ভাটপাড়া, 22 নভেম্বর: তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনের পর প্রায় 24 ঘণ্টা কাটতে চলল ! সেই খুনের কিনারা এখনও করে উঠতে পারেনি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের জগদ্দল থানার পুলিশ । এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে কয়েকজন সন্দেহভাজন আততায়ীকে চিহ্নিত করা হয়েছে ঠিকই । যদিও তাদের পরিচয় নিয়ে এখনও অন্ধকারে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের শীর্ষ কর্তারা । শুধু তাই নয়, খুনের কারণ সম্পর্কেও ধোঁয়াশায় রয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা ৷ তবে, যেভাবে একের পর এক বুলেটে ওই তৃণমূল কর্মীকে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত যে পুরনো কোনও আক্রোশ কিংবা শত্রুতা থেকেই এই খুনের ছক কষা হয়েছিল । এই বিষয়ে বেশকিছু তথ্যও উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে 2021 সালে বিধানসভা ভোটের সময় ভিকির ভাইপো আকাশ যাদব খুন হন দুষ্কৃতীদের হাতে । সেই খুনের ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন এই ভিকি যাদব । এনিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখিও হতে হয়েছিল তাঁকে । সেই সময় খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ভিকি ।
অভিযোগ, তাঁর সাক্ষ্যদানের জেরে তখন কয়েকজন দুষ্কৃতীর জেলে যেতে হয় ৷ সেই আক্রোশে কয়েকদিন আগে ভিকির কাছে হুমকি ফোন আসে জেল থেকে । দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে । যদিও হুমকি ফোন নিয়ে অতটা গুরুত্ব দেননি ভিকি যাদব । তারই মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাড়হিম করা এই হত্যাকাণ্ড ঘটে ! ভাটপাড়ার জগদ্দলের তালাব এলাকায় বাড়ির সামনেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝারা হয়ে যান ভিকি যাদব নামে ওই তৃণমূল কর্মী ।
ফলে, তাঁর খুনের সঙ্গে এই হুমকি ফোনের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা । এনিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও আততায়ীদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা । তদন্তে কিছু তথ্যও উঠে এসেছে পুলিশের হাতে । যেহেতু খুনের সময় দুষ্কৃতীরা হিন্দি ভাষায় ভিকির নাম জানতে চেয়েছিল, সেহেতু তদন্তকারীদের অনুমান, আততায়ীরা সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের পাশ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড অথবা বিহার থেকে এসে থাকতে পারে ।
তাহলে কি প্রতিবেশী কোনও রাজ্যের সুপারি কিলার দিয়েই খুন করা হয়েছে তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদবকে ? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সেই খুনের বরাত দিল কারা ? কত টাকাতেই বা খুনের রফা হয়েছিল ? খুনের পর এমনই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে । পরিবার সূত্রে খবর, ভিকি যাদব পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন । তাঁর খাটালও রয়েছে । ব্যবসা সংক্রান্ত পুরনো কোনও শত্রুতার জেরে এই খুন কি না, সেটাও তদন্তের আওতায় রয়েছে পুলিশের । তাই, এই খুনের তদন্তে বেশকিছু সম্ভবনা নিয়েই এগোচ্ছেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা । আততায়ীদের ধরতে তাদের মোবাইলের লোকেশনের দিকেও নজর রাখতে শুরু করেছে তদন্তকারীরা । যদিও দুষ্কৃতীদের কারোরই হদিশ পাওয়া যায়নি এখনও ।
এনিয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে । আশা করছি খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে ৷"
এদিকে, তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব আগে জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের কাছের মানুষ ছিলেন । পরে অবশ্য তিনি ভাটপাড়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সাংসদ অর্জুন সিংয়ের আত্মীয় সৌরভ সিংয়ের সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন । তাঁকেই খুন হতে হল দুষ্কৃতীদের হাতে । ঘটনার জেরে একদিকে ভাটপাড়ার মানুষ যেমন আতঙ্কিত, অন্যদিকে তেমনই থমথমে পরিবেশে এলাকায় রয়েছে পুলিশি বন্দোবস্ত । কিন্তু তারপরও আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না এলাকাবাসীর ৷ কারণ, অবশ্যই দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি । তার জেরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে একের পর এক শ্যুটআউটের ঘটনা ।
অন্যদিকে, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং । তিনি বলেন, "ভিকি যাদবকে বাড়ির সামনে মারা হয়েছে ।’’ ভিকি যে তৃণমূলের কর্মী ছিলেন, সেকথাও মানছেন সাংসদ । তবে এই খুনের নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ নাও থাকতে পারে বলে মনে করছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ ।
তাঁর কথায়, "কে বা কারা এই কাজ করেছে, তা তদন্তসাপেক্ষ । পুলিশকে বলা হয়েছে,দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে । এটা তো রাজনৈতিক কারণ নাও হতে পারে । ভিকি যাদব এমন কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না । তবে, তৃণমূলের কর্মী ছিলেন ৷"
আরও পড়ুন: