হাবড়া, 29 জুন : লকডাউনের তিন মাস হয়ে গেল । ট্রেন চলাচল বন্ধ । লোকাল ট্রেন কবে চালু হবে, জানা নেই তাঁদের । প্লাটফর্মের উপর পসরা সাজিয়ে তো বসেছেন, কিন্তু বেচবেন কাকে ? দিশেহারা স্টেশনের ফেরিওয়ালারা । জীবিকা বদল করে কেউ আজ সবজি বিক্রি করছেন । কেউ আবার রেশন থেকে পাওয়া চালটুকু নিয়ে দিন গুজরান করছেন । বেশিরভাগই পড়ে রয়েছেন ট্রেনের চাকার পথ চেয়ে । এমনই ছবি ধরা পড়ল হাবড়ার স্টেশন চত্বরে ।
হাবড়া স্টেশনের এই ছবি কোনও ব্যতিক্রমী চিত্র নয় । গোটা রাজ্যে একই দশা । হাবড়া রেলস্টেশনের তিনটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে । সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে 400 হকার রয়েছেন । CITU ও INTTUC । দুই শ্রমিক সংগঠনের অধীনে থাকা হকাররাই রয়েছেন এখানে । প্ল্যাটফর্মের উপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন সকলে । পান, সিগারেট ও খাবারের দোকান তো আছেই । সঙ্গে সবজি, আনাজ, মনোহারি দ্রব্য, মোবাইলের দোকান, সবই রয়েছে ।
কিন্তু 23 মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন । এখন কিছু স্পেশাল ট্রেন চললেও বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক রেল পরিষেবা । বন্ধ লোকাল ট্রেন । আর এতেই সমস্যায় ভুগছেন স্টেশন চত্বরের হকাররা । মূলত রেলযাত্রীদের উপর নির্ভর করেই ব্যবসা চলে এই হকারদের । কিন্তু, এখন তিন মাস বন্ধ ট্রেন । নেই যাত্রী । একে একে বন্ধ হতে বসেছে রেল স্টেশনের হকারদের স্টলগুলি । জীবিকাহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় সাড়ে 400 ফেরিওয়ালা ।
হাবড়া রেলস্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে ফলের দোকান ছিল সঞ্জীব সরকারের । সেই 23 মার্চ থেকে তিনি কালো প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছেন তাঁর পসরা । রোজ সকাল হলে স্টেশনে আসেন । বন্ধ পসরার উপরে হতাশ হয়ে বসে থাকেন । কবে ট্রেন চলবে জানেন না । বলেন, "সেই মার্চ মাস থেকে আমার ফলের দোকান বন্ধ । জানি ট্রেন চলছে না । তবু ঘরে মন টেকে না । সকাল হলেই হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি দোকানে । ঘরে রেশনের চালটুকু রয়েছে । রোজ আশায় বুক বাঁধি, আজ বোধহয় ট্রেন চলবে । কিন্তু, ট্রেনের চাকা ঘোরে না । সন্ধে হলে আবার একরাশ হতাশা বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই ।"
যাত্রী নেই । বেচাকেনাও নেই । তবু রোজ শরবতের দোকান খোলেন সোমনাথ পাল । প্রশ্ন করায় বলেন, "আশায় থাকি যদি দু'চার পয়সা বেচাকেনা করতে পারি । কিন্তু, হয় না । কার্যত অর্ধাহারেই আমাদের দিন কাটছে ।"
ট্রেন চলাচল বন্ধ । INTTUC -র কার্যালয়টিও বেশিরভাগ সময় তালাবন্ধ পড়ে থাকে । সংঠনের হাবড়া শাখার সভাপতি তথা উত্তর 24 পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক চম্পক সরকার বলেন, "স্টেশনের হকারদের জীবিকা নির্ভর করে রেলযাত্রীদের উপর । ট্রেন বন্ধ । স্বাভাবিকভাবে হকাররাও আজ জীবিকাহীন । আমরা সত্যি খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছি । প্রায় সব দোকান বন্ধ পড়ে রয়েছে । দু'একজন দোকান খোলেন । কিন্তু, বেচাকেনা হয় না । আমরা চাই ট্রেন চলাচল আবার শুরু হোক । হকাররা আবার জীবনের স্রোতে ফিরুক ।"
যোগাযোগ করা হয়েছিল CITU -র হাবড়া শাখার সম্পাদক সাধন কুণ্ডুর সঙ্গেও । তিনিও হতাশার সুরে বলেন, "কী করব বলুন ! ট্রেন বন্ধ । হকাররা আজ কার্যত জীবিকাহীন । অনেকেই স্টেশন ছেড়ে সবজি, মাছ বিক্রি করছেন । আমরা চাই দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হোক ।"