ETV Bharat / state

বনগাঁর অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন ‘বন্ধু পরিবার’-এর অন্নপূর্ণারা

কাদের পাশে দাঁড়ান অন্নপূর্ণারা? তারই একটি ছোট্টো খণ্ডচিত্র বনগাঁ স্টেশনে গেলেই নজর পড়বে । সতেরো দিন ধরে তারা পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই নিরন্নদের, যাঁদের দেখভাল করার মত কেউ নেই । স্টেশনেই বাস, ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান । কেউ আবার লোকের বাড়িতে কাজ করে পেট চালান ।

বনগাঁর অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন বন্ধু পরিবারের অন্নপূর্ণারা
বনগাঁর অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন বন্ধু পরিবারের অন্নপূর্ণারা
author img

By

Published : Jun 6, 2021, 7:38 PM IST

বনগাঁ, 6 জুন : এ যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা ৷ তবে একজন নয় ৷ ওঁরা শতাধিক । বনগাঁয় বন্ধু পরিবার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এমনই কিছু অন্নপূর্ণা, যারা নারীশক্তিকে মেলে ধরেছে শহরে ও গ্রামে । সম্মিলিত শক্তি নিয়ে অন্নপূর্ণারা কখনও কন্যা , কখনও বা বোন বা দিদি রূপে অসহায় ও আর্তদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন । যাঁরা অভুক্ত, তাঁদের মুখে অন্নপূর্ণারা অন্ন তুলে দেন নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে ৷ বিলাসিতাকে জীবন থেকে মুছে ফেলে অসহায় মানুষের মানুষের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য ‘বন্ধু পরিবার’-এর অন্নপূর্ণাদের ৷

কাদের পাশে দাঁড়ান অন্নপূর্ণারা? তারই একটি ছোট্টো খণ্ডচিত্র বনগাঁ স্টেশনে গেলেই নজর পড়বে । সতেরো দিন ধরে তাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই নিরন্নদের, যাঁদের দেখভাল করার মত কেউ নেই । স্টেশনেই বাস, ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান । কেউ আবার লোকের বাড়িতে কাজ করে পেট চালান ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রাজ্যজুড়ে জারি কড়া বিধিনিষেধ, যা কার্যত লকডাউনের সামিল । বন্ধ বাস-ট্রেন, বন্ধ দোকানপাট । স্টেশনেও তেমন কেউ এখন আর আসেন না । ফেলে অনাহারে দিন কাটছে এই সব মানুষদের । তাঁদের মুখে অন্ন তুলে দিতে উদ্যোগী উত্তর 24 পরগণার বনগাঁর একদল মেয়ে ৷ যাঁদের সংগঠনের নাম বন্ধু পরিবার । বন্ধু পরিবার নাম নিয়ে বনগাঁর এক থেকে দেড়শ অভুক্ত মানুষের মুখে দুপুরের খাবার তুলে দিচ্ছেন এই অন্নপূর্ণারা ।

বন্ধু পরিবারের উদ্যোগে খেতে পেয়ে দু'হাত ভরে আশীর্বাদ করছেন এই অসহায় মানুষগুলো

2018 সালে একটি রেস্টুরেন্টে কয়েকজন বন্ধু মিলে খেতে গিয়ে একটি অভুক্ত শিশুর আর্তনাদ শুনে তাদের জন্য কিছু করার ভাবনা জাগে বন্ধুদের । সেখান থেকেই জন্ম হয় বন্ধু পরিবারের । প্রথমদিকে পাঁচ-ছয় জন বন্ধুরা মিলে নিজেদের সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন । তাঁদের কাজে মুগ্ধ হয়ে আরও অনেক মেয়ে ও গৃহবধূ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন । সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজের বহু মানুষ । লকডাউন ও সংক্রমণের ভয়ে বন্ধ সামাজিক অনুষ্ঠান । অনেকে বাড়িতে অনুষ্ঠান না করে অনুষ্ঠানের অর্থ পৌঁছে দিচ্ছেন বন্ধু পরিবারের হাতে । সেই অর্থেই অভুক্তদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে বন্ধু পরিবার ।

সকাল থেকেই বন্ধু পরিবারের সদস্যদের শুরু হয় কর্মব্যস্ততা । কেউ যাচ্ছেন বাজার করতে, কেউ বা রান্নার সরঞ্জাম যোগাড় করতে ব্যস্ত । দুপুরের মধ্যে এক-দেড়শ মানুষের রান্নার কাজ শেষ করতে হবে তাঁদের । কারণ, দুপুর দু'টো বাজলে অসহায় মানুষগুলো দু'মুঠো খাবারের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকবেন। প্রতিদিন দুপুর দু'টোয় খাবার নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যাচ্ছেন বনগাঁ স্টেশন ও সবাইপুর সরদারপাড়ায় । সেখানে সকলকে খাবার পরিবেশে করছেন বন্ধু পরিবারের সদস্যরা । প্রায় প্রতিদিনের মেনুতে থাকছে ডাল, মাছের ঝোল বা মাংস, চাটনি ও শেষপাতে মিষ্টি ।

সপ্তদশ দিনে খাবারের জন্য অর্থ দিয়েছিলেন বনগাঁ পাইকপাড়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ মজুমদার ও মহাদেব মজুমদার । কিছুদিন আগে তাঁদের বাবার মৃত্যু হয়েছে । করোনাকালে বাড়িতে অনুষ্ঠান করেননি তাঁরা । সেই অর্থই তুলে দিয়েছেন বন্ধু পরিবারের হাতে । সেই টাকায় স্টেশনে থাকা ভবঘুরে-ভিখারি ও পথশিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে বন্ধু পরিবার । এদিনের মেনুতে ছিল, ডাল, মাছের ঝোল, চাটনি, পাপড় ও শেষ পাতে মিষ্টি । করোনা আবহে যখন মানুষ গৃহবন্দি, তখন বন্ধু পরিবারের উদ্যোগে খেতে পেয়ে দু'হাত ভরে আশীর্বাদ করছেন এই অসহায় মানুষগুলো ।

বন্ধু পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা থেকেই বন্ধু পরিবারের পথ চলা শুরু হয়েছে । সংসারের কাজের পাশাপাশি সময় করে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরে তাঁরা নিজেরাও মানসিক শান্তি পান । যাঁরা তাঁদের এই মহান কাজে সহযোগিতা করছেন তাঁদের সাধুবাদ জানিয়েছেন বন্ধু পরিবার । যতদিন তাঁদের সামর্থ্যে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে ততদিন এই ভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াবেন তারা ।

বনগাঁ, 6 জুন : এ যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা ৷ তবে একজন নয় ৷ ওঁরা শতাধিক । বনগাঁয় বন্ধু পরিবার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন এমনই কিছু অন্নপূর্ণা, যারা নারীশক্তিকে মেলে ধরেছে শহরে ও গ্রামে । সম্মিলিত শক্তি নিয়ে অন্নপূর্ণারা কখনও কন্যা , কখনও বা বোন বা দিদি রূপে অসহায় ও আর্তদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন । যাঁরা অভুক্ত, তাঁদের মুখে অন্নপূর্ণারা অন্ন তুলে দেন নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে ৷ বিলাসিতাকে জীবন থেকে মুছে ফেলে অসহায় মানুষের মানুষের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য ‘বন্ধু পরিবার’-এর অন্নপূর্ণাদের ৷

কাদের পাশে দাঁড়ান অন্নপূর্ণারা? তারই একটি ছোট্টো খণ্ডচিত্র বনগাঁ স্টেশনে গেলেই নজর পড়বে । সতেরো দিন ধরে তাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই নিরন্নদের, যাঁদের দেখভাল করার মত কেউ নেই । স্টেশনেই বাস, ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান । কেউ আবার লোকের বাড়িতে কাজ করে পেট চালান ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রাজ্যজুড়ে জারি কড়া বিধিনিষেধ, যা কার্যত লকডাউনের সামিল । বন্ধ বাস-ট্রেন, বন্ধ দোকানপাট । স্টেশনেও তেমন কেউ এখন আর আসেন না । ফেলে অনাহারে দিন কাটছে এই সব মানুষদের । তাঁদের মুখে অন্ন তুলে দিতে উদ্যোগী উত্তর 24 পরগণার বনগাঁর একদল মেয়ে ৷ যাঁদের সংগঠনের নাম বন্ধু পরিবার । বন্ধু পরিবার নাম নিয়ে বনগাঁর এক থেকে দেড়শ অভুক্ত মানুষের মুখে দুপুরের খাবার তুলে দিচ্ছেন এই অন্নপূর্ণারা ।

বন্ধু পরিবারের উদ্যোগে খেতে পেয়ে দু'হাত ভরে আশীর্বাদ করছেন এই অসহায় মানুষগুলো

2018 সালে একটি রেস্টুরেন্টে কয়েকজন বন্ধু মিলে খেতে গিয়ে একটি অভুক্ত শিশুর আর্তনাদ শুনে তাদের জন্য কিছু করার ভাবনা জাগে বন্ধুদের । সেখান থেকেই জন্ম হয় বন্ধু পরিবারের । প্রথমদিকে পাঁচ-ছয় জন বন্ধুরা মিলে নিজেদের সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন । তাঁদের কাজে মুগ্ধ হয়ে আরও অনেক মেয়ে ও গৃহবধূ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন । সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজের বহু মানুষ । লকডাউন ও সংক্রমণের ভয়ে বন্ধ সামাজিক অনুষ্ঠান । অনেকে বাড়িতে অনুষ্ঠান না করে অনুষ্ঠানের অর্থ পৌঁছে দিচ্ছেন বন্ধু পরিবারের হাতে । সেই অর্থেই অভুক্তদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে বন্ধু পরিবার ।

সকাল থেকেই বন্ধু পরিবারের সদস্যদের শুরু হয় কর্মব্যস্ততা । কেউ যাচ্ছেন বাজার করতে, কেউ বা রান্নার সরঞ্জাম যোগাড় করতে ব্যস্ত । দুপুরের মধ্যে এক-দেড়শ মানুষের রান্নার কাজ শেষ করতে হবে তাঁদের । কারণ, দুপুর দু'টো বাজলে অসহায় মানুষগুলো দু'মুঠো খাবারের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকবেন। প্রতিদিন দুপুর দু'টোয় খাবার নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যাচ্ছেন বনগাঁ স্টেশন ও সবাইপুর সরদারপাড়ায় । সেখানে সকলকে খাবার পরিবেশে করছেন বন্ধু পরিবারের সদস্যরা । প্রায় প্রতিদিনের মেনুতে থাকছে ডাল, মাছের ঝোল বা মাংস, চাটনি ও শেষপাতে মিষ্টি ।

সপ্তদশ দিনে খাবারের জন্য অর্থ দিয়েছিলেন বনগাঁ পাইকপাড়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ মজুমদার ও মহাদেব মজুমদার । কিছুদিন আগে তাঁদের বাবার মৃত্যু হয়েছে । করোনাকালে বাড়িতে অনুষ্ঠান করেননি তাঁরা । সেই অর্থই তুলে দিয়েছেন বন্ধু পরিবারের হাতে । সেই টাকায় স্টেশনে থাকা ভবঘুরে-ভিখারি ও পথশিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে বন্ধু পরিবার । এদিনের মেনুতে ছিল, ডাল, মাছের ঝোল, চাটনি, পাপড় ও শেষ পাতে মিষ্টি । করোনা আবহে যখন মানুষ গৃহবন্দি, তখন বন্ধু পরিবারের উদ্যোগে খেতে পেয়ে দু'হাত ভরে আশীর্বাদ করছেন এই অসহায় মানুষগুলো ।

বন্ধু পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা থেকেই বন্ধু পরিবারের পথ চলা শুরু হয়েছে । সংসারের কাজের পাশাপাশি সময় করে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরে তাঁরা নিজেরাও মানসিক শান্তি পান । যাঁরা তাঁদের এই মহান কাজে সহযোগিতা করছেন তাঁদের সাধুবাদ জানিয়েছেন বন্ধু পরিবার । যতদিন তাঁদের সামর্থ্যে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে ততদিন এই ভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াবেন তারা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.