ব্যারাকপুর, 26 সেপ্টেম্বর: "আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারমিশন নিতে হবে? আপনি হরিদাস পাল নাকি! হ্যালো হ্যালো করছেন কেন, ন্যাকামো করছেন । এখানে এত বড় ডেপুটেশন হচ্ছে, আর আপনি বিকেল চারটের সময় হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছেন ৷ মদন মিত্র আসছে জেনেও আপনি বেরিয়ে গেলেন কী করে? আপনি মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল, তিন লক্ষ টাকা মাইনে পান আর আপনি রোজ সকালবেলা আধ ঘণ্টার জন্য আসবেন আর চলে যাবেন ! এরপর ঢুকতে পারবেন তো ! ভালো করে শুনুন, যদি মনে করেন ডাক্তারদের খেলায় হাসপাতালে দালাল রাজ প্রতিষ্ঠা হবে, আর সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে,তাহলে সাগর দত্ত অন্য চেহারা নিয়ে নেবে । আপনারা দালালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি কেন? যে সমস্ত লোকের টাকা দালালরা নিয়েছে দরকার হলে তাদের নিয়ে আপনি যেখানে থাকেন যাব । প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব ।" মঙ্গলবার ফোনে ঠিক এভাবেই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম প্রধানকে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গেল কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে ।
সম্প্রতি এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দালাল রাজ নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল মদন মিত্রকে ৷ তিনি সরব হতেই দালালের পরিচিত সম্বলিত পোস্টারও সাঁটা হয়েছিল সাগর দত্ত হাসপাতালের দেওয়ালে । যা ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর । এরপরই মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সটান হাসপাতালে হাজির হন বিধায়ক মদন মিত্র । সেই সময় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হাজির ছিলেন না হাসপাতালে । তাঁকে দেখতে না পেয়ে সকলের সামনেই রীতিমতো ফোনে ধমক দিতে দেখা যায় তৃণমূল বিধায়ককে । চড়া সুরে ফোনে অধ্যক্ষর কাছে তিনি জানতে চান, দালালরাজ বন্ধ করতে কেন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । এরপরই হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে কামারহাটির বিধায়ক বলেন,"হাসপাতাল চত্বরে যে দাদাগিরি গুন্ডাগিরি চলছে, সব ঘুচিয়ে দেব ।"
প্রসঙ্গত,কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে গত শুক্রবার এক বৃদ্ধ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্র । এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল জাভেদ আলি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে । প্রতিবাদে অভিযুক্ত সেই জাভেদের বিরুদ্ধে দালাল চক্র চালানোর অভিযোগ তুলে সাগর দত্ত হাসপাতালের একাধিক জায়গায় পোস্টার পড়েছিল । এই পোস্টার লাগানোর জন্য তৃণমূল কর্মী সামশেদ আলির বাড়িতে রবিবার রাতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে উঠলে ফের চাঞ্চল্য ছড়ায় ।
আরও পড়ুন: 'হাসপাতালে দালাল রাজের পিছনে কেষ্ট-বিষ্টুদের হাত,' সাগর দত্ত-কাণ্ডে বিস্ফোরক মদন
সোমবার এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মদন মিত্র । এরপর মঙ্গলবার তিনি কামারহাটি পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য কাউন্সিলরদের নিয়ে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন । অধ্যক্ষকে না পেয়ে ফোনে ধমক দেওয়ার পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে মদন মিত্র বলেন,"এই লড়াই আমি ছাড়ছি না । এর শেষ দেখে ছাড়ব । দরকার হলে রোজ মিছিল করব, থানা এবং হাসপাতালের সামনে ধরনা দেব ।" এর আগে সাগর দত্ত হাসপাতালে রক্ত বিক্রি-সহ দালালি করেই প্রতিদিন 50 হাজার থেকে 1 লক্ষ টাকা রোজগারের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি ৷
এদিন বিধায়ক অভিযোগ তোলেন অ্যাম্বুলেন্সের সিন্ডিকেট রাজ নিয়ে । মদন মিত্র বলেন," অ্যাম্বুলেন্সেও সিন্ডিকেট হয়ে গিয়েছে । অন্য অ্যাম্বুলেন্স কম টাকা চাইলে তাদের হুমকি দিয়ে রোগী নামিয়ে নেওয়া হয় । ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে রোগী নিয়ে আসার নাম করে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে ।" একইসঙ্গে তার হুঁশিয়ারি, এই জিনিস চলতে থাকলে জনগণ প্রতিবাদের ভাষা আরও জোরদার করবে । অবিলম্বে দালালদের গ্রেফতার করতে হবে । না হলে আরও বড় আন্দোলন হবে ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল চত্বরে দালাল চক্র রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । অভিযুক্ত মুকিম খান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে । বাকিদেরও খোঁজ চালানো হচ্ছে ।