ব্যারাকপুর, 18 সেপ্টেম্বর: প্রতিবছর আজকের দিনে গমগম করত এলাকা ৷ আলোর রোশনাই, বাদ্যির বাজনায় নতুন প্রাণ আসত যেন ৷ কিন্তু কয়েকবছর ধরে সবই ফিকে ৷ চারদিকে শ্মশানের নিস্তব্ধতা ৷ বন্ধ হয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক কারখানা ৷ এবছর তাই বাজল না বিশ্বকর্মা পুজোর বাদ্যি ৷ হল না প্যান্ডেলও ৷ আলোয় সাজলও না চারদিক ৷
প্রতিবছর আজকের দিনেই বিশ্বকর্মা পুজোয় মেতে ওঠে কলকারখানাগুলি৷ কারণ আজ "ওদের" দিন ৷ "ওরা" কলকারখানার শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা, অটোওয়ালা ৷ এককথায় যন্ত্রই "ওদের" জীবন ৷ তাই যন্ত্রের দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে তৎপর "ওরা" সব্বাই ৷ পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল ৷ আলোর রোশনাই, বাজনা ৷ নিজেদের সামর্থ্টুকুই "ওরা" আয়োজন করেন পুজোর ৷ আজকের দিনে এই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল সেজে উঠত একসময় ৷ তবে আজ বন্ধ শিল্পাঞ্চলের একাধিক কলকারখানা ৷ একসময় যেখানে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন উৎসবের আনন্দে মুখরিত হয়ে থাকত গোটা এলাকা সেই এলাকাই চুপ ৷ শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে শুধুই ফেলে আসা দিনগুলোর আনন্দের মুহুর্তের স্মৃতি ৷ স্মৃতির কথা মনে পড়লেই মানসিক যন্ত্রণার মেঘ করে আসে মনে ৷ আঁধারের মাঝেও অনেক শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আলোর রোশনাই খুঁজে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন ৷
দুর্গাপুজো নিয়েও তো আজ থেকেই বাঙালি হাতের কর গুনতে শুরু করেছেন ৷ নতুন জামাকাপড় কেনার আনন্দও কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে ৷ তবে আনন্দের রোশনাই নেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ৷ একটা সময় ছিল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে মিলের শ্রমিকদের কোলাহলে মুখর হয়ে থাকত । কিন্তু একের পর এক এই শিল্পাঞ্চলের বড় থেকে মাঝারি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । কোনওটা 20 বছর ধরে বন্ধ, কোনওটা 25, কোনওটা আবার 10 বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে । ফলে এই বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা কবে তাঁদের কারখানা কবে খুলবে সেই আশায় বসে রয়েছেন আজও । কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন আশার আলো দেখতে পাননি কেউ । পুজোর দিনে হাসি নেই ওদের ঠোঁটে ৷ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারখানাগুলির মধ্যে নৈহাটির জেনসন অ্যান্ড নিকলসন রং কারখানা । সেখানে প্রায় 3 হাজার শ্রমিক কাজ করতেন । একটা সময় ছিল কারখানার শ্রমিকদের হাল ছিল রাজার মতো । উৎসবের দিন তো বটেই বিশেষ করে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কারখানার ভেতরে মহাসমারোহে হত পুজো । চলত প্রসাদ বিতরণ ৷ কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া তো আছেই । এছাড়াও কারখানার বাইরে পুজোর দিনগুলিতে বসতো মেলা । দূরদূরান্ত থেকে এই মেলাতে লোকজন আসতেন ৷ কারখানার ঠাকুর দর্শন করতেন । পুজোর সময় আলোর রোশনাইয়ে ঝলমল করত গোটা এলাকা । তবে আজ সবই অতীত ৷ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আজ পর্যন্ত এই পুজোর দিনগুলিতে অন্ধকারে থাকে গোটা এলাকা । আজও সেই আনন্দের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন এখানকার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকজন । অন্যদিকে বড় শিল্প কারখানাগুলির মধ্যে গৌরীপুর জুট মিল,ক্যাপস অ্যান্ড কন্টেনেরস কারখানা, নদিয়া জুটমিলের মত কারখানাগুলিও উৎসবের দিনগুলিতে অন্ধকারে থাকে ।
রাজ্য সরকারের তরফে বহু শিল্প সম্মেলন করা হয়েছে । আশ্বাসও মিলেছে একাধিকবার ৷ কিন্তু নতুন বড় শিল্প বলতে কিছুই আসেনি এখনও । একদিকে কলকারখানাগুলি বন্ধের ফলে একটা প্রজন্ম প্রায় শেষ । আগামী প্রজন্মেরও ভবিষ্যৎ কোন পথে সেই প্রশ্নই এখন বর্তমান বেকার যুবক যুবতিদের মনে। আবার হয়তো খুলতে পারে কারখানা ৷ আশাতেই দিন গুনছেন এলাকার যুবক-যুবতিরাও । বন্ধ কারখানার মধ্যেই যদি কোনও নতুন শিল্প কারখানা করা সম্ভব হয় তাহলে কর্মসংস্থান হতে পারে তাঁদের । কিন্তু কবে হবে ? প্রশ্নের উত্তরটা সবারই অজানা ৷ নতুন শিল্প হবে ? কবে খুলবে বন্ধ কারখানা ? প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খায় সবার মনে ৷