বারাসত, 13 অক্টোবর: কামদুনিকাণ্ডে এবার প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বিতর্ক বাড়ালেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারকে স্মরণ করালেন মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থেকে সহযোগিতার কথাও । সম্প্রতি কামদুনিকাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারকে 'লোভী' বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম । দলের বিধায়কের এই মন্তব্য বনমন্ত্রী সমর্থন না করলেও শুক্রবার জ্যোতিপ্রিয় কিন্তু বারবার কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সহানুভূতি ও সহযোগিতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ৷ ফলে প্রত্যক্ষভাবে কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারকে 'লোভী' না বললেও পরোক্ষভাবে বনমন্ত্রী সেকথা বোঝাতে চেয়েছেন কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে ।
শুক্রবার বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে আসেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও জেলাপরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ, মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাজাহান সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন । বৈঠক শেষে কামদুনি মামলার রায় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বনমন্ত্রী বলেন, "নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেও যদি বহাল থাকত তার চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতো না । এই রায়ে আমরাও হতাশ । সেই কারণেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দাখিল করেছে । মামলায় যাতে সুবিচার পাওয়া যায় তার জন্য দেশের নামী আইনজীবীকে এই কেসে দাঁড় করানো হচ্ছে । এটুকু বলতে পারি মুখ্যমন্ত্রী কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারের পাশে রয়েছে । আইনি সাহায্য দিয়ে সহযোগিতা করছে রাজ্য সরকার ৷"
কামদুনি মামলায় নিম্ন আদালতে ফাঁসির রায় মুকুব হওয়া নিয়ে সিআইডি এবং রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । কামদুনিতে দাঁড়িয়ে এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও নিশানা করেছিলেন তিনি । সেই প্রসঙ্গে এদিন রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে পালটা জবাব দিয়েছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । তাঁর কথায়,"ওর কাছে কোনও তথ্য নেই । তথ্য ছাড়া চটকদারি কথাবার্তা বলা যায় সহজেই । এতে হাততালি পাওয়া যেতে পারে । কিন্তু অন্য কিছু মেলে না । মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই নির্যাতিতার পরিবারের পাশে ছিলেন । আজও আছেন । ভবিষ্যতেও থাকবেন । ওদের যখনই কোনও সমস্যা রয়েছে তখনই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ডেকে সমস্ত কথা শুনেছেন। পদক্ষেপ নিয়েছেন । কামদুনিকাণ্ডে গোটা প্রক্রিয়ায় যিনি ছিলেন তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এছাড়া একজনও ওদের পাশে দাঁড়াননি। সেটা নির্যাতিতার পরিবারও ভালোভাবে জানে । বুকে হাত রেখে মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতার কথা ওরা অস্বীকার করতে পারবে না ৷"
আরও পড়ুন: 'এই সরকার ধর্ষকদের রক্ষক', কামদুনিকাণ্ডে সুর চড়ালেন শুভেন্দু
এদিকে,কামদুনি মামলার রায়ে অসন্তুষ্ট নির্যাতিতার পরিবার এবং প্রতিবাদীরা তাঁদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করতে দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন ৷ নির্ভয়ার মায়ের সঙ্গে দেখা করে শহরে ফিরে এসেছেন তাঁরা । অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করেননি তাঁরা । এনিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "কেন ওরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি সেটা ওরাই জানেন । এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন প্রতিবাদীরা । ওরা ভাবছে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল ওদের দেখবে ! কেউ ওই পরিবারকে দেখেনি । দেখেছেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । হাইকোর্টের যেকোনও রায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা যেতে পারে । কিন্তু গালমন্দ কোনও কথা বলা যায় না । একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সরকারকে যেতে হয় । সেটাই সরকার করেছে দেশের শীর্ষ আদালতে গিয়ে ৷ "
এরপরই নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে জ্যোতিপ্রিয় বলেন,"শীর্ষ আদালতে যদি নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে তখন কি বলবেন বিরোধী দলনেতা ? সেই সময় মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যেতে হবে ! এরজন্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে অপেক্ষা করে থাকতে হবে আমাদের ৷ "
আরও পড়ুন: কামদুনি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে শহরে মিছিল, বুধে 'সুপ্রিম দ্বারে' মৃতার পরিবার
অন্যদিকে, এদিনের জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার ভেড়ি নিয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । সেই বিষয়ে বনমন্ত্রী বলেন,"ইতিমধ্যে গোটা জেলা থেকে ৩৫৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে । ভেড়ি এবং পুকুর বুজিয়ে কোনও প্রমোটিং করা যাবে না। অনৈতিক কাজকর্ম বরদাস্ত করা হবে না । আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে ৷"