বারাসত, 6 মে: সাত মিনিটে কিভাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ করে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব ? প্রায় পাঁচ বছর আগে নিউটাউনে এক নাবালিকা ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ক্যুরিয়ার কর্মীর আইনজীবী এই যুক্তি দিলেও তা ধোপে টিকল না আদালতে । শনিবার পকসো আইনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সোমনাথ পাল নামে ওই অভিযুক্তকে । বারাসত আদালতের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক দোষী সাব্যস্ত করেছেন তাকে । সোমবার এই মামলার সাজা ঘোষণা করা হবে ।
আদালত সূত্রে খবর, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে 2018 সালের 3 মে । ঘটনার বিবরণ অনুয়াযী, ওইদিন সোমনাথ নামে ওই ক্যুরিয়ারকর্মী কিছু চিঠিপত্র ডেলিভারি করতে গিয়েছিল নিউটাউনের একটি বহুতলে । কিন্তু, ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিল না সে । সেই সময় ন'বছরের এক নাবালিকার কাছে ঠিকানা জানতে যায় ওই ব্যক্তি ৷ তার কথায় বিশ্বাস করে ওই নাবালিকা সোমনাথকে সঠিক ঠিকানায় নিয়ে যায় । অভিযোগ,বহুতলের ভিতরে প্রবেশ করতেই ওই নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে লিফটে তুলে 14 তলায় নিয়ে যায় সে । সেখানেই ম্যাজিক দেখানোর নাম করে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয় ৷
কুকর্মের এই বিষয়টি যাতে কেউ জানতে না পারে,তার জন্য নির্যাতিতা নাবালিকাকে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছিল ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে । যদিও সেই হুমকিতে ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে ওই নাবালিকা ঘটনাটি জানায় তার পরিবারের লোকজনকে । এরপরই পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা । অভিযোগ দায়ের হয় নিউটাউন থানায় । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে ওই ক্যুরিয়ার কর্মীকে । পুলিশ সূত্রে খবর,ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণ,হুমকি,তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা সহ পকসো আইনে মামলা রুজু করা হয় । মামলাটি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চলে বারাসত আদালতের বিশেষ পকসো আদালতে ।
শনিবার ছিল সেই মামলারই বিচার প্রক্রিয়া । সেই কারণে ধৃত ক্যুরিয়ার কর্মী সোমনাথ পালকে এদিন পেশ করা হয়েছিল বিশেষ পকসো আদালতে । সেই আদালতেই দোষী সাব্যস্ত হয়ছে সে ৷ তবে,তার আগে একপ্রস্থ আইনি লড়াইয়ে জমে ওঠে পকসো আদালতের বিচারকের এজলাস । অভিযুক্তের আইনজীবী হাতিয়ার করেন বহুতলের রেজিস্টার বুক । তাঁর দাবি, ঘটনার দিন সোমনাথ বিকেল 4টে 10 মিনিটে ওই বহুতলের ভিতরে ঢুকেছিলেন । সেখান থেকে 4টে 17 মিনিটে বেরিয়ে যায় সে । রেজিস্টার বুকে আসা ও যাওয়ার সেই সমস্ত তথ্য উল্লেখ করা রয়েছে নির্দিষ্টভাবে । তাহলে কী ভাবে মাত্র সাত মিনিটে ধর্ষণের মতো অপরাধ করে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব?
আরও পড়ুন: দুই পরিবারের বিবাদে চলল গুলি ! পড়ল 6টি লাশ, জখম 3
পালটা সরকারি আইনজীবী যুক্তি দেন, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তা ইচ্ছাকৃতভাবে লেখা হয়েছে রেজিস্টার বুকে । যাতে কেউ সন্দেহ না করে ওই ক্যুরিয়ার কর্মীকে । এছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি,অন্যান্য বৈদ্যুতিক প্রমাণ এবং ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির রিপোর্ট-ও পেশ করা হয়েছে আদালতে । সমস্ত তথ্যাদি তার বিপক্ষে যাওয়ায় অভিযুক্ত সোমনাথকে দোষী সাব্যস্ত করেন পকসো আদালতের বিচারক । সোমবার কি সাজা ঘোষণা হয় তা দেখেই পরবর্তী আইনি লড়াইয়ের ভাবনা রয়েছে অভিযুক্তের আইনজীবীর ।