বারাসত, 26 এপ্রিল : পুরনো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতেই আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করলেন অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান (tmc chairman of ashokenagar kalyangarh municipality surrender) । মিলল অন্তবর্তী জামিনও। ঘটনায় দলের একাংশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুললেন চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার।
আদালত সূত্রে খবর, বছর কয়েক আগে রানু সরকার নামে অশোকনগরের এক মহিলা অভিযোগ দায়ের করেন, তিনি তফসিলি জাতিভুক্ত হওয়া সত্বেও তাঁর জাত তুলে গালাগালি করেছেন প্রবোধ সরকার-সহ শাসকদলের তিন নেতা। প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনার প্রেক্ষিতে অশোকনগর থানার পুলিশকে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয় বারাসত আদালতের তরফে। সেইমতো 2021 সালে প্রবোধ, তাঁর স্ত্রী এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ।
ভারতীয় দণ্ডবিধির 325, 506, 341, 195(এ) এবং এসসি-এসটির 3 নম্বর ধারায় মামলা রুজু হয় এই তিন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। মারধর, হুমকি-সহ অন্যান্য ধারাগুলো জামিন যোগ্য হলেও জাতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্যটি জামিন অযোগ্য বলে বিবেচিত। সেই কারণে তৃণমূল চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বারাসত বিশেষ আদালতের বিচারক।
আরও পড়ুন : সত্যিই কি পাসপোর্ট নেই অনুব্রতর ? জানতে চিঠি সিবিআইয়ের
ইতিমধ্যে সেই নির্দেশের কপি অশোকনগর থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আদালত মারফত। আদালতের নির্দেশ নিয়ে সোমবার আমল দিতে না চাইলেও গ্রেফতারি এড়াতে মঙ্গলবার দুপুরে বারাসত আদালতে সস্ত্রীক সটান হাজির হয়ে যান প্রবোধ সরকার। এরপর বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন দু'জনেই।
এই বিষয়ে মামলার সরকারি আইনজীবী শ্যামলকান্তি দত্ত বলেন, "মামলায় প্রবোধ-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছিল আদালতে। চার্জশিট দেখে যেটুকু বুঝতে পেরেছি তা হল এই মামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয় প্রবোধ সরকার। জাত তুলে যে গালাগালি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা তিনি দেননি। দিয়েছিলেন প্রদীপ সিং নামে এক তৃণমূল নেতা। যেহেতু তিনজনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল, সেহেতু এদিন প্রবোধ ও তাঁর স্ত্রী আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। বিচারক দু'জনকেই পাঁচ হাজার টাকার ব্যাক্তিগত বন্ডে জামিন দিয়েছেন। এবার ট্রায়াল শুরু হবে মামলাটির"।
বিষয়টি নিয়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার বলেন, "কোথাও যেন একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি। বিশেষ আদালত আমাকে ডেকেছিল বিষয়টি জানার জন্য। আমি সবটাই জানিয়েছি বিচারককে। আমি চেয়ারম্যান বলে আইনের বাইরে নই। আইন আইনের পথে চলবে। আইনের প্রতি আস্থা রয়েছে আমার"।
আরও পড়ুন : কাঁথি পৌরভোটের সিসিটিভি ফুটেজ অডিটের নির্দেশ হাইকোর্টের
এরপরই দলের একাংশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে তিনি বলেন, "প্রতিমুহুর্তে আমাকে অপদস্থ করার চেষ্টা চলছে। চক্রান্ত করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। সেই চক্রান্তে দলের একাংশ যেমন রয়েছে। তেমনই রয়েছে বিরোধীরাও। তবে, আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। মানুষের সেবা করতে এসেছি। সেই কাজ চালিয়ে যাব"।
অন্যদিকে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও প্রবোধের ঘনিষ্ঠ অপর তৃণমূল নেতা প্রদীপ সিং-কে এদিন আদালতের আশেপাশে দেখা যায়নি। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশেষ আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।