অশোকনগর, 7 জুন : সন্তানের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি চান না মা । আজ তৃণমূল স্থানীয় নেতাদের একথা সাফ জানিয়ে দিলেন শিখা গঙ্গোপাধ্যায় ।
গতকাল নিমতায় দলের মৃত কর্মীর বাড়িতে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "অশোকনগরে শিশুকে আছড়ে খুন করেছে BJP । এটাই কি BJP-র সংস্কৃতি ?" তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, আজ তাঁর নির্দেশে এক প্রতিনিধি দল অশোকনগরের ওই শিশুটির বাড়িতে যাবে । সেই অনুযায়ী তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা ওই শিশুর মা শিখা গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কথা জানান । চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বঙ্গজননী বাহিনী তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে বলে জানান তাঁরা । তখনই শিখা তাঁদের সাফ জানিয়ে দেন, "আমার শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে BJP কোনওভাবে জড়িত নয়। পারিবারিক অশান্তির জেরে আমার শিশুর মৃত্যু হয়েছে ।"
এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন :নিমতায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন
2 জুন । অশোকনগরের শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের ক্যাসা কলোনি । বাড়ির উঠানে বসে শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন শিখা । সেসময় উঠান ঝাঁট দেওয়া নিয়ে ননদের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর । অভিযোগ, সেই সময় শাশুড়ি, ননদ ও ভাশুর মারধর করে শিখাকে । মারধর করার সময় শিশুর গলায় দুধ আটকে যায় । এরপর থেকেই শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । হাসপাতালে ভরতি হলেও চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তার । এরপর শাশুড়ি, ননদ ও ভাশুরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিখা । অভিযোগের ভিত্তিতে শিখার ভাশুর সুশান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শিখার ননদ, ভাশুর ও শাশুড়ি BJP কর্মী । শিখা তৃণমূল কর্মী । তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিখা তৃণমূল কর্মী হওয়ায় কোল থেকে তাঁর সন্তানকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে মেরে ফেলে তারা । একই কথা শোনা যায় বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মুখেও । একটি টক শো-তে বারাসতের সাংসদ বলেন, "জয়শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে ফেলেছে তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা । ওরা BJP কর্মী ।"
এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : সন্ত্রাসের উলঙ্গ চিতা জ্বালাচ্ছে BJP : মমতা
আজ বঙ্গজননী বাহিনী শিখার সঙ্গে দেখা করতে আসবে বলে জানান স্থানীয় তৃণমূল নেতা । তাঁকে শিখা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "এটা কোনও রাজনৈতিক ঘটনা নয় । বিয়ের পর থেকেই ওরা আমাকে মারধর করত । আমি রাগের বশে সেদিন BJP-র নামে অভিযোগ করেছিলাম । তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না । পরে আমি ভেবে দেখলাম এই ব্যাপার নিয়ে রাজনৈতিক করাটা ঠিক না । পারিবারিক অশান্তির জেরে আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে ।" এরপরেই বাতিল হয় চন্দ্রিমার পরিদর্শন কর্মসূচিও ।
তৃণমূল নেতা তথা অশোকনগরের পৌরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, "যার বাচ্চা মারা গেছে, তিনি এখন বলছেন, আমার বাচ্চার মৃত্যর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ নেই । সেখানে কী আর যাওয়া যায় ?" সন্তানের মৃত্যুর এতদিন পর কেন 'ভোলবদল' করলেন শিখা ? তাহলে কি BJP-র পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে শিখাকে ? প্রশ্ন উঠছেই । যদিও BJP নেতৃত্ব বলছে, "আমরা কেন চাপ দিতে যাব । আসলে মমতা ব্যানার্জির মুখ পুড়েছে । তাই, তৃণমূলের গায়ের জ্বালা ধরছে ।"