বারাসত, 29 মে: বারাসত কলেজের সামনেই 34 নম্বর জাতীয় সড়ক ৷ কলেজের বিপরীতেই রয়েছে বেসরকারি একটি চোখের হাসপাতাল ৷ সেখানে অনেকেরই বাস ৷ এমন জনবহুল এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোয়ারানটিন সেন্টার তৈরির অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার বিরুদ্ধে ৷ আজ এর প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা জাতীয় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন ৷
11 নম্বর রেলগেট সংলগ্ন 34 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে বারাসত কলেজ যা আগে ইভিনিং কলেজ নামে পরিচিত ছিল । সেই কলেজেই ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের রাখার জন্য কোয়ারানটিন সেন্টার করার পরিকল্পনা নেয় স্থানীয় পৌরসভা । প্রশাসনের নির্দেশে গতকাল পৌরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মিটিংয়ে এবিষয়ে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । সেই খবর পেয়েই আজ সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা । জনবহুল এলাকায় কোয়ারানটিন সেন্টারের বিরোধিতা করতে তাঁরা জাতীয় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন । চলে বিক্ষোভও । কলেজ ক্যাম্পাসের পাশের রাস্তাতেও গাছের গুঁড়ি দিয়ে আটকে দেওয়া হয় । সেখানে পোস্টার লাগিয়ে কোরোনা আক্রান্তদের কলেজে থাকতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ।
বাসিন্দাদের এই আন্দোলনে যোগ দেন 9 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর দীপক দাশগুপ্ত-ও । আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি অ্যাম্বাসাডর সেখান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা । গাড়িটিকে আটকে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসে পুলিশ ।
পুলিশ আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলেও বাসিন্দারা সাফ জানিয়ে দেন, যতক্ষণ না ওই কলেজ থেকে কোয়ারানটিন সেন্টার সরানো হচ্ছে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে । এরপরই বাসিন্দাদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশ । পরে বারাসত থানার IC দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ঘটনাস্থানে এসে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে । প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আন্দোলন চলার পর তা তুলে নিলে ধীরে ধীরে যানচলাচল স্বাভাবিক হয় জাতীয় সড়কে ।
এবিষয়ে 9 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর দীপক দাশগুপ্ত বলেন,‘‘আমফান ঝড়ে এমনিতেই মানুষ বিধ্বস্ত । তার উপর রয়েছে কোরোনা আতঙ্ক । এই পরিস্থিতিতে ঘনবসতিপূর্ণ বারাসত কলেজে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখার জন্য কোয়ারানটিন সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ । এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী । মানুষের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েই প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আমরা কিছুতেই এমন সিদ্ধান্ত মানব না । এরজন্য বড়সড় আন্দোলনে নামতেও প্রস্তুত আমরা ৷’’
এদিকে বারাসত কলেজে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখার জন্য কোয়ারানটিন সেন্টার তৈরি করার কথা মেনে নিয়েছেন বারাসত পৌরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘‘কোয়ারানটিন সেন্টার করা নিয়ে সম্প্রতি বারাসত মহকুমাশাসকের কাছ থেকে একটি চিঠি আসে আমার কাছে । সেই চিঠিতে কোয়ারানটিন সেন্টার করার বিষয়টি দেখতে বলা হয় । আমি বারাসত কলেজ, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ, গভর্নমেন্ট স্কুল সহ আরও কয়েকটি স্কুলের নাম দিয়েছিলাম । পরিযায়ী শ্রমিকদের যদি একটা জায়গায় রাখার ব্যবস্থা না করা হয়,তাহলে তো তাঁরা উপসর্গ নিয়েই রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে! আমাদের মধ্যে কি কোনও সহানুভূতি নেই ।’’
তিনি আরও জানান,‘‘বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আমার কাছে আপত্তি জানায় । ভেবেছিলাম যখন আপত্তি আসছে, তখন অন্য কোনও জায়গায় কোয়ারানটিন সেন্টার করা যায় কি না! কিন্তু সেই সুযোগও দেওয়া হল না । তার আগেই মানুষকে খেপিয়ে কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর রাজনীতি করতে রাস্তায় নেমে পড়লেন । ওনার ব্যবহার অভব্য । CPIM-র সংস্কৃতিই এখন রপ্ত করেছে কংগ্রেসীরা । এছাড়া আর কোনও কাজ নেই ওদের ।’’