ঠাকুরনগর, 14 ডিসেম্বর : নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, 2019 পাশ নিয়ে উত্তাল দেশ । এই আইনের জেরে মতুয়াদের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে । ঠাকুরবাড়ির বড় বউ তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর ইতিমধ্যে বলছেন, "মতুয়ারা এই আইন মানবেন না ।" এদিকে, ঠাকুরবাড়িরই অন্য সদস্য তথা BJP সাংসদ শান্তনু ঠাকুর খুশি এই আইন নিয়ে । গতকাল রাতেই দিল্লি থেকে ঠাকুরনগরে ফিরেছেন এই BJP সাংসদ । মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও এই আইন নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তিনি । ETV ভারতকে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার ।
ETV ভারত : 70 বছর পর মতুয়াদের নাগরিকত্বের দাবি পূরণ । আপনি কী বলবেন ?
শান্তনু ঠাকুর : আমরা আজ ভীষণ খুশি । আমার দাদু স্বর্গীয় প্রমথরঞ্জন ঠাকুর 1948 সালে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে । বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এসেছিলেন এখানে । তারপর ঠাকুরনগর গড়ে তুলেছিলেন । মতুয়াদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল নাগরিকত্বের । অবশেষে আমাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে । নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত ।
ETV ভারত : প্রমথরঞ্জন ঠাকুর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে মতুয়াদের নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন । আপনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন করেছিলেন । অবশেষে লক্ষ্যভেদ । যাত্রাপথটা কেমন ছিল ?
শান্তনু ঠাকুর : আমার দাদু মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন । আমি সেই আন্দোলনে শরিক হয়েছি মাত্র । আন্দোলনের সুরটা দাদুই বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময় সেই দাবি পূরণ হল । আজ মতুয়াদের স্বাধীনতা দিবস ।
ETV ভারত : লোকসভা নির্বাচনের আগে ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি । সেসময় তিনি যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন সে সব রেখেছেন ?
শান্তনু ঠাকুর : হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন । গত বছর আমরা মতুয়াদের দশ দফা দাবিপত্র প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম । তিনি সেই দাবিগুলি বিবেচনা করেছিলেন । তিনি নিজে ঠাকুরবাড়ি ঘুরে গিয়েছেন । তিনি ঠাকুরনগরে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন যে, সমস্ত মতুয়াকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে । মতুয়াদের সেই দাবি মেনেই সংসদে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে আইন তৈরি হয়েছে । প্রধানমন্ত্রীকে আমরা মতুয়াদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই ।
ETV ভারত : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ায় মতুয়াদের সব দাবি পূরণ হল কী ?
শান্তনু ঠাকুর : অবশ্যই পূরণ হয়েছে । মতুয়ারা আজ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার স্বাদ পেল । মতুয়ারা সকলে দেশের নাগরিক ।
ETV ভারত : আপনার জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুর বলছেন, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন মতুয়ারা মানবে না ।
শান্তনু ঠাকুর : মমতাবালা ঠাকুর এখন উভয় সংকটে পড়েছেন । তিনি এখন নাগরিকত্ব আইন সমর্থন না করলে মতুয়াবিরোধী হিসেবে নিন্দিত হবেন । আবার এই আইন সমর্থন করলে ওনার দল তৃণমূলের বিরাগভাজন হবেন । ফলে কী করবেন তা নিয়ে তিনি পাগল হয়ে গিয়েছেন । তাঁর এখন মাথার ঠিক নেই । তাই ভুলভাল বকছেন ।
ETV ভারত : নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে ।
শান্তনু ঠাকুর : বিরোধীরা বোকার মতো কাজ করছে । সমস্ত নিয়ম মেনে একটা আইন যখন পাশ হয়, তখন এভাবে বিরোধিতা করে তা বন্ধ করা যায় না । পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল গোলমাল পাকাচ্ছে ।
ETV ভারত : আপনাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করতে যাওয়ার পথে আপনার স্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন আজ । কারা হামলা করল বলে মনে হয় ?
শান্তনু ঠাকুর : আমি স্পষ্ট বলছি, আমার স্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুরের যে চেষ্টা হয়েছে, সেটা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক করিয়েছেন । এর পরিণতি ভালো হবে না । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ভুলে গিয়েছেন, তাঁকে বর্ধমানের মানুষ তাড়িয়েছেন । এবার উত্তর ২৪ পরগনার মানুষ তাঁকে তাড়াবেন । এমন দিন আসবে, তিনি এই জেলাতেই ঢুকতে পারবেন না ।
ETV ভারত : শেষ প্রশ্ন, মতুয়ারা বলছেন, নাগরিকত্ব আইন পাশ আপনার কৃতিত্ব ? আপনি কাকে কৃতিত্ব দেবেন ?
শান্তনু ঠাকুর : সংসদে এই কৃতিত্বের দাবিদার মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর । আর বাইরে এই কৃতিত্বের দাবিদার মতুয়ারা । আমার কোনও অবদান নেই । আমি মতুয়াদের দাবিটা সংসদে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র । মতুয়ারাই আমাকে সেখানে পাঠিয়েছেন । এই জয় সমস্ত মতুয়া ধর্মাবলম্বীর জয় ।