বারাসত, 14 সেপ্টেম্বর: দেরিতে হলেও ঘুম ভাঙল প্রশাসনের । ক্রীড়া প্রেমী মানুষের দাবি মেনে অবশেষে প্রাকৃতিক ঘাসের মাঠই ফিরতে চলেছে বারাসত স্টেডিয়ামে । এতদিন স্টেডিয়ামের মাঠে কৃত্রিম ঘাস অর্থ্যাৎ অ্যাস্ট্রোটার্ফ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই ফুটবল খেলার অনুপযোগী হয়ে উঠেছিল । সেই সঙ্গে বাড়ছিল চোট-আঘাতের সমস্যাও । যার জেরে বারাসত স্টেডিয়ামের অ্যাস্ট্রোটার্ফ মাঠে ফুটবল খেলতে অনীহা প্রকাশ করেন ময়দানের নামীদামী ফুটবলাররা । ফলে,টানা চার বছর ধরে কোনও ধরনের ফুটবল খেলার আয়োজন করা যায়নি বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে ।
এর পিছনেও যথেষ্ট কারণ রয়েছে । কৃত্রিম ঘাসে ভুল ত্রুটি থাকায় এই স্টেডিয়ামে আই লিগ,কলকাতা লিগ-সহ যাবতীয় টুর্নামেন্টের খেলাও চালু করা সম্ভব হয়নি । যার ফলে দীর্ঘদিন থেকেই কলকাতার নামীদামী দলের খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রীড়া প্রেমী মানুষ । এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও দেখা দিচ্ছিল প্রতিনিয়ত । ক্রীড়া জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন চাইছিলেন, কৃত্রিম ঘাস অ্যাস্ট্রোটার্ফ তুলে মাঠে প্রাকৃতিক ঘাস ফিরিয়ে আনা হোক । যাতে সুষ্ঠুভাবে পুনরায় চালু করা যায় ফুটবল খেলা । দীর্ঘদিন ধরেই সেই দাবি করে আসছিলেন ক্রীড়া প্রেমী মানুষরা । দেরিতে হলেও তাঁদের সেই দাবিকেই শেষে মান্যতা দিতে হল রাজ্যের ক্রীড়া দফতরকে ।
আরও পড়ুন: সুনীলকে রেখে এশিয়াডের দল ঘোষণা ফেডারেশনের, বাদ গুরপ্রীত-সন্দেশ
এই বিষয়ে কল্যাণ রায় নামে ক্রীড়া প্রেমী বলেন,"আমরা সবসময় চেয়ে এসেছি অ্যাস্ট্রোটার্ফের বদলে প্রাকৃতিক ঘাসের মাঠই থাকুক বারাসত স্টেডিয়ামে । কিন্তু,তারপরও কৃত্রিম ঘাসের মাঠ হওয়ায় দীর্ঘদিন বড় কোনও টুর্নামেন্ট হয়নি এখানে । এর ফলে অনুরাগীরা ফুটবল থেকে বঞ্চিতই হচ্ছিলেন কিছুটা।একদিকে তাঁরা যেমন প্রিয় দলের হয়ে খেলা দেখতে এসে স্টেডিয়ামে গলা ফাটাতে পারছিলেন না । অন্যদিকে তেমনই নিজেদের সেরাটা দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে পারছিলেন না ফুটবলাররাও । আবারও ফুটবল খেলা চালু হলে উপকৃত হবেন সকলেই ৷"
দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে বারাসত স্টেডিয়ামে ইতিমধ্যে কৃত্রিম ঘাস অ্যাস্ট্রোটার্ফ সরিয়ে প্রাকৃতিক ঘাস বসানোর যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । খেলার উপযোগী মাঠ গড়ে তুলতে একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী । সেই কমিটির মাথায় রয়েছেন বন ও শিল্প পুনর্গঠন দফতরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । কমিটির কনভেনর হয়েছেন জেলাপরিষদের সভাধিপতি ও বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী । এছাড়া কমিটির সদস্য করা হয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং রথীন ঘোষকে । মূলত এদের তত্ত্বাবধানেই চলবে স্টেডিয়ামের মাঠের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ । এ জন্য 85 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । বরাদ্দকৃত টাকায় মাঠে ফের যেমন প্রাকৃতিক ঘাস বসবে । ঠিক তেমনই সংস্কার করা হবে সাইডলাইনে খেলোয়াড়দের বসার জায়গাও । দ্রুত সেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে ।
আরও পড়ুন: বারাসত স্টেডিয়ামে অ্যাস্ট্রোটার্ফ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র আছে, দাবি অরূপের
সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ওপর চাপ কমাতে এই স্টেডিয়াম-টি নির্মিত হয়েছিল জেলার সদর শহর বারাসতে । ঝাঁ চকচকে বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে শুরুতে প্রাকৃতিক ঘাসই ছিল মাঠে । পরবর্তীতে সেই প্রাকৃতিক ঘাস তুলে মাঠে বসানো হয় অ্যাস্ট্রোটার্ফ । কৃত্রিম ঘাসের এই মাঠে একসময় আই লিগ,কলকাতা লিগ,আইএসএলের মতো সনামধন্য ফুটবল টুর্নামেন্টও আয়োজিত হয়েছে । কিন্তু,যত দিন গড়িয়েছে ততই যেন প্রকট হয়ে উঠেছিল মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব । যার সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল ফুটবলারদের ওপর । অভিযোগ,কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলার দরুন চোট-আঘাতের সমস্যা ক্রমেই বাড়ছিল । এর জেরে নামীদামী ফুটবলাররা কৃত্রিম ঘাসের এই মাঠে খেলতে অনীহা প্রকাশ করেন । এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ফুটবল টুর্নামেন্ট ।
সূত্রের খবর, চার বছর আগে শেষবার ফুটবল খেলা হয়েছিল বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে । তারপর বড় মাপের কোনও খেলাই হয়নি এখানে । এদিকে,দীর্ঘদিন ধরে কোনও ধরনের খেলাধুলা না হওয়ায় স্টেডিয়ামের মাঠটি দিনের পর দিন একপ্রকার অব্যবস্থায় পড়েছিল । যা ঘিরেও ক্ষোভ বাড়ছিল ক্রীড়া প্রেমী মানুষের মধ্যে । সেই ক্ষোভে প্রলেপ দিতেই ক্রীড়া দফতরের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে ফুটবল বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ ।
আরও পড়ুন: এশিয়ান গেমসে ফুটবলার ছাড়া নিয়ে ফেডারেশনের উপর ক্ষুব্ধ, তবু ট্রফিতেই চোখ ফেরান্দোর
অন্যদিকে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফুটবল টুর্নামেন্টের মরশুম থেকেই আই লিগ,কলকাতা লিগের মতো বড় মাপের ফুটবল খেলা ফিরতে চলেছে বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে । অন্তত তেমনই আশার বাণী শুনিয়েছেন মন্ত্রী থেকে জেলাপরিষদের সভাধিপতি সকলেই ।