দত্তপুকুর, 13 অগস্ট: যত কাণ্ড দত্তপুকুরের কদম্বগাছিতে ! এবং যত ঘটনা তৃণমূলের অন্দরে ৷ শনিবারই দলেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কাছে তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধান পদের প্রার্থীর পরাজয় হওয়ায় দুঃখে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের অপর গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার এক তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল দলেরই যুব অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে । যা ঘিরে দত্তপুকুরের কদম্বগাছি অঞ্চলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে উঠল । পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাতের এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে কদম্বগাছি অঞ্চলের যুব তৃণমূল সভাপতি মাহাবুব হোসেন ওরফে নয়নকে । ধৃতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে দত্তপুকুর থানার পুলিশ । দত্তপুকুরের কদম্বগাছি অঞ্চলে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কিছু নয় । আগেও বহুবার এখানে দলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠী সংঘাতে জড়িয়েছে ।
সংঘাতের জেরে কখনও হামলা, আবারও পালটা হিংসার ঘটনা ঘটেছে কদম্বগাছিতে । গোষ্ঠী বিবাদ মেটাতে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব দু'পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও তা মেটেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের । মূলত এলাকার কর্তৃত্ব দখল নিয়ে বারাসত 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমানে তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য আসাদ-উদ-জামান গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ দলেরই কদম্বগাছি অঞ্চল সভাপতি নিজামুল কবির গোষ্ঠীর । বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এতটাই সংঘাত যে শনিবার তা স্পষ্ট হয় কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরেও ।
অভিযোগ, দলীয় হুইপ অমান্য করেই পার্টির মনোনীত প্রধান, উপপ্রধানের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজামুল কবিরের ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সদস্যরা হাত মেলান আইএসএফ সদস্যদের সঙ্গে । তার ফলে ভোটাভুটিতে দলের প্রধান, উপপ্রধান পদের অফিসিয়াল প্রার্থীকে পরাজিত হতে হয় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কাছে । আইএসএফ-এর সমর্থনে কদম্বগাছি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করে বিক্ষুব্ধরা । এরপরই একদিকে শূন্যে গুলি চলে । অন্যদিকে বোর্ড গঠনের আনন্দে বোমা ফাটে বলে অভিযোগ । এমনই বিচিত্র ঘটনা পুলিশের সামনে ঘটলেও সেই বিষয়ে পুলিশ রবিবার পর্যন্ত মুখ খোলেনি । তারই মধ্যে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় যথারীতি অস্বস্তি বেড়েছে শাসক শিবিরে । যদিও এনিয়ে মুখ খুলতে চায়নি তৃণমূলের কেউই ।
আরও পড়ুন: হাত মেলাল রাম-বাম, মরিচা পঞ্চায়েতে ক্ষমতা হারাল তৃণমূল
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে কদম্বগাছি স্টেশন বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর সরদার ওরফে বুলেট নামে ওই তৃণমূল কর্মী । তখনই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ । গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বরাত জোরে প্রাণে বাঁচেন তিনি । খুনের চেষ্টার এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ওঠে স্থানীয় যুব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মাহাবুব হাসানের দিকে । যিনি আবার তৃণমূল নেতা আসাদ-উদ-জামানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত । ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায় । অভিযুক্ত যুব তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতারের দাবিতে কদম্বগাছির টাকি রোড অবরোধও করেন নিজামুল কবির ঘনিষ্ঠ লোকেরা । এরপরই অভিযোগ পেয়ে মাহাবুব হাসান ওরফে নয়নকে গ্রেফতার করে দত্তপুকুর থানার পুলিশ । তবে রবিবার আদালতে যাওয়ার সময় ধৃত মাহাবুব হাসান জানান, তিনি নির্দোষ, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে আইএসএফ ও দলের একাংশ ৷ এদিন তাঁর 3 দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে ৷