বারাসত, 28 ফেব্রুয়ারি: দত্তপুকুরের কদম্বগাছিতে 'দিদির সুরক্ষা কবচ' কর্মসূচিতে মঙ্গলবার যোগ দিতে যান বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার ৷ এদিন যখন কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর গাড়ি লক্ষ্য কর 'চোর চোর' স্লোগান দেন তৃণমূলেরই কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ৷ এমনকি আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই সাংসদকে ভোট না-দেওয়ারও ডাক দিয়েছেন তাঁরা (Slogan against Kakoli Ghosh Dastidar) ৷
তৃণমূল বিধায়ক রহিমা মণ্ডলের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা । বিশেষ করে মহিলা কর্মীরা এলাকার অনুন্নয়ন এবং সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা না-পাওয়ার জন্য বিধায়ককেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে একদিকে যখন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা জোটবদ্ধ হয়ে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন । অন্যদিকে তখন 'দিদির সুরক্ষা কবচ'-কর্মসূচিতে ডাক না-পেয়ে সাংসদ এবং বিধায়ক দু'জনের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানিয়ে পঞ্চায়েত থেকে গণইস্তফা দিয়েছেন 23 জন তৃণমূল সদস্য । আরও একজন ইস্তফা দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদ থেকে ।
এই ঘটনাক্রম ঘিরে মঙ্গলবার দিনভর সরগরম হয়ে ছিল উত্তর 24 পরগনার কদম্বগাছি অঞ্চল । স্থানীয় সূত্রে খবর, সূচি মেনে এদিন 'দিদির সুরক্ষা কবচ' কর্মসূচিতে যোগ দিতে কদম্বগাছি অঞ্চলে যাচ্ছিলেন বারাসাতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার । টাকি রোড ধরে তাঁর কনভয় যখন গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছিল, তখন কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের কার্যালয় সামনে উপস্থিত কর্মীরা সাংসদের গাড়ি লক্ষ্য স্লোগান দেন ।
আরও পড়ুন : বাগদার সৎ রঞ্জনের 'সৎ জামাইয়ের' নিয়োগ কি অসৎ পথে ? উঠেছে একাধিক প্রশ্ন
কিন্তু, সেদিকে নজর না দিয়ে কাকলি তাঁর কনভয় নিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যান ৷ এরপরই সাংসদকে হাতের কাছে না-পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত দলের কর্মী-সমর্থকরা । দলীয় এক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, "2024 এর লোকসভা ভোটে আবারও এখানে আসতে হবে কাকলি ঘোষদস্তিদারকে । তখন বুঝিয়ে দেওয়া হবে তাঁকে ।" এরপরই কাকলির বিরুদ্ধে 'চোর চোর' স্লোগান দিতে শোনা যায় আরও এক তৃণমূল কর্মীকে ।
রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়ে সেই কর্মীকে আরও বলতে শোনা গিয়েছে, "সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার একনম্বর চোর । বিধায়ক রহিম মণ্ডলও চোর । এদের একটি ভোটও দেবেন না।" পঞ্চায়েতের কার্যালয়ের সামনে যখন এই পরিস্থিতি তখন বারাসত 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামানকে আবার নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে । অভিযোগ, সাংসদের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হলে সেই পাথর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তৃণমূল নেতা আসাদুজ্জামানের পায়ে লাগে । তাতে তিনি আহত হন ।
সাংসদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনের অভিযোগ, দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচির যে রুট ম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল সেই সমস্ত জায়গার প্রতিটিতে সাংসদ যাননি । তার মধ্যে রয়েছে কদম্বগাছি পঞ্চায়েতও । উলটে, সাংসদ তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের নিয়ে একটি বাগান বাড়িতে বৈঠক করেন । সেখানেও ডাকা হয়নি আসাদুজ্জামান ঘনিষ্ঠ নেতাদের। যার জেরে ক্ষোভ আরও বাড়ে সাংসদের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের । গোটা কর্মসূচিতে ডাক না-পেয়ে এদিন বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে গণইস্তাফার কথা ঘোষণা করেন কদম্বগাছি অঞ্চলের 24 জন তৃণমূল সদস্য । এদের মধ্যে আবার 23 জন কদমগাছি পঞ্চায়েতের সদস্য বলে জানা গিয়েছে ।
এই পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান গৌতম পাল বলেন, "কী কারণে বারবার দলীয় কর্মসূচিতে আমাদের ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারছি না । দলের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে দলটা নিষ্ঠার সঙ্গে করে আসছি । তারপরও সেই একই ঘটনা । এদিনও দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে ডাকা হয়নি পঞ্চায়েতের অধিকাংশ সদস্যকে । তাই, সকলের মনে হয়েছে নাম কে ওয়াস্তে দলের পঞ্চায়েত সদস্য থেকে লাভ নেই । সকলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্চায়েতের সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার । সেই মতো 23 জন পঞ্চায়েত সদস্য এবং একজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ইস্তফা দিয়েছে । ই-মেল করে তা সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং তৃণমূল ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷"
আক্রান্ত তৃণমূল নেতা আসাদুজ্জামান বলেন,"এদিন যারা দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে এসেছিল তাঁদের বেশিরভাগই দেগঙ্গা অঞ্চলের । স্থানীয় কেউ সেভাবে ছিল না । কদম্বগাছি অঞ্চল সভাপতির লোকজনই পাথর ছুড়ে আহত করেছে আমাকে । বিষয়টি সাংসদকে জানিয়েছি ।" যদিও গোটা ঘটনাটি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ।
আরও পড়ুন : সাগরদিঘি মডেলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন চাইছে কংগ্রেস
এই নিয়ে শাসকদলের দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির । বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র জানান, তৃণমূল সাংসদের একনায়কতন্ত্র কেউ মেনে নিতে পারছে না । আমরা এতদিন চোর চোর স্লোগান দিতাম ৷ এখন তৃণমূল নেতা বিধায়ক এবং সাংসদকে ঘিরে সেই আওয়াজই উঠছে দলের ভিতর থেকে । এরকম আরও অনেক কিছু হবে । শুধু দেখতে থাকুন।