ব্যারাকপুর, 1জানুয়ারি: নবর্ষের রাতে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করা হল তৃণমূল কর্মীকে। মৃতের নাম অভিজিৎ বিশ্বাস ওরফে বিষ্ণু (25)। অভিযোগ, স্থানীয় দুষ্কতীদের বিরুদ্ধে ৷ তোলার টাকা দিতে না-চাওয়ায় ওই তৃণমূল কর্মীকে রাস্তায় ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আততায়ীদের রোষানলে পড়ে আক্রান্ত হয়েছেন নিহতের দাদা বিশ্বজিৎও । ঘটনায় সোমবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর 24 পরগনার ঘোলার বিলকান্দা 1 নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা ।
জানা গিয়েছে, বিলকান্দা 1 নম্বর পঞ্চায়েতের অপূর্ব নগর এলাকায় বাড়ি অভিজিৎ বিশ্বাসের । এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত তিনি ৷ অভিযোগ, কয়েকদিন আগেই তাঁর চানাচুরের কারখনায় ভাঙচুর চালায় এলাকার বেশ কয়েকজন ৷ সেইসময় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ঘোলা থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলেই অভিযোগ । সেই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা হাতে নৃশংসভাবে খুন হলেন এই তৃণমূল কর্মী।
পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার রাতে বর্ষবরণের রাতে বাড়ি কাছে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তৃণমূল কর্মী অভিজিৎ বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন পিসতুতো দাদা বিশ্বজিৎও । সেও এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত । আচমকা পিছন থেকে এসে জনাকয়েক দুষ্কৃতী প্রথমে বিশ্বজিতের মাথায় রিভলবারের বাঁট দিয়ে আঘাত করে ৷ সেই দৃশ্য দেখে দাদাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন অভিজিৎ । তখন তাঁর ওপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা । ধারালো অস্ত্র এবং ইট নিয়ে দুষ্কৃতীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিজিতের ওপর। শুরু হয় মারধর। এরপর ইট দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে দেয় হামলাকারীরা । স্থানীয় লোকজন ছুটে আসার আগেই রাতের অন্ধকারে চম্পট দেয় আততায়ীরা ।
এদিকে,রক্তাক্ত অবস্থায় ওই দুই তৃণমূল কর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই আহত অভিজিৎ-কে স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে। সেখানেই সোমবার ভোরের দিকে মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও অভিজিতের পিসতুতো দাদাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে ।
এদিকে, তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়ে যায় এলাকায় । নিহতের দাদা প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, "এলাকার একটি ফুচকার দোকানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম । তখনই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালানো হয় আমাদের ওপর।চোখের সামনেই মামাতো ভাইকে ইট দিয়ে থেঁতলে খুন করে বাদল মণ্ডল ও তার লোকজন।এরা সকলেই এলাকায় কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবে পরিচিত।থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।এভাবে যদি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে,তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? আমরা চাই খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক পুলিশ প্রশাসন ।"একই সুর শোনা গিয়েছে নিহতের স্ত্রী মৌ বিশ্বাসের গলাতেও। তাঁর কথায়,"আমার যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।কিন্তু খুনিরা যেন রেহাই না পাই"।
কী কারণে ওই তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে, এর পিছনে পুরনো কোনও শত্রুতা থাকতে পারে।গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। যা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘোলা থানার পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ধরতে সবরকমের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এখনও অধরা খুনিরা ৷
আরও পড়ুন: