খাঁপুকুর (হাসনাবাদ), 30 নভেম্বর: মঙ্গলবার হিঙ্গলগঞ্জে আয়োজিত সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চে মেজাজ হারিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ বুধবার সেই তাঁকেই দেখা গেল অন্য মুডে ৷ গতকাল প্রশাসনিক বৈঠক পর হঠাৎই লঞ্চে চড়ে ইছামতীর বুকে চিড়ে চললেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৷ কোথায়, তখন তা সকলেরই অজানা ।
এদিন বেলা 12টা নাগাদ টাকি থেকে লঞ্চে ওঠেন মমতা ৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা, নিরাপত্তারক্ষী এরং অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল-সহ অন্য আধিকারিকরা ৷ প্রায় এক ঘণ্টা 45 মিনিট লঞ্চ যাত্রা করে তিনি পৌঁছান পারহাসনাবাদের খাঁপুকুরে । গতকালের পরে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিল প্রচুর পরিমাণে শীতবস্ত্র, বাচ্চাদের জন্য জামা কাপড়, চকোলেট, টেডি বেয়ার ৷ লঞ্চেই টাকি থেকে পাড় হাসনাবাদের (Hasnabad) খাঁপুকুরের বৈদ্যপাড়ায় পৌঁছন তিনি ৷
প্রথমেই তিনি যান এলাকার একটি স্কুলে । সেখানে গিয়ে বাচ্চাদের কাছে জানতে চান পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তারা মিড ডে মিল (Mid Day Meal) পান কি না, সরকারের দেওয়া পোশাক ও জুতো তারা পেয়েছেন কি না ! তাদের শিক্ষকেরা ঠিকমতো ক্লাস নেন কি না তাদের দেখাশোনা ঠিকমতো করেন কি না, ইত্যাদি ইত্যাদি... ! এরপর তিনি বাচ্চাদের মধ্যে চকোলেট ও টেডি বেয়ার বিলি করেন ৷
প্রত্যন্ত এই গ্রামীণ এলাকায় কোনওকালেই কোনও মন্ত্রী আসেননি ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয় ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে কাঁসর ঘন্টা শাক বাজিয়ে গ্রামে স্বাগত জানান । মুখ্যমন্ত্রী বাচ্চাদের ওই স্কুলটি থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান খাঁপুকুর কল্যাণ সংঘের মাঠে । সেখানেই তাঁর সঙ্গে আনা শীতবস্ত্র, শাড়ি, বাচ্চাদের জামা-কাপড়, কম্বল একে একে বিতরণ করেন । এদিন সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর আচমকা উপস্থিতি এবং তার হাত থেকে এই উপহার পেয়ে গ্রামের মানুষ অভিভূত ।
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে হাতের নাগালে পেয়ে তাঁরা তাঁদের না পাওয়ার নানা ফিরিস্তি একে একে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে । আপ্লুত গ্রামবাসীদের কেউ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎ যেন দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী ৷ কারও মুখ থেকে আবার শোনা যায়, রুক্ষ এই জঙ্গল-জলাভূমিতে তিনি জীবন্ত বনবিবি । কাজেই তাঁর কাছে আবদারও ছিল অনেক । কেউ আবদার করেছেন পরিশ্রুত পানীয় জলের । কারও আবদার রাস্তার । কেউ আবার চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী আসুন তাঁর বাড়িতে ।
আসলে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দরাজ হস্ত । তাই এলাকাবাসীর চাহিদা মতোই এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন খাঁপুকুর এলাকায় আগামী সাত দিনের মধ্যেই পানীয় জলের ব্যবস্থা করবেন তিনি । আর 2024 সালের মধ্যে হবে স্থায়ী সমাধান অর্থাৎ এই অঞ্চলের মানুষ পাবেন নল বাহিত পানীয় জল । একই সঙ্গে স্থানীয় রাস্তা মেরামতের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানান, তিনি ফেরার পথে ফিরবেন সড়ক মাধ্যমে ৷ ফলে যেখানে রাস্তা খারাপ তা নিজে খতিয়ে দেখবেন । এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই ধরনের আশ্বাস পেয়ে এই গ্রাম্য মানুষগুলির মুখ চোখমুখে ছিল খুশির ছবি । তাঁরা দরাজ কণ্ঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন ।
উল্লেখ, করা যেতে পারে জেলা সফরে দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নতুন কিছু নয় । চায়ের দোকান থেকে মোমোর স্টল অনায়াসে ঘুরে বেড়ান তিনি । কখনও গৃহস্থের বাড়িত ঢুকে তাঁদের হাঁড়ির খবর নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে । আবার কখনও স্কুলে গিয়ে খুদেদের সঙ্গে মিশে ফিরে গিয়েছেন নিজের মেয়েবেলায় । এদিনও একটা অন্যরকম দিন কাটালেন মমতা । যেখানে মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে জননেত্রী হয়ে উঠলেন তিনি ।
আরও পড়ুন: ভাত চেয়ে খেলেন মমতা, আপ্লুত খাঁপুরের নমিতা