বারাসত, 31 মে : বারাসত কলেজের পর বারাসত কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় । স্কুলে কোয়ারানটিন সেন্টার করার প্রতিবাদে এবার পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হলেন 26 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা । তাই স্কুলে ঢোকার যাবতীয় রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড ও গাছের ডালপালা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে । যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা কোনওভাবেই স্কুলের কোয়ারানটিন সেন্টারে প্রবেশ করতে না পারে । শুধু তাই নয়, রাতের অন্ধকারে এলাকাবাসীর নজর এড়িয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতে স্কুলের কোয়ারানটিন সেন্টারে প্রশাসন রাখতে না পারে, তার জন্য রাত জাগার ব্যবস্থাও করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা । তাঁদের সাফ কথা, "জনবহুল এলাকায় অবস্থিত ওই স্কুলে কিছুতেই কোয়ারানটিন সেন্টার করতে দেওয়া হবে না । যদি আন্দোলনের মাধ্যমে বারাসত কলেজে কোয়ারানটিন সেন্টারের পরিকল্পনা আটকে দেওয়া যায়, তাহলে এখানেও আমরা আন্দোলন করে তা আটকে দিতে পারব ।"
বারাসত পৌরসভার 26 নম্বর ওয়ার্ডের RBC (ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র) রোডের পাশেই রয়েছে প্রাচীন এই স্কুলটি । স্কুলের সন্নিকটে রয়েছে বারাসাত পৌরসভা । আশপাশে অসংখ্য বসতবাড়ি ও কয়েকটি আদিবাসী বস্তিও আছে । স্কুলের সামনের রাস্তা থেকে একটু এগোলেই পড়বে যশোহর রোড । তারপরও এমন একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভিনরাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখতে কোয়ারানটিন সেন্টার করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পৌরসভার বিরুদ্ধে । পৌর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা । স্কুলে কোয়ারানটিন সেন্টারের বিরোধিতা করে রাস্তায় নামেন তাঁরা ।
গতকাল রাত থেকেই ওই স্কুলে ঢোকার সমস্ত রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড ও গাছের ডালপালা দিয়ে আটকে দেওয়া হয় । যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা সেখানে প্রবেশ করতে না পারে । এমন কী, স্কুলের মূল দরজায় পোস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয় । তাতে লিখে দেওয়া হয়েছে, ভিনরাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের স্কুলের কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা যাবে না । তারপরও রাতের অন্ধকারে কোনওভাবে নজর এড়িয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সেখানে রাখা হচ্ছে কিনা, তা দেখতে রাত জেগে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাসিন্দারা । এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রাহুল নাগ বলেন, "আমরা জানতে পেরেছি বারাসত কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখার জন্য কোয়ারানটিন সেন্টার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে । স্কুলের আশপাশে অসংখ্য বসতবাড়ি ও আদিবাসী বস্তি রয়েছে । তারপরও কীভাবে এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোয়ারানটিন সেন্টার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, সেটাই আমাদের কাছে আশ্চর্যের । আমরা এখানে ভিনরাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কিছুতেই রাখতে দেব না । তাদের আটকাতেই স্কুলে ঢোকার সমস্ত রাস্তা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি । রাতে লুকিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা হচ্ছে কিনা, তা দেখতে রাত জাগার ব্যবস্থাও করা হয়েছে ।"
পরিযায়ী শ্রমিকদের জনবহুল এলাকায় ওই কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা হলে কোরোনা মুক্ত 26 নম্বর ওয়ার্ডে এর প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা । যদিও, বাসিন্দাদের এভাবে রাস্তা আটকানোকে ভালোচোখে দেখছেন না বারাসত পৌরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "পরিযায়ী শ্রমিকরা বাইরের কেউ নন । ওঁরাও আমাদের ঘরের ছেলে । এভাবে যদি সমস্ত জায়গা থেকে বাধা আসে, তাহলে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখব কোথায়? কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখা না হলে তাঁরা তো বাইরে ঘুরে বেড়াবে? তখন তো আরও সংক্রমন বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে । এগুলো তো বাসিন্দাদের বুঝতে হবে । তাঁদেরকেই তো সহনশীল হতে হবে এবিষয়ে ।" তিনি আরও বলেন, "বাইরের কোনও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নয়, ভিনরাজ্য থেকে যারা বারাসতে ফিরছেন তাঁদের রাখতেই স্কুল ও কলেজে কোয়ারানটিন সেন্টার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । আমরা তো আগেই জনবহুল এলাকার বাইরে কোয়ারানটিন সেন্টার করেছি । কিন্তু এখন পরিস্থিতি যা, তাতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমাদের । আমি বাসিন্দাদের বলব, অযথা আতঙ্কিত না হয়ে এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটু সহানুভূতি দেখান । তাতে আখেরে সমাজই উপকৃত হবে ।"
প্রসঙ্গত, ভিন রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখতে বারাসতের দু'টি কলেজ ও কয়েকটি স্কুলকে চিহ্নিত করে কোয়ারানটিন সেন্টার করার পরিকল্পনা নেয় পৌরসভা । সম্প্রতি সেই সমস্ত কোয়ারানটিন সেন্টারের তালিকাও প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পৌরসভার তরফে । আর সেই খবর জানতে পেরেই দু'দিন আগে বারাসত কলেজে কোয়ারানটিন সেন্টারের বিরোধিতা করে রাস্তায় নামেন এলাকার বাসিন্দারা । বাসিন্দাদের প্রতিবাদের ফলে শেষে পিছু হটতে হয় প্রশাসনকে । জানিয়ে দেওয়া হয় ওই কলেজে কোয়ারানটিন সেন্টার হচ্ছে না । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার বারাসত কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও কোয়ারানটিন সেন্টার তৈরির বিরোধিতা শুরু করলেন স্থানীয়রা । পরিস্থিতি যা সেখানেও পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারানটিন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা ।