মধ্যমগ্রাম, 7মে: কোরোনায় আক্রান্তের হারে রেড জ়োনে উত্তর 24 পরগনা জেলা । তার মধ্যেই মিলল স্বস্তির খবর । গত একমাসে নতুন করে কেউ সংক্রমিত না হওয়ায় কনটেইনমেন্ট জ়োনের তকমা কমল মধ্যমগ্রামে । জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার 10 ও 28 নম্বর ওয়ার্ডে যেহেতু নতুন করে কোনও সংক্রমণ নেই ,তাই ওই দুটি ওয়ার্ডকে কনটেইনমেন্ট জ়োন থেকে গ্রিন জ়োনে নিয়ে আসা হয়েছে । গতকালই একথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে । আজ সকালে ওই দুটি ওয়ার্ডে পুলিশের দেওয়া গার্ডওয়াল ও বাঁশের ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । এখন মধ্যমগ্রামে শুধু 5 নম্বর ওয়ার্ডই রয়েছে কনটেইনমেন্ট জ়োনের তালিকায় । সেই ওয়ার্ডও শীঘ্রই গ্রিন জ়োনে চলে আসবে বলে আশা পৌর কর্তৃপক্ষের ।
জানা গেছে, মধ্যমগ্রামে প্রথম কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল 28 নম্বর ওয়ার্ড থেকে । ওই ওয়ার্ডের মাইকেল নগরে পেশায় এক নার্সের শরীরে মেলে কোরোনা ভাইরাস । আদতে কেরলের বাসিন্দা আক্রান্ত ওই নার্স পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন সেখানে । এরপর, ওই ওয়ার্ড থেকেই আরও এক আদিবাসী মহিলা আক্রান্ত হন কোরোনায় । সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাভাবিকভাবে 28 নম্বর ওয়ার্ড সিল করে দেওয়া হয় পুলিশ প্রশাসনের তরফে । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে 10 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে । কাউন্সিলরের বাড়ি মধ্যমগ্রামের পূর্ব বঙ্কিম পল্লীতে । এই ঘটনায় রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ পড়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কপালে । প্রত্যাশিত মতো সংক্রমণ রুখতে এই ওয়ার্ডকেও সিল করে দেওয়া হয় গার্ডওয়াল ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে । সবশেষে,কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় পৌরসভার 5 নম্বর ওয়ার্ডের গৌরিপার্ক এলাকা থেকে । কাউন্সিলরের সংস্পর্শে আসায় তাঁর গাড়ি চালককে বারাসতের এক কোয়ারানটিন সেন্টারে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল । তার মধ্যেই ওই গাড়ি চালকের সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । ওই ওয়ার্ডটিও কনটেইনমেন্ট জ়োন হওয়ায় সিল করে দেওয়া হয় পুলিশ প্রশাসনের তরফে । তিনটি ওয়ার্ডই কনটেইনমেন্ট জ়োন হওয়ায় বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো কিংবা বহিরাগতদের ভিতরে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল ।
ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের যাবতীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন পুলিশ কর্মীরা । এমনকী, ভিড় সামাল দিতে মধ্যমগ্রাম-সোদপুর রোডের মাছ ও সবজির বাজারকে দু'টি ভিন্ন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । পাশাপাশি চলেছে স্যানিটাইজ়ড ও বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজও । যার ফল মেলে হাতেনাতে । গত এক মাসে 10 ও 28 নম্বর ওয়ার্ডে নতুন কেউ সংক্রমিত না হওয়ায় ওই দুটি ওয়ার্ডকে কনটেইনমেন্ট জ়োনের তকমা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হল গ্রিন জ়োনে । যা নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর মধ্যমগ্রাম পৌরসভার কাছে । এবিষয়ে পৌরপ্রধান ও বিধায়ক রথীন ঘোষ বলেন, "এটা অবশ্যই স্বস্তির খবর । গত এক মাসে নতুন করে কেউই কোরোনায় আক্রান্ত হয়নি মধ্যমগ্রাম পৌর এলাকা থেকে । যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন ও তাঁদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, ইতিমধ্যে সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন । আশা করছি, কনটেইনমেন্ট জ়োন 5 নম্বর ওয়ার্ডও খুব তাড়াতাড়ি গ্রিন জ়োনে চলে আসবে । তবে,সাধারণ মানুষকে বলব, যতক্ষণ না এই জেলা রেড জ়োন থেকে গ্রিন জ়োনে আসছে ততক্ষণ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।" রেড জ়োন উত্তর 24 পরগনায় এই মুহূর্তে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক । মৃত্যুও হয়েছে দশজনের কাছাকাছি । প্রতিদিনই লম্বা হচ্ছে আক্রান্তের তালিকা । তার ফলে বাড়ছে কনটেইনমেন্ট জ়োনের সংখ্যাও । 70 থেকে বেড়ে তা এখন হয়েছে 86 । তার মধ্যেই কনটেইনমেন্ট জ়োনের তকমা কমা জেলা প্রশাসনকে যে নিঃসন্দেহে স্বস্তি দেবে,তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।