বারাসত, 26 ফেব্রুয়ারি: অনুব্রতর বীরভূমের কায়দায় এবার উত্তর 24 পরগনা জেলাতেও তোলা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে । তাও আবার রাস্তার ধারের পাইকারি হাট থেকে । একদিন অথবা দু'দিন নয় ! এই ঘটনা ঘটে চলেছে দিনের পর দিন ধরে । অভিযোগ বিল, কুপন ছাড়াই রীতিমতো প্রকাশ্যে হাটে আসা চাষিদের থেকে দিব্যি তোলা আদায় চলছে বহাল তবিয়তে । সেই তোলা আদায়ের হাজার হাজার টাকা পৌঁছে যাচ্ছে তৃণমূল নেতাদের পকেটে । ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ভয়ে অনেকেই হয়তো মুখ খুলতে পারছেন না ঠিকই । তবে, সাহস করে যারাই এই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তাঁদের অধিকাংশই স্বীকার করে নিয়েছেন তোলা আদায়ের কথা !
হাট থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পান্নালাল বসুও । আর হাতে কার্যত গরম ইস্যু পেয়ে শাসকদলকে একযোগে নিশানা করেছে বিরোধী শিবির । উত্তর 24 পরগনার বারাসতের বাদু রোড । এলাকাটি বারাসত পৌরসভার 20 ও 21 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত । গুরুত্বপূর্ণ এই রোডের দু'পাশেই সপ্তাহে সাতদিন বসে পাইকারি হাট । যা শুরু হয় প্রতিদিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ । চলে সকাল আটটা পর্যন্ত ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বারাসত ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা উৎপাদিত সবজি এনে এখানে জড়ো হন বিক্রির উদ্দেশ্যে । দু'পয়সা লাভের আশায় । কিন্তু, লাভের বদলে সেখানেই প্রতিনিয়ত তোলা আদায়ের মুখে চাষিদের পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ । আরও অভিযোগ,তোলা আদায়ের জন্য এই পাইকারি হাটে মঞ্জুর আলম, জাহাঙ্গীর আলি-সহ মোট পাঁচজন তৃণমূল কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে । এরা সকলেই পরিচিত বারাসত বিধানসভার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি আসাদুল মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে । তাঁর ইন্ধনেই হাট থেকে তোলা আদায়ের এই প্রক্রিয়া দিনের পর দিন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
জানা গিয়েছে, চাষিদের কারোর কাছ থেকে 20 টাকা । আবার কারোর কাছ থেকে 50, এমনকী 100 টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে । প্রতিদিন এভাবে হাজার হাজার টাকা তোলা হচ্ছে পাইকারি এই হাট থেকে । সেই টাকার একটা অংশই ভাগ হয়ে চলে যাচ্ছে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরে । যদিও প্রকাশ্যে, রমরমিয়ে তোলা আদায় চললেও তাতে কিন্তু ভ্রুক্ষেপ নেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের । একপ্রকার হাত গুটিয়ে তাঁরা বসে রয়েছেন বলে অভিযোগ । একদিকে তোলা আদায়ের মাধ্যমে বাদুর পাইকারি হাটের অলিখিত লাইসেন্স । অন্যদিকে বাদু রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় যানজটের সমস্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত । ফলে যা হওয়ার তাই ঘটছে । এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী সকলেই ।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে ইটিভি ভারতের তরফে অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা আসাদুল মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় । কিন্তু, এই নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে রাজি হননি তিনি । তবে,বিষয়টি নিয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে মুখ খুলেছেন আসাদুল ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী মঞ্জুর আলম । তাঁর দাবি, চাষিরা পেটের দায়ে নিজেদের উদ্যোগেই এই পাইকারি হাট বসিয়েছেন । এখানে পাঁচজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকই । কিন্তু তা কেবলমাত্র চাষিদের দেখভাল এবং যানজট সমস্যার সমাধান করার জন্য । এখানে কারও থেকে জোর করে কোনও টাকা নেওয়া হয় না । যে যেরকম পারে সে সেরকম টাকা দিয়ে থাকে । তাও খুব সামান্য । রাস্তার ধারে এরকম পাইকারি হাট রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে বলেও মনে করেন ওই তৃণমূল কর্মী ।
এদিকে, পাইকারি হাট থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগকে কার্যত মান্যতা দিয়েছেন বারাসত পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ও পৌর পারিষদ পান্নালাল বসু । তাঁর কথায়, হাট থেকে বেআইনিভাবে টাকা তোলা হচ্ছে । তবে কারা কী উদ্দেশ্যে এই টাকা তুলছে সেবিষয়ে কিছু জানা নেই তাঁর । মনে হয়,ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই টাকা তুলছেন স্বার্থান্বেষী কিছু লোক বলে তিনি জানান (Trinamool allegedly collect illegal money) ।
অন্যদিকে, এই ইস্যুতে একযোগে শাসকদলকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা । বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "তৃণমূল মানেই তোলাবাজি । শাসকদলের নেতারা তোলাবাজি করবে না, এটা ভাবাই অস্বাভাবিক । এখন এরা চাষিদেরকেও ছাড়ছে না । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় বলেছিলেন, তিনি পাড়ায় পাড়ায় অনুব্রত তৈরি করবেন । এখন তো সেই সমস্ত অনুব্রতরাই লুটেপুটে খাচ্ছে । তৃণমূলের বিদায় আসন্ন । তাই, যাওয়ার আগে যে যেরকম পারছে সে সেরকমভাবে তোলাবাজি শুরু করেছে । এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা ৷"
আরও পড়ুন: কাউন্সিলরের ওয়ার্ডেই মাটি ফেলে চলছে পুকুর ভরাট ! অস্বস্তিতে তৃণমূল