মধ্যমগ্রাম, 23 ডিসেম্বর: মমতার সাম্প্রতিক জেলা সফর নিয়ে শনিবার দলের ডাকা সাংগঠনিক বৈঠকে অর্জুন সিং-সোমনাথ শ্যাম দু'জনে আসলেন ঠিকই। কিন্তু বৈঠকে কেউ কারও দিকে ফিরেও তাকালেন না। ফলে, কথা হওয়া তো দূরের কথা। বৈঠক থেকে বাইরে বেরিয়েই রীতিমতো বিবাদমান দুই নেতা রনংদেহী মেজাজে আক্রমণ শানিয়েছেন একে অপরের দিকে। যা সাংসদ-বিধায়কের দ্বৈরথে কার্যত নতুন মাত্রা যোগ করেছে।সেই সঙ্গে বিড়ম্বনাও বাড়িয়েছে উত্তর 24 পরগনা জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ৷ বিশেষ করে লোকসভা ভোটের আগে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সাংসদ-বিধায়কের যে কুরুক্ষেত্র বেঁধেছে তাতে তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতিও সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে শীর্ষ নেতৃত্বের নিশ্চুপ থাকা নিয়েও।যা নিয়ে সরব হয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং নিজেও।
এদিন বিকেলে মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে দলের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে হাজির ছিলেন উত্তর 24 পরগনা জেলার প্রথম সারির নেতারা । মন্ত্রী, বিধায়কদের পাশাপাশি তৃণমূলের চার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি এবং দলের জেলা চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন এদিনের বৈঠকে। বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বৈঠকে যোগ দেন সাংসদ ও তৃণমূলের দাপুটে নেতা অর্জুন সিং। অর্জুনের আসার অনেক পরে দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে আসেন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। এরপরই বৈঠক ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সাংসদ অর্জুন সিংকে। যা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় তৃণমূলের অন্দরেই। তাহলে কি বিধায়ক সোমনাথ শ্যামকে এড়াতেই বৈঠকের মাঝপথে বেরিয়ে এলেন অর্জুন সিং, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও রণকৌশল রয়েছে সাংসদের ? এমনই সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
যদিও বিষয়টিকে সেভাবে দেখতে নারাজ সাংসদ-বিধায়ক দু'জনেই। উলটে, তাঁদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে একে অপরকে বাক্য-বাণে বিদ্ধ করতেই যেন বেশি ব্যস্ত ছিলেন। ফলে এখনই যে সাংসদ-বিধায়কের কাজিয়ায় দড়ি টানার সম্ভবনা নেই তা কার্যত এদিন অর্জুন-সোমনাথ বুঝিয়ে দিয়েছেন বৈঠক থেকে বেরিয়ে। এদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে এই দ্বন্দ্ব না থামার পিছনে সাংসদ অর্জুন সিং মূলত ব্যারাকপুর-দমদম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়কেই তিনি দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, "এই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কোনও কাজ করে না। যদি কাজ করত তাহলে ন'দিন ধরে এই এপিসোড চলতে দেওয়া হত না। বাংলা, এমনকি ভারতবর্ষের মানুষ সকলেই জানে এই দ্বন্দ্বের কথা। কীভাবে একজন বিধায়ক সাংসদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে। অথচ, সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জানেন না, এটা হতে পারে না। তার মানে সাংগঠনিক জেলার আওতার বাইরে এটা রয়েছে। যাদের আওতার মধ্যে তাঁরা দেখবে বিষয়টি। দলের এটা দেখা উচিত ৷" এরপরই নাম না করে সোমনাথ শ্যামের উদ্দেশ্যে অর্জুন বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে দলে নিয়েছেন বিজেপির সাংসদ হয়েও। যাঁরা এনিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চ্যালেঞ্জ করছেন। সেটা নিশ্চয় তিনি দেখবেন। আমি শীর্ষ নেতৃত্ব নই। তাই শীর্ষ নেতৃত্ব চুপ রয়েছে কেন, কী করে বলব !"
পালটা এনিয়ে অর্জুনকে জবাব দিতে দেরি করেননি বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। তিনি বলেন, "কে সাদা কে কালো তা মানুষ বুঝতে পারছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দলের কোনও ক্ষতি হবে না। এতে দল আরও পরিষ্কার হবে। বোঝা যাবে কে সাদা আর কে কালো। আমি দলের ঊর্ধ্বে নই। আমার নিজের কোনও ব্যাক্তিগত সত্বা নেই। আমার পরিচয় আমার মাথার ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায় রয়েছেন। দল যেটা বলে সেটাই করি। দলের বাইরে কোনও কাজ করি না ৷" এদিকে, সাংসদ অর্জুন সিংয়ের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে পালটা কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও বিধায়ক তাপস রায় শুধু বলেন, "যেটা ঘটছে সেটা নিয়ে আগেও চেষ্টা করেছি ফাটল মেরামত করতে। দল যদি আমায় দায়িত্ব দেয়, আমি আবারও অনুঘটক হয়ে কাজ করব সাংসদ-বিধায়কের দ্বন্দ্ব মেটাতে। তাই, কে কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না ৷"
আরও পড়ুন: