বসিরহাট, 17 জুলাই: 355 ধারা নিয়ে ফের সুর বদল বিজাপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ৷ একই সঙ্গে, রাজ্য সরকার পড়ে যাওয়া নিয়ে নিজের মন্তব্য থেকেও সরে এলেন সুকান্ত ৷ প্রায় 180 ডিগ্রি ঘুরে বিজেপি রাজ্য সভাপতির দাবি, দল নয়, আদতে রাজ্যের মানুষ চাইছে 355 ধারা ৷ আর মানুষের সেই কথাটাই তারা শুধু তুলে ধরেছেন মাত্র ৷
পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই রাজ্যে 355 ধারা জারির পক্ষে প্রায়শই জোর সওয়াল করেছেন বিজেপি নেতারা ৷ রাজ্যে লাগামছাড়া হিংসা বন্ধের জন্য প্রকাশ্যে বার বার অবিলম্বে 355 ধারা জারি করতে চেয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারও এই দাবি করেছেন একাধিকবার ৷ অথচ এবার তার উলটো সুরই শোনা গেল সুকান্তর গলায় ৷ পশ্চিমবঙ্গে 355 ধারা লাগু করার দাবিতে এবার নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে কার্যত সুর নরম করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, "আমরা কোথায় চাইছি? বাংলার মানুষ বলছেন এখানে 355 ধারা জারি করা উচিত। সেটাই আমরা শুধু বলেছি।"
সোমবার আক্রান্ত বিজেপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আসেন সুকান্ত। আক্রান্ত হয়েছেন দলের সোশাল মিডিয়া ইনচার্জ সঞ্জয় মণ্ডলের সঙ্গেও দেখা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর মাথায় হাত বুলিয়েও দিতে দেখা যায় সুকান্তকে। এরপর, আক্রান্ত বিজেপি নেতার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিবরণ বিশদে জেনে নিয়েছেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ। আক্রান্ত দলের অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গেও এদিন দেখা করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, "যেভাবে বিজেপির সোশাল মিডিয়া ইনচার্জের উপর হামলা এবং মারধর করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তাঁর স্ত্রী'কে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সবটাই হয়েছে তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর মদতে।"
সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে পুলিশ। তিনি বলেন, "আমরা চাই, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক। অন্যথায় যা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার তা আমরা নেব ৷" এরপরই সরকারের পতন নিয়ে ডেডলাইন এবং ফেলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার কার্যত সুর নরম করে বলেন, "আমরা ওরকম কিছু বলিনি। শুধু বলেছি এই সরকার যে কোনও মুহুর্তে পড়ে যেতে পারে। বিধায়করা যদি সমর্থন করতে না চান, তাহলে তো এমনিতেই তৃণমূল সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে ৷"
প্রসঙ্গত, এদিনই রাজ্যে 355 ধারা লাগু করা নিয়ে শুভেন্দু, সুকান্ত এবং শান্তনুর উলটো সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলায়। তিনি বলেন, "নির্বাচিত যে কোনও সরকারকেই ঘুরপথে ফেলে দেওয়া অন্যায়। আগে কখনও পশ্চিমবঙ্গে 355 কিংবা 356 ধারা লাগু হয়নি ৷" দিলীপের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি নেতাদের দাবিকে কটাক্ষ করে ফের সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। তিনি লিখেছেন, 'শুভেন্দু, সুকান্ত ও শান্তনুর কথা শুনে কেন্দ্রীয় সরকার যদি ভুল পদক্ষেপ নেয় তাহলে 24-র লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না বিজেপি। ভরাডুবি হবে তাঁদের ৷"
আরও পড়ুন: চিকিৎসক তৃণমূল কর্মীর গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে
এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, "উনি (অপরূপা) গতবার হারতে হারতে জিতেছেন। তাই,ওঁকে এবার দলের থেকে টিকিট দেওয়া হবে না। এটা আমি ওদের দলের ভিতর থেকে জানতে পেরেছি। তাই,উনি এসব কথা বলছেন। আর 2021-র বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে আসবেন বলে উনি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাই ওর প্রশংসা করছেন। বিজেপির ভরাডুবি হবে কী, হবে না,সেটা সময় এলেই জানতে পারবে। উনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন ?" এদিকে,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'চোর'-অ্যাখা দিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, "উনি একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীই নন, চোর মুখ্যমন্ত্রীও বটে। চুরিতে যদি কাউকে নোবেল দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে প্রথমেই আসবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। এনিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই ৷"