয়ে তুলে নিতে হচ্ছে বিড়ি বাঁধার কুলো ৷ অনেকে আবার ফিরেছেন পরিচারিকার কাজে ৷

women-dhakis-of-ashoknagar-are-tying-bidis-for-not-getting-work-in-durga-puja
মহিলা ঢাকির দল

এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে 2017 সালে 6 জন মহিলাকে নিয়ে অমূল্য চন্দ্র রিদম মিউজিক্যাল কলেজ নামে ওই ঢাকিদের দল তৈরি করেন সজল নন্দী ৷ অশোকনগর 3নং ওয়ার্ডের নট্টপাড়ার বাসিন্দা সজলবাবু ৷ তাঁর প্রচেষ্টায় আশেপাশের অঞ্চলের মহিলাদের তিনি এই ঢাকি দলের সঙ্গে যুক্ত করেন ৷ একে একে সদস্য সংখ্যা 6 থেকে বেড়ে 60 জনে গিয়ে দাঁড়ায় ৷ প্রথম বছর থেকেই পুজোয় ঢাক বাজানোর ডাক পেয়েছিলেন তাঁরা ৷

আরও পড়ুন : Mankundu Durga Puja: মানকুণ্ডুর খাঁ বাড়িতে অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা’ রূপে পূজিত হন

2017 সাল থেকে 2019 সাল, টানা তিন বছর পুজোর আগে নানা অনুষ্ঠান ও অনুশীলনের কারণে অবসর সময় পেতেন না ওই মহিলা ঢাকিরা ৷ রাজ্যের বাইরেও বহুবার ঢাক বাজানোর ডাক পেয়েছেন তাঁরা ৷ গিয়েছিলেন দেশের রাজধানী দিল্লিতেও ৷ পুজো ছাড়াও 12 মাসই কোনও না কোনও অনুষ্ঠানে ঢাক বাজানোর বায়না আসত তাঁদের ৷ সেই আয়ে পরিবারের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল ওই মহিলাদের ৷ কিন্তু, সেই সুখের সময়ে কাল হয়ে দেখা দিয়েছে করোনা ৷ বিগত 2 বছরে অল্প বিস্তর কাজ থাকলেও চলতি বছরে অবস্থা অনেকটাই খারাপ ৷

আরও পড়ুন : DurgaPuja : শরিক বিবাদে জৌলুসহীন 405 বছরের চিড়িমারসাই নন্দীবাড়ির পুজো

ঢাকি অঞ্জনা নন্দী বলেন, ‘‘এবার পুজোয় এতোটাই খারাপ অবস্থা যে, সংসার চালাতে আবার বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করতে হল ৷ এতো ভাল ভাল জায়গায় কাজ করার পরে নতুন করে আবার বিড়ি বাঁধতে কিছুটা আত্মসম্মানে বাঁধছে ৷ কিন্তু, কী করব বিড়ি বাঁধা ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই ৷’’

অন্য আর এক ঢাকি অঞ্জনা হালদার বলেন, ‘‘আর কয়েকদিন পরেই পুজো ৷ কিন্তু, কোনও বায়না নেই আমাদের ৷ এই পরিস্থিতিতে ছেলে-মেয়ের পুজোর নতুন জামা কাপড় কেনা ৷ তাঁদের বিভিন্ন ধরনের আবদার মিটাতে মালিককে বলে আবারও নতুন করে বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করলাম ৷ বসে থেকে কী করব ? বিড়ি বেঁধে দু'চার টাকা যাই আসুক তাতে সংসারের কিছুটা হলেও সাহায্য হবে ৷’’

আরও পড়ুন : Durga Puja : পীরের মাজারে ধ্বজা উড়িয়ে শুরু হয় চূড়ামণ রাজবাড়ির মাতৃ আরাধনা

ঢাকি সংগঠনের উদ্যোক্তা সজল নন্দী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দুই-তিনটে বায়নার কথা হয়েছে ৷ তবে, তার পরিশ্রমিক খুব কম দেওয়ার কথা বলেছে ৷ ফলে শেষ পর্যন্ত কী হবে এখনই বলা যাচ্ছে না ৷ তবে, যে কটা বায়না হোক না কেন, চেষ্টা করছি সকলকে কম-বেশি কাজ দিতে ৷ কাজ না থাকায় ওদের সংসারের হাল খুবই খারাপ ৷ গরিব পরিবারের মহিলাদের সমাজের উঁচুস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলাম ৷ কিন্তু, কাজ না পেয়ে তাঁরা সংসার চালাতে পুরনো পেশায় ফিরিছেন ৷ দেখে খুব খারাপ লাগছে ৷’’

তবে, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, সংগঠনের মহিলাদের সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অবিচল সজলবাবু ৷ তাঁরা সকলেই এখন দিন গুনছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ৷ আবার ঢাক কাঁধে পুজো মণ্ডপে পৌঁছানোর ৷

অশোকনগর (উত্তর 24 পরগনা), 27 সেপ্টেম্বর : কেউ করতেন বিড়ি বাঁধার কাজ, কেউ বা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ ৷ শিল্পী সজল নন্দীর ডাকে স্বনির্ভর হওয়ার আশায় অশোকনগরের নট্টপাড়ার মহিলারা তাঁদের ছন্দহীন জীবন ছেড়ে ঢাক কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ৷ তৈরি হয়েছিল মহিলা ঢাকির দল অমূল্য চন্দ্র রিদম মিউজিক্যাল কলেজ ৷ কয়েক বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে সংসারে হাল ফিরেছিল তাঁদের ৷ কিন্তু, করোনা আবহে তাঁদের সেই সুখের জীবন ফের একবার হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ কারণ পুজোর বাজেট কমিয়ে দিয়েছে ক্লাবগুলি ৷ এমনকি পুজোর জাঁকজমকও কমিয়ে ফেলা হয়েছে খরচ কমাতে ৷ ফলে আগের মতো আর পুজো মণ্ডপে ঢাক বাজানোর ডাক পাচ্ছেন না সেই সকল মহিলা ঢাকিরা ৷ কাজ না পেয়ে সংসার চালাতে পুরনো পেশায় ফিরছেন তাঁরা ৷ যে হাতের জাদুতে ঢাকের বাদ্দিতে মুখরিত হত পুজো মণ্ডপগুলি ৷ সেই হাতেই এবার বাধ্য হয়ে তুলে নিতে হচ্ছে বিড়ি বাঁধার কুলো ৷ অনেকে আবার ফিরেছেন পরিচারিকার কাজে ৷

women-dhakis-of-ashoknagar-are-tying-bidis-for-not-getting-work-in-durga-puja
মহিলা ঢাকির দল

এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে 2017 সালে 6 জন মহিলাকে নিয়ে অমূল্য চন্দ্র রিদম মিউজিক্যাল কলেজ নামে ওই ঢাকিদের দল তৈরি করেন সজল নন্দী ৷ অশোকনগর 3নং ওয়ার্ডের নট্টপাড়ার বাসিন্দা সজলবাবু ৷ তাঁর প্রচেষ্টায় আশেপাশের অঞ্চলের মহিলাদের তিনি এই ঢাকি দলের সঙ্গে যুক্ত করেন ৷ একে একে সদস্য সংখ্যা 6 থেকে বেড়ে 60 জনে গিয়ে দাঁড়ায় ৷ প্রথম বছর থেকেই পুজোয় ঢাক বাজানোর ডাক পেয়েছিলেন তাঁরা ৷

আরও পড়ুন : Mankundu Durga Puja: মানকুণ্ডুর খাঁ বাড়িতে অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা’ রূপে পূজিত হন

2017 সাল থেকে 2019 সাল, টানা তিন বছর পুজোর আগে নানা অনুষ্ঠান ও অনুশীলনের কারণে অবসর সময় পেতেন না ওই মহিলা ঢাকিরা ৷ রাজ্যের বাইরেও বহুবার ঢাক বাজানোর ডাক পেয়েছেন তাঁরা ৷ গিয়েছিলেন দেশের রাজধানী দিল্লিতেও ৷ পুজো ছাড়াও 12 মাসই কোনও না কোনও অনুষ্ঠানে ঢাক বাজানোর বায়না আসত তাঁদের ৷ সেই আয়ে পরিবারের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল ওই মহিলাদের ৷ কিন্তু, সেই সুখের সময়ে কাল হয়ে দেখা দিয়েছে করোনা ৷ বিগত 2 বছরে অল্প বিস্তর কাজ থাকলেও চলতি বছরে অবস্থা অনেকটাই খারাপ ৷

আরও পড়ুন : DurgaPuja : শরিক বিবাদে জৌলুসহীন 405 বছরের চিড়িমারসাই নন্দীবাড়ির পুজো

ঢাকি অঞ্জনা নন্দী বলেন, ‘‘এবার পুজোয় এতোটাই খারাপ অবস্থা যে, সংসার চালাতে আবার বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করতে হল ৷ এতো ভাল ভাল জায়গায় কাজ করার পরে নতুন করে আবার বিড়ি বাঁধতে কিছুটা আত্মসম্মানে বাঁধছে ৷ কিন্তু, কী করব বিড়ি বাঁধা ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই ৷’’

অন্য আর এক ঢাকি অঞ্জনা হালদার বলেন, ‘‘আর কয়েকদিন পরেই পুজো ৷ কিন্তু, কোনও বায়না নেই আমাদের ৷ এই পরিস্থিতিতে ছেলে-মেয়ের পুজোর নতুন জামা কাপড় কেনা ৷ তাঁদের বিভিন্ন ধরনের আবদার মিটাতে মালিককে বলে আবারও নতুন করে বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু করলাম ৷ বসে থেকে কী করব ? বিড়ি বেঁধে দু'চার টাকা যাই আসুক তাতে সংসারের কিছুটা হলেও সাহায্য হবে ৷’’

আরও পড়ুন : Durga Puja : পীরের মাজারে ধ্বজা উড়িয়ে শুরু হয় চূড়ামণ রাজবাড়ির মাতৃ আরাধনা

ঢাকি সংগঠনের উদ্যোক্তা সজল নন্দী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দুই-তিনটে বায়নার কথা হয়েছে ৷ তবে, তার পরিশ্রমিক খুব কম দেওয়ার কথা বলেছে ৷ ফলে শেষ পর্যন্ত কী হবে এখনই বলা যাচ্ছে না ৷ তবে, যে কটা বায়না হোক না কেন, চেষ্টা করছি সকলকে কম-বেশি কাজ দিতে ৷ কাজ না থাকায় ওদের সংসারের হাল খুবই খারাপ ৷ গরিব পরিবারের মহিলাদের সমাজের উঁচুস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলাম ৷ কিন্তু, কাজ না পেয়ে তাঁরা সংসার চালাতে পুরনো পেশায় ফিরিছেন ৷ দেখে খুব খারাপ লাগছে ৷’’

তবে, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, সংগঠনের মহিলাদের সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অবিচল সজলবাবু ৷ তাঁরা সকলেই এখন দিন গুনছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ৷ আবার ঢাক কাঁধে পুজো মণ্ডপে পৌঁছানোর ৷

Last Updated : Sep 28, 2021, 8:29 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.