বাদুড়িয়া, 21 জুন : একে তো কন্যা সন্তান ! তার ওপর সদ্যজাত শিশুর গায়ের রঙ কালো ! সেটাই যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল দু'দিনের সদ্যজাত শিশুকন্যার। আর তার মাশুল গুনতে হল প্রাণ দিয়ে । তাও আবার বাবার হাতে । গলা টিপে নিজের সদ্যজাত শিশু সন্তানকে খুনের অভিযোগ উঠেছে বাবা রুহুল আমিন সরদারের বিরুদ্ধে । অমানবিক এই ঘটনায় মঙ্গলবার চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর 24 পরগনার বাদুড়িয়ার পশ্চিম নাটুরিয়া গ্রামে । অভিযুক্তের এমন মানসিকতা এবং বর্বরকাণ্ডে স্তম্ভিত গ্রামবাসীরা । তার কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন পরিবার পরিজনেরাও । অভিযোগ পেয়ে খুনি বাবাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ । ধৃতের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে । ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে বাদুড়িয়া থানার পুলিশ ।
পরিবার সূত্রে খবর, দু'দিন আগে স্থানীয় হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আমিনা বিবি নামে 25 বছরের এক মহিলা । আগেও তাঁর দুটি মেয়ে রয়েছে । পরপর তিনটি মেয়ে হওয়ায় মন থেকে মেনে নিতে পারেননি মহিলার স্বামী রুহুল আমিন সরদার । সোমবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে নাটুরিয়া গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন ওই মহিলা । এরপরই ঘটে মর্মান্তিক এই ঘটনা । অভিযোগ, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সদ্যজাতকে ঘরের মধ্যে রেখে মহিলা বাইরে গিয়েছিলেন প্রাতঃকৃত্য করতে । তখনই সুযোগ পেয়ে সদ্যজাত শিশু সন্তানকে গলা টিপে তার বাবা খুন করে বলে অভিযোগ ।
আরও পড়ুন : Beldanga Children Murder : সম্পত্তির লোভে ছেলে-মেয়েকে খুন করে পলাতক বাবা
ঘরে ফিরে সদ্যজাতের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন আমিনা । সেই চিৎকারে পাড়া প্রতিবেশী ছুটে আসেন আমিনার ঘরে । লক্ষ্য করেন, শিশুর গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন রয়েছে । বুঝতে পারেন, কেউ গলা টিপে খুন করেছে তাকে । এমনই সময় পালানোর চেষ্টা করলে গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যায় রুহুল আমিন সরদার । আটকে রাখা হয় তাকে । পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে অভিযুক্তকে তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে । এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায় । দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হন পরিবার থেকে গ্রামবাসী সকলেই ।
এই বিষয়ে সাবির হোসেন নামে মৃত শিশুর এক আত্মীয় বলেন, "সোমবারই সদ্যজাত ওই শিশু কন্যাকে খুনের চেষ্টা করে রুহুল আমিন সরদার । কিন্তু লোকজন থাকায় সেই ঘৃণ্য কাজ তখন আর করতে পারেনি সে । এদিন সুযোগ পেয়ে ওই সদ্যজাতকে নিজের হাতে খুন করে বাবা । আমাদের ধারণা খুনের সঙ্গে রুহুল আমিন একা জড়িত নয় । ওর পরিবারের লোকজনও যুক্ত রয়েছে । পুলিশ তদন্ত করে সকলের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিক, সেটাই চাইছে সকলে ৷"
আরও পড়ুন : Malda Murder : মাত্র 2 মাস হয়েছে বিয়ে, প্রেমিকের সাহায্যে স্বামীকে খুন করল স্ত্রী
এদিকে এদিন দুপুরের পর বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শিশুর নিথর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিহাট জেলা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে খুনের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে জানা গিয়েছে বাদুড়িয়া থানা সূত্রে ।